একদিকে প্রচণ্ড গরমে চাহিদা বেড়েছে রসালো ফল তরমুজের। অন্যদিকে সরবরাহ কমে এসেছে। এতেই ঢাকা শহরে মৌসুমি এই ফলটির দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে তরমুজের দাম। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে তরমুজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। অনেক ক্রেতাই দাম শুনে তরমুজ না কিনে ফিরে যাচ্ছেন।
Advertisement
সোমবার (১৭ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে রামপুরা বাজারে তরমুজ কিনতে আসেন মো. মিজানুর রহমান। এক ব্যবসায়ী তার কাছে তরমুজের কেজি চান ৮০ টাকা। আরেক ব্যবসায়ী আড়াই থেকে তিন কেজি ওজনের এক পিস তরমুজের দাম চান ২২০ টাকা।
আরও পড়ুন: প্রচণ্ড দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত
তরমুজের এই দাম শুনে কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করেন মিজানুর রহমান। ব্যবসায়ীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘কদিন আগেই তো এর থেকে অনেক বড় তরমুজের কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি করেছেন, এখন ৮০ টাকা চাচ্ছেন কেন?’
Advertisement
উত্তরে ব্যবসায়ীর সহজ-সরল উক্তি; ‘ভাই আমাদের কিছু করার নেই। হুট করেই তরমুজের দাম অনেক বেড়ে গেছে। আগে কম দামে আনতে পেরেছিলাম এবং কম দামে বিক্রি করেছি। এখন বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। আমরা তো আর লোকসানে বিক্রি করবো না। আপনার ইচ্ছা হলে নেন, না নিলে কিছু করার নেই। ৮০ টাকার নিচে কেজি বিক্রি করা সম্ভব নয়।’
শুধু রামপুরায় নয়, রাজধানীর প্রতিটি অঞ্চলে তরমুজের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। ফলে এই রসালো ফলটি কিনতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। অনেকে শখ করে তরমুজ কিনতে গেলেও, দাম শুনে হতাশ হয়ে খালি হাতে ফিরে আসছেন।
আরও পড়ুন: গরমে যখন তখন হতে পারে হিট স্ট্রোক, জানুন লক্ষণ
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিছুদিন আগেই ৮-১০ কেজি ওজনের তরমুজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৩০-৪০ টাকা। এখন বড় তরমুজের সরবরাহ কম। বাজারের বেশিরভাগ ছোট তরমুজ। ছোট তরমুজ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০-৮০ টাকা। কোনো কোনো ব্যবসায়ী কেজির বদলে পিস হিসেবে বিক্রি করছেন। তারা দাম রাখছেন ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। কিছুদিন আগে এই তরমুজের পিস ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
Advertisement
আরও পড়ুন: ভ্যাপসা গরমে দিনে ফাঁকা, রাতে বাড়ছে বেচাকেনা
ব্যবসায়ীরা আরও জানিয়েছেন, বাজারে এখন খুলনার তরমুজ বেশি। এই তরমুজ আকারে ছোট, তবে মিষ্টি বেশি। আর বরিশালের তরমুজ আকারে বড়, তবে এখন এই তরমুজের সরবরাহ কম এবং চাহিদাও কম। বরিশালের তরমুজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। সেইসঙ্গে প্রচণ্ড গরমে তরমুজের চাহিদা বেড়েছে। এ কারণেই হুট করে তরমুজের দাম বেড়েছে।
সিপাহিবাগে দু-তিন কেজি ওজনের তরমুজ প্রতি পিস ২০০ টাকায় বিক্রি করা ফিরোজ বলেন, আমার কাছে যে তরমুজ রয়েছে, এগুলো খুলনার। এই তরমুজ টাটকা এবং অনেক মিষ্টি ও রসালো। এক সপ্তাহ আগে আমরাই এই তরমুজের পিস ৮০-১০০ টাকা বিক্রি করেছি। এখন আড়তে তরমুজের অনেক দাম, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তরমুজের যে দাম বেড়েছে, তা এবার আর কমার সম্ভাবনা কম। কারণ এখন প্রায় প্রতিদিনই তরমুজের দাম বাড়ছে।
আরও পড়ুন: তীব্র গরমে এসি বেচাকেনা তুঙ্গে
বনশ্রীতে ৮০ টাকা কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করা মো. হামিদ বলেন, কদিন আগে আমরাই বড় তরমুজের কেজি ৩৫ টাকায় বিক্রি করেছি। এখন বড় তরমুজ খুব একটা পাওয়া যাচ্ছে না এবং চাহিদাও কম। দাম বাড়ায় সবাই ছোট তরমুজ কিনছে। তবে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এখন বিক্রি কমে গেছে। আগে দিনে যেখানে ৩০০-৩৫০ তরমুজ বিক্রি হয়েছে, এখন সেখানে ১৫০টা তরমুজ বিক্রি করাই কঠিন।
বনশ্রীতে তরমুজ কিনতে আসা মিনহাজ নামের একজন বলেন, গত সপ্তাহেও ১০ কেজি ওজনের বড় তরমুজের কেজি কিনেছি ৩৫ টাকায়। আজ চার কেজি ওজনের একটি তরমুজ কিনলাম ৮০ টাকায়। ভ্যানে ৬০ টাকা কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। তবে ওই তরমুজ দেখে খুব একটা পছন্দ হয়নি। এই গরমে তরমুজ ফ্রিজে রেখে ইফতারিতে খেলে কিছুটা শান্তি পাই। তাই দাম বেশি হলেও কিনলাম।
আরও পড়ুন: তরমুজ-ডাবের বাজার চড়া, দাম শুনে ফিরে যাচ্ছেন অনেকে
সেগুনবাগিচায় তরমুজ বিক্রি করা মো. কামাল বলেন, কয়েকদিন ধরে আড়তে প্রতিদিনই তরমুজের দাম বাড়ছে। এর কারণ বাজারে তরমুজের সরবরাহ কমে গেছে। আবার গরমের কারণে তরমুজের চাহিদা বেড়েছে। মৌসুমের শুরু থেকে এখন তরমুজের দাম বেশি। এমন গরম থাকলে তরমুজের দাম আরও বাড়তে পারে।
তিনি বলেন, প্রথমদিকে তরমুজের কেজি ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি করেছি। এরপর দাম কমে ৩৫ টাকা হয়। তবে গত কয়েকদিনে কয়েক দফায় তরমুজের দাম বেড়েছে। প্রথম ৫০, এরপর ৬০, ৭০, এভাবে এখন ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কদিন পর তরমুজের কেজি ১০০ টাকা হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।
এমএএস/এসএইচএস/জেআইএম