মো. ওমর ফারুক। ২০১৬ সালের আগে নিউমার্কেটে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। ধীরে ধীরে টাকা জমিয়ে ও স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে ২০১৬ সালের শেষের দিকে একটি দোকানের মালিক হন। পরবর্তীতে আরও একটি দোকান কেনেন ফারুক। দুই দোকানে বেচাকেনা ভালোই চলছিল। তার কর্মচারী ছিল মোট নয়জন। কিন্তু শনিবার ভোররাতে লাগা আগুনে তার দুই দোকানের মালামাল ও নগদ পাঁচ লাখ টাকা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ওমর ফারুক সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব। তিনি কীভাবে আবার ঘুরে দাঁড়াবেন তাও বুঝতে পারছেন না।
Advertisement
ওমর ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, ৩০ লাখ টাকা ব্যাংক ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ঋণ করে দুটি দোকানে মালামাল তুলেছিলাম। ভেবেছিলাম ঈদের বেচাকেনার পর ঋণ পরিশোধ করবো। কিন্তু সেসব স্বপ্ন কয়লায় পরিণত হলো। এখন কর্মচারীর বেতন দেবো কীভাবে, আর আমার সংসারই বা কীভাবে চলবে। ঈদের আগে দোকান খুলতে না পারলে বেঁচে থাকাই কষ্টকর হবে।
আরও পড়ুন: ‘আমি তো ভিখারি হয়ে গেলাম, সব মালামাল পুড়ে ছাই’
শনিবার (১৫ এপ্রিল) রাজধানীর নিউমার্কেটের পাশে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগে। সেই আগুন নিভেছে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের ক্ষতির আগুন নেভেনি। সোমবার (১৭ এপ্রিল) সকালে মার্কেটে গেলে দেখা যায়, মার্কেটটি থেকে পুড়ে যাওয়া মালামাল সরানোর কাজ চলছে। প্রায় প্রতিটি দোকান থেকে স্তূপ স্তূপ পুড়ে যাওয়া মালামাল বের হচ্ছে। এসব মালামালের কাছে গিয়ে নীরবে চোখের পানি ছেড়ে কাঁদতেও দেখা গেছে ব্যবসায়ীদের। আবার অনেক ব্যবসায়ী তাদের দোকানে এসে হাউমাউ করে কান্না করছেন। চোখের জলে ভিজেছে একেক জনের স্বপ্ন।
Advertisement
নিউ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলার ব্যবসায়ী ইলিয়াস খান চোখের পানি ছেড়ে জাগো নিউজকে বলেন, ঈদের আগে ১৪ লাখ টাকার মালামাল তুলেছিলাম। অল্প কিছু বিক্রি হয়েছে। ঈদের এই কয়দিনই মূলত ব্যবসা হয়। কিন্তু আগুনে পুড়ে গেছে সব। আমাদের সামনের মার্কেটগুলোতে ক্রেতারা আসছে, আর আমরা শুধু তাকিয়ে রয়েছি, আমাদের পোড়া মার্কেটের দিকে। দোকানে তিনজন কর্মচারী ছিল। লজ্জায় ওদের ফোনও করতে পারছি না। মায়ের কাছে কী জবাব দেবো ভাই।
আরও পড়ুন: জমি বিক্রির টাকায় নেওয়া দোকান পুড়ে ছাই
শামীম আহসান নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আগুনের ঘটনার পর বাসায় যেতেও ভয় হয়। বাসায় গেলেই স্ত্রী-সন্তান আর বৃদ্ধ মা-বাবার দিকে তাকানো যায় না। তাদের দিকে তাকালে নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না। নিজের শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে তিলে তিলে গত ছয় বছর ধরে যে দোকান গড়ে তুলেছিলাম সেই দোকান এভাবে পুড়বে? এভাবে সব ছাই হবে?
তিনি বলেন, আমাদের অপরাধ কী? আমরা ব্যবসায়ী বলেই কি আমাদের অপরাধ? নিজের পরিশ্রমের বিনিময়ে যে দোকানটি গড়েছিলাম সেটি আজ ছাইয়ে পরিণত হয়েছে। আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম। আল্লাহ নিশ্চয় সব দেখছেন।
Advertisement
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে ফায়ার সার্ভিস। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে আগুনের কারণ ও ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপণ করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ফের মানুষের বাসায় কাজ করতে হবে আলেয়ার
এর আগে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার দিনই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, ঈদের আগে কেন মার্কেটে মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যেন বিষয়টি খতিয়ে দেখে।
নিউ সুপার মার্কেটে ঘটনাস্থলে ব্রিফিংয়ের সময় সাংবাদিকরা ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকের কাছে প্রশ্ন রাখেন, ঈদের ঠিক আগে একের পর এক মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে। অধিকাংশ আগুন ভোরে লাগছে। ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এই আগুনের ঘটনাগুলো একই সূত্রে গাঁথা কি না? নাশকতা কি না?
জবাবে ফায়ার সার্ভিস মহাপরিচালক বলেন, আমি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে অনুরোধ করবো এ বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য।
আরও পড়ুন: আগুনের ঘটনা নাশকতা কি না, খতিয়ে দেখছে র্যাব
এদিকে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়ন এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে ৯ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
করপোরেশনের অঞ্চল-১ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মেরীনা নাজনীনকে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়। আর সদস্য সচিব করা হয়েছে প্রধান সমাজকল্যাণ ও বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা আকন্দ মোহাম্মদ ফয়সাল উদ্দীনকে। এই কমিটিকে আগামী তিনদিনের মধ্যে কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মুখপাত্র আবু নাছের।
টিটি/জেডএইচ/এএসএম