জাতীয়

গরমে কারাবন্দিরা গোসল করছেন ৫-৬ বার, হাঁটছেন গাছতলায়

গরমে বিপর্যস্ত রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের জনজীবন। আবহাওয়া যেন রূপ নিয়েছে মরুভূমির মতো। রাস্তাঘাটে যেন বইছে লু হাওয়া। গত ৫৮ বছরের মধ্যে ঢাকায় ছুঁয়েছে রেকর্ড তাপমাত্রা। প্রায় ৪২ ডিগ্রি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বেশ কয়েকটি জেলার ওপর দিয়ে। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে।

Advertisement

এছাড়া বাড়ছে হিটস্ট্রোক ও ডায়রিয়া। গরমে কারাগারগুলোও বন্দিদের জন্য নিয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। এমনকি পাঁচ-ছয়বার গোসল করার সুযোগও দেওয়া হচ্ছে বন্দিদের।

তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে কারাবন্দিদের সুস্থ রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা জাগো নিউজকে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।

কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এরই মধ্যে কারাবন্দিদের তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দিনে অতিরিক্ত তাপপ্রবাহের কারণে কারাগার থেকে বের করে গাছের নিচে নিরাপত্তার সঙ্গে হাঁটাচলা করতে দেওয়া হচ্ছে বন্দিদের। সবগুলো কারাগারে ফ্যানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেরামত ও পরিবর্তন করা হয়েছে নষ্ট ফ্যানগুলো।

Advertisement

আরও পড়ুন>> প্রচণ্ড দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত

এছাড়া দিনে যেখানে আগে এক থেকে দুবার গোসল করতেন কারাবন্দিরা, সেখানে এখন দিনে অন্তত পাঁচ থেকে ছয়বার গোসল করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থাসহ জেনারেটরের ব্যবস্থাও করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তীব্র গরমে বেশ কয়েকজন কারাবন্দি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন গত কয়েকদিনে। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। গরমজনিত কারণে অসুস্থ বন্দিদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে মুখে খাওয়ার স্যালাইনের।

দেশের ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার ও ৫৫টি জেলা কারাগারে বন্দির সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজারের মতো। এর মধ্যে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি বন্দি রয়েছে কয়েকটি কারাগারে।

Advertisement

জানা যায়, প্রতিদিন যত সংখ্যক আসামি আদালতের মাধ্যমে কারাগারে আসেন, সমানসংখ্যক আসামির মুক্তি মেলে না জামিনে। সম্প্রতি বিভিন্ন মামলায় আসামির সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু সে অনুযায়ী জামিন হচ্ছে না। ফলে কারাগারগুলোতে বন্দির সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছেই।

আরও পড়ুন>> ১৯৬৫ সালের পর ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা

ঢাকা কারা অধিদপ্তরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মো. মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিটি কারাগারে সবগুলো ফ্যান সচল করা হয়েছে। তীব্র গরমে কোনো বন্দি যেন অসুস্থ না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মোহাম্মদ লুৎফর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের কারাগারে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস রয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক বন্দির জন্য আলাদা বৈদ্যুতিক পাখা রয়েছে। স্বাভাবিক রয়েছে পানিসহ খাবার-দাবার।

আরও পড়ুন>> সুখবর দিলো আবহাওয়া অধিদপ্তর, ৩ বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার তানিয়া জামান জাগো নিউজকে বলেন, কোনো বন্দি যদি দিনে তিন থেকে চারবার গোসল করতে চান সে ব্যবস্থাও রয়েছে। এটি অনেক বড় কারাগার, তাই পর্যাপ্ত পানিসহ অন্য ব্যবস্থাও উন্নত।

কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার ফারহানা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, নারী বন্দিদের জন্য আলাদা পানির হাউজ রয়েছে। এ কারণে দিনে ইচ্ছা করলে নারী বন্দিরা একাধিকবার গোসল করতে পারেন।

জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারের জেল সুপার মোহাম্মদ সাদাত হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, সবাই জানেন চুয়াডাঙ্গায় কয়েকদিন ধরে ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রির বেশি পর্যন্ত তাপমাত্রা বিরাজ করছে। এই তীব্র দাবদাহ থেকে রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার মধ্যে কারাবন্দিদের খোলা জায়গায়, গাছের নিচে হাঁটাহাঁটির সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা মানসিকভাবে সুস্থ থাকে। অনেকেই পাঁচ-ছয় বার পর্যন্ত গোসলও করছেন।

আরও পড়ুন>> রেকর্ড তাপমাত্রার মধ্যে ঢাকায় পানির সংকট

তিনি বলেন, সর্বোচ্চ সতর্কতার মধ্য দিয়ে কারাবন্দিদের হাঁটাহাঁটি করতে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কারাগারে ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে। সেখান থেকেও কারাবন্দিদের গতিবিধি নজরদারি করা হয়। এছাড়া তীব্র গরমের কারণে কোনো বন্দি অসুস্থ হলে তাকে দ্রুত চিকিৎসাসেবারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের (কেরানীগঞ্জ) প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান শুভ বলেন, আগে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৪৫০ জনের মতো রোগী পেতাম। তবে তাপপ্রবাহের কারণে এখন আমরা প্রতিদিন ৫৫০ থেকে ৬০০ রোগী দেখছি। এই রোগীদের প্রধান সমস্যা তাপপ্রবাহকেন্দ্রিক। তবে উদ্বেগের কিছু নেই। পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে।

এদিকে ঢাকায় শনিবার (১৫ এপ্রিল) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গত ৫৮ বছরের মধ‌্যে সর্বোচ্চ। রোববার (১৬ এপ্রিল) ঢাকার তাপমাত্রা আরও বেড়েছে। টানা কয়েকদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছিল চুয়াডাঙ্গায়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ‌্যানুযায়ী, ১৯৬০ সালে ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছিল। এরপর ১৯৬৫ সালে ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।

তীব্র গরমের কারণে রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন মাঠ-ঘাটে কাজ করা শ্রমজীবী মানুষ। গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোগ-ব্যাধিও।

গত ৪ এপ্রিল দেশে মৃদু তাপপ্রবাহ শুরু হয়। এরপর গত ১৩ দিন ধরে তা অব‌্যাহত আছে। এরই মধ‌্যে তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলে তাপপ্রবাহ তীব্র হয়েছে অর্থাৎ, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার হয়েছে।

সারাদেশে যেন মরুভূমির গরম। কোথাও কোথাও সকালে কুয়াশা পড়ছে। বাইরে বের হওয়া চ‌্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গরমের সঙ্গে লোডশেডিং নগরবাসীর জন‌্য যেন নিয়ে এসেছে নরক যন্ত্রণা।

টিটি/এএসএ/এমএস