চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় দুই কোটি ডলার সমমূল্যের (২১২ কোটি টাকা) রপ্তানি পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ঘটনার ১১ মাস পরও ৯ হাজার ৯০৬ কার্টন পণ্য থেকে এখনো ধোঁয়ার গন্ধ বিদ্যমান। অক্ষত কিন্তু ব্যবহার উপযোগী এসব পণ্যের মূল্য ৬ লাখ ৭০ হাজার ৩৮৫ ডলার। ধোঁয়ায় আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৮৭৯ কার্টন পণ্য যার মূল্য ৯৭ হাজার ৪৬৩ ডলার।
Advertisement
বিএম ডিপোতে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের ফলে রপ্তানি পণ্যের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ বিষয়ক প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ২০২২ সালের ৪ জুন রাতে সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
প্রতিবেদনে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ও অক্ষত-এ তিন ভাগে রপ্তানি পণ্যের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। এ তদন্ত প্রতিবেদনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত রপ্তানিকারকরা ইনস্যুরেন্সসহ বিভিন্ন খাতে আর্থিক সহায়তা পেতে পারেন বলে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
তদন্ত প্রতিবেদন তৈরিতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার মুশফিকুর রহমানকে আহ্বায়ক ও উপ-কমিশনার মো. শরফুদ্দিন মিঞাকে সদস্য সচিব করে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। অন্যরা হলেন বিজিএমইএর সহসভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী, বিএম কন্টেইনার ডিপোর উপ-ব্যবস্থাপক মো. নুরুল আক্তার, বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকড়া) মহাসচিব মো. রুহুল আমিন শিকদার, ঢাকা কাস্টম বন্ড কমিশনারেটের উপ-কমিশনার কাজী রায়হানুজ্জামান ও চট্টগ্রাম কাস্টম বন্ড কমিশনারেটের উপকমিশনার মো. কাউছার আলম পাটোয়ারী।
Advertisement
প্রতিবেদনে বলা হয়, আগুনে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত, সম্পূর্ণ অক্ষত ও গেট আউট রপ্তানিতব্য পণ্যের পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ৭ লাখ ১৪ হাজার ৩৪ ডলার। এসব পণ্যের বিপরীতে প্রস্তুত হয়েছে ২৬৮৯টি শিপিং বিল।
এতে সিএফএস-১ এ (সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত) পণ্য ছিল ১ লাখ ২৬ হাজার ৬২৪ কার্টন পণ্য, স্টাফড কন্টেইনার (সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত) ১ লাখ ৫ হাজার ৭৬৮ কার্টন পণ্য, স্টাফড কন্টেইনার (আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত) ১০ হাজার ৭৮৫ কার্টন পণ্য , সিএফএস-২ (সম্পূর্ণ অক্ষত) ৬৩ হাজার ৯২৭ কার্টন পণ্য, স্টাফড কন্টেইনার (সম্পূর্ণ অক্ষত) ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৬২৬ কার্টন পণ্য ও অক্ষত পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যানে ছিল ১০ হাজার ৪৭ কার্টন পণ্য।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সিএফএস-১ শেডে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের ইনভয়েস মূল্য ১ কোটি সাত লাখ ৭৮ হাজার ১০৩ ডলার। স্টাফড কন্টেইনারে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের ইয়েস মূল্য ৭৮ লাখ ১৫ হাজার ৫১৭ ডলার। স্টাফড কন্টেইনারে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের ইনভয়েস মূল্য ৭ লাখ ৭০ হাজার ৮৪৮ ডলার। সিএফএস-২ শেডে মজুদকৃত ৬২ লাখ ৩২ হাজার ১৭১ ডলারের পণ্য সম্পূর্ণ অক্ষত। স্টাফড কন্টেইনারে ২ কোটি ২৪ লাখ ৯৬ হাজার ৭৪২ ডলারের পণ্য সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় দেখানো হয়েছে। এছাড়া পণ্যবাহী কাভার্ডভ্যানের ২৬ লাখ ২০ হাজার ৬৫০ ডলারের পণ্য অক্ষত দেখানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে ১ কোটি ৮৫ লাখ ৯৩ হাজার ৬২১ ডলারের পণ্য সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত দেখানো হয়েছে। এতে ১ হাজার ২৩২টি শিপিং বিলের বিপরীতে ২ লাখ ৩২ হাজার ৩৯২ কার্টুন পণ্য অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর মধ্যে ডিপোর সিএফএস-১ শেডে ১ কোটি সাত লাখ ৭৮ হাজার ১০০ ডলার মূল্যের পণ্য নিরূপণ করা হয়েছে। এতে ৮১৯টি শিপিং বিলের বিপরীতে ১ লাখ ২৬ হাজার ৬২৫ কার্টুন পণ্য অন্তর্ভুক্ত ছিল।
Advertisement
এছাড়া স্টাফড কন্টেইনারে ৭৮ লাখ ১৫ হাজার ৫১৭ ডলার মূল্যের পণ্য নিরূপণ করা হয়েছে। এতে ৪৯৩টি শিপিং বিলের বিপরীতে ১ লাখ পাঁচ হাজার ৭৬৮ কার্টন পণ্য অন্তর্ভুক্ত ছিল। এছাড়া তদন্তে ৭ লাখ ৭০ হাজার ৮৪৮ ডলার সমমূল্যের পণ্য আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে।
সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের পাশাপাশি অক্ষত পণ্যের তথ্য উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। সম্পূর্ণ শার্ট আউট দেখানো হয়েছে ৬৪ লাখ সাত হাজার ৪৬৯ ডলারের পণ্য। আংশিক শাট আউট দেখানো হয়েছে ১৫ লাখ ৫০ হাজার ৪১৪ ডলারের পণ্য। এছাড়া বিএম ডিপোর মাধ্যমে রপ্তানিকৃত পণ্য দেখানো হয়েছে ১ কোটি ১৪ লাখ ৯৪ হাজার ৩৩৭ ডলারের। রপ্তানির অপেক্ষায় বিএম ডিপোতে মজুদকৃত পণ্য দেখানো হয়েছে ৯২ লাখ ৭৩ হাজার ৭০০ ডলারের পণ্য।
কমিটি সূত্রে জানা গেছে, অগ্নিকাণ্ডের ফলে ডিপোতে রক্ষিত কন্টেইনারজাত পণ্যের কিছু সম্পূর্ণ এবং কিছু আংশিক পুড়ে গেছে। অন্যদিকে ডিপোর সিএফএস-১ শেডে রক্ষিত সব পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সিএফএস-২ শেডে রক্ষিত পণ্য অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়।
এসএম/এমআইএইচএস/এমএস