মহিমান্বিত মাস রমজান। এ মাসকে ঘিরে বিশ্বব্যাপী রয়েছে নানা অনুষ্ঠান আর রীতি-রেওয়াজ। সারাদিন রোজা রেখে সন্ধ্যায় বাহারি ইফতার, ইফতারের পর তারাবিহের নামাজ পড়া ইত্যাদি ছাড়াও আনন্দ-উৎসব করার মাধ্যমেও সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয় রমজানের খুশির আমেজ। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের চেয়েও এসব রীতি সাংস্কৃতিক উদযাপন হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। পৃথিবীর বৃহত্তম দেশ রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম ইসলাম। রাশিয়া ফেডারেশনে প্রায় ২৩ কোটি মুসলিম বসবাস করেন। যা রাশিয়ার মোট জনসংখ্যার ১৫ ভাগ। পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের মুসলিমদের মতো রাশিয়ান মুসলিমরাও রমজানের জন্য অপেক্ষা করেন। রমজান তাদের জন্য ধর্মীয় অনুপ্রেরণার উৎস।
Advertisement
ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি
মূলত রুশ মুসলিমরা রমজানকে তাদের ধর্মীয় চেতনার উজ্জীবনী শক্তি হিসেবেই গ্রহণ করে। তাদের মধ্যে যারা তুলনামূলক অধিক ধার্মিক, তারা অন্যদের ধর্মীয় জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করে। রমজানকে কেন্দ্র করে তারা হারানো মুসলিম ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে।
৯ হাজার মসজিদে তারাবিহ
Advertisement
প্রায় ২২ ঘণ্টা রোজা রাখার পরও মুসল্লিদের উপস্থিতিতে মুখরিত হয় মসজিদ। বলা যায়, রমজানে মুসল্লিদের পদচারণায় রাশিয়ার মসজিদগুলো জেগে ওঠে। প্রাণ ফিরে পায়। পবিত্র রমজান মাসে রাশিয়ার প্রায় ৯ হাজার মসজিদে খতম তারাবিহ অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেক মসজিদে তারাবিহের আগে ও পরে ইসলামের বিধিবিধান নিয়ে আলোচনা হয়। রুশ মুসলিমরা এসব আলোচনায় ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করে থাকেন।
রাজধানী মস্কোর ৫টি মসজিদে তারাবিহের জামাত হয়। দায়িত্বশীল ইমাম দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় ইসলামি বিষয় সম্পর্কে বিশদ আলোচনা পেশ করেন। রাজধানীর এ পাঁচ মসজিদে শুধু রমজান নয়; সারা বছর প্রকাশ্যে আজান হয়। মস্কোর মুসলিমরা এ মসজিদগুলোকে তাদের ধর্মীয় ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করেন। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের সহযোগিতাও তারা পেয়ে থাকেন।
ইফতারে ধর্মীয় আলোচনা
রমজানে রুশ মুসলিমদের ইফতার আয়োজনে খাদ্য-সংস্কৃতির বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হয়। রাশিয়ার শহরাঞ্চলের মুসলিমরা মাগরিবের আজানের আগেই দস্তরখানের পাশে একত্রিত হয়। পরিবারের সব সদস্য মিলে দোয়া করে। ইফতার শেষে পরিবারের সবাই জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করে। নামাজের পর পরিবারের সব সদস্য মসজিদে যায়। তারাবিহের নামাজ পর্যন্ত দ্বীনি আলোচনা শোনে।
Advertisement
আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার ইফতার
রাশিয়ার সাধারণ মুসলমানের সুবিধার্থে আন্তর্জাতিক ইসলামি সাহায্য সংস্থাগুলো অনেক মসজিদে ইফতারের আয়োজন করে। যেসব এলাকায় মসজিদ, সেখানকার মুসলমানরা ইফতারের জন্য তাঁবু স্থাপন করে সম্মিলিতভাবে ইফতারে অংশ নেয়।
রাশিয়ায় ইসলাম
রাশিয়ায় ইসলাম আগমন করেছে ব্যবসা ও মুসলমানের সঙ্গে রুশদের মেলামেশার পথ ধরে। সামরিক বিজয়ের পথে সেখানে ইসলাম আসেনি। বর্তমান রাশিয়ার সীমান্তবর্তী বহু এলাকা মুসলিম বাহিনী বিজয় অভিযান পরিচালনা করলেও তার প্রভাব রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডে পড়েনি। কেননা, আবহমানকাল থেকেই মধ্য এশিয়ার জাতিগুলো স্বাধীনভাবে বসবাস করে এসেছে। তবে রুশ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত অল্পসংখ্যক মুসলিম অঞ্চল—চেচনিয়া ও দক্ষিণ ওশেটিয়া এবং সাবেক সোভিয়েত রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত মুসলিম দেশগুলো যেমন কাজাখস্তান, তাজেকিস্তান রুশ সমাজে ইসলাম প্রচারে অল্প-বিস্তর ভূমিকা পালন করেছে।
মিশ্র সংস্কৃতিতে বেড়ে ওঠা
রুশ মুসলিমরা নিজ দেশে ইসলামি সমাজ ও পরিবেশ খুঁজে পায় না। তারা বেড়ে ওঠে মিশ্র সংস্কৃতিতে। তাই তাদের অভ্যাস ও জীবনাচারে অমুসলিম সমাজগুলোর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ খ্রিষ্টান ধর্মের প্রভাবই সবচেয়ে বেশি। তারপরও মুসলমানরা স্বকীয় মূল্যবোধ ও বিশ্বাস আগলে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাদের এ প্রচেষ্টা নতুন মাত্রা লাভ করে পবিত্র রমজান মাসে। রমজানে তারা পরস্পরকে ধর্মীয় অনুপ্রেরণা, ইসলামি সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চা, ধর্মীয় বিষয়ে পাঠদানের অবকাশ লাভ করে।
রমজানের আবহে অমুসলিমরা
রমজানের আগমনে রুশ মুসলিমদের ভেতর ঈমানি আবহের সৃষ্টি হয়। অন্যান্য ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রভাবে এখন যারা নামেমাত্র মুসলিম, তাদের মধ্যেও ঈমানি চেতনা ও ইসলামি মূল্যবোধ পুনর্জীবিত করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। রমজানের এ ধর্মীয় আবহ অমুসলিম রুশদের ইসলামের প্রতিও অনুপ্রাণিত করে।
এমএমএস/জেআইএম