বায়ান্ন বছর আগে ১৯৭১ সালে বাঙালি জাতির জীবনে ছিল এক উত্থান পর্ব। এক বিভীষিকাময় নারকীয়তায় বসবাসের ভেতর থেকে সশস্ত্র সংগ্রামের ভেতর দিয়ে সাড়ে সাত কোটি প্রাণ মুক্ত করেছিল স্বদেশ। মুজিবনগর সরকারের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী বাঙালি দেশমাতৃকার প্রতিটি ইঞ্চি মুক্ত রাখার জন্য প্রাণপণ লড়াই করেছে। সত্তরের নির্বাচনে বিজয়ী বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা করেছিল পাক সামরিক জান্তা শাসক। তাদের ঔপনিবেশ পূর্ববাংলাকে দমিয়ে রেখে শোষণের মাত্রা বাড়াতে তারা নির্বাচিত বাঙালির প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার বদলে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।
Advertisement
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতার আহ্বানে ২ মার্চ থেকে সারা বাংলায় শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। বঙ্গবন্ধু বাঙালিকে স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রামের জন্য তৈরি হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রতিরোধে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। জেনারেল ইয়াহিয়া শাসনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য একাত্তরের ৩ মার্চ জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অধিবেশন ডেকে ১ মার্চ স্বেচ্ছাচারমূলক ও বেআইনিভাবে তা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে। সাড়ে সাত কোটি মানুষ বুঝতে পারে তার ভোটের রায়কে কার্যকর না করে তা বানচালের জন্য পাক সামরিক শাসকগোষ্ঠী চক্রান্ত শুরু করে। তারা তাদের প্রতিশ্রুতি পালন না করে এবং জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা চলাকালে অতর্কিতে অন্যায় ও বিশ্বাসঘাতকমূলক যুদ্ধ ঘোষণা করে। ২৫ মার্চ রাতে ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নামে ঢাকায় গণহত্যা চালায়।
বায়ান্ন বছর আগে এইদিনে ঘোষিত হয়েছিল, ‘স্বাধীন বাংলাদেশ আজ বাস্তব সত্য’। বাঙালি জাতির প্রথম রাষ্ট্র ও সরকার গঠনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্নের এই পুতপবিত্র দিনে উচ্চারিত হয়েছিল সেই প্রাণস্পর্শী শব্দরাজি, ‘আমাদের রাষ্ট্রপতি জনগণ-নন্দিত ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ, নির্যাতিত মানুষের মূর্তপ্রতীক শেখ মুজিব। বাংলার মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের জন্য সংগ্রাম করে আজ বন্দি। তার নেতৃত্বে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম জয়ী হবেই।’
এই আশার বাণী আলোকিত মহিমা হয়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে। যে সাহস, উদ্যম, মনোবল নিয়ে সাড়ে সাত কোটি মানুষের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা একাত্তরের ১০ এপ্রিল প্রথম সরকার গঠন করেছিলেন, ১৭ এপ্রিল আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে তার অগ্রযাত্রা শুরু হয়। দ্বিগুণ মনোবল নিয়ে সরকার পরিচালনা শুধু নয়, বিশ্বজনমত ও তৈরি করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। মুক্তিবাহিনী সংগঠিত করে যুদ্ধ পরিচালনা এবং স্বল্প সময়ে দেশকে হানাদারমুক্ত করেছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
Advertisement
বিশ্ব ইতিহাসে বাংলাদেশ ছাড়া আর কোনো দেশ ঘোষণা দিয়ে স্বাধীনতা এবং যুদ্ধ করে এতো স্বল্প সময়ে দেশকে স্বাধীন করতে পারেনি। সহস্র বছরের সাধনা শেষে বাঙালি জাতির রাষ্ট্র সাধনা পূর্ণতা পেয়েছিল একাত্তরের ১৭ এপ্রিল। যেদিন মুজিবনগরে শপথ নিলেন যুদ্ধকালীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার। মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ ও রাজধানী গঠিত হয় বলেই এই সরকার মুজিবনগর সরকার হিসেবে পরিচিতি পায়। আবার প্রবাস থেকে সরকার পরিচালনা করা হতো বলে প্রবাসী সরকার কিংবা যুদ্ধকালে গঠিত বলে অস্থায়ী সরকারের অভিধাও মেলে।
স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, যা ১০ এপ্রিল ১৯৭১ সালে গণপরিষদ সদস্যদের প্রথম অধিবেশনে অনুমোদিত হয় এবং ১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হয়, তাতে অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ প্রসঙ্গ টেনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘উল্লেখিত বিশ্বাসঘাতকতামূলক কাজের জন্য উদ্ভুত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার অর্জনের আইনানুগ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঢাকায় যথাযথভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং বাংলাদেশের অখণ্ডতা ও মর্যাদা রক্ষার জন্যে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। ‘...আমাদের স্বাধীনতার এ ঘোষণা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে কার্যকরী বলে গণ্য হবে।’
এই ঘোষণার ভিত্তিতেই একাত্তরের ১০ এপ্রিল গঠিত হয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্র এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। এর পরদিন সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া প্রথম ভাষণেই বলেছিলেন, ‘বহু বছরের সংগ্রাম, ত্যাগ ও তিতিক্ষার বিনিময়ে আমরা আজ স্বাধীন বাংলাদেশের পত্তন করেছি। স্বাধীনতার জন্যে যে মূল্য আমরা দিয়েছি তা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের উপরাষ্ট্র হওয়ার জন্যে নয়। পৃথিবীর বুকে স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি শান্তিকামী দেশ হিসেবে রাষ্ট্র পরিবার গোষ্ঠীতে উপর্যুক্ত স্থান আমাদের প্রাপ্য। এ অধিকার বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের জন্মগত অধিকার।’
মুজিবনগর সরকার গঠনের আগে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এবং তাদের বাঙালি বংশোদ্ভূত সহযোগী ‘শান্তি কমিটি’ নামক ঘাতক দল (নেতৃত্বে যার গোলাম আযম, নুরুল আমিন, ফজলুল কাদের চৌধুরী, খাজা খয়েরউদ্দিন প্রমুখ) প্রচারণা চালায়, মুজিবনগর সরকার ‘ভারতের পুতুল সরকার’ এবং মুক্তিযোদ্ধারা ‘ভারতের চর’ ‘দুষ্কৃতকারী’। শুধু তাই নয়, এদের খতম করার জন্য ‘শান্তি কমিটি’ নামক ঘাতক বাহিনী দেশজুড়ে হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ শুরু করায় পাকহানাদার বাহিনীর সহায়ক হিসেবে।
Advertisement
তাজউদ্দীন আহমদ তাদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছিলেন, ‘যাদেরকে গত সাধারণ নির্বাচনে বাংলার মানুষ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে তারা যদি এই সুযোগে বাংলাদেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হয় তবে বাংলাদেশের মানুষ তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেবে। তারা সাড়ে সাত কোটি বাংলাদেশবাসীর রোষবহ্নিতে জ্বলে খাক হয়ে যাবে।’
তাজউদ্দীনের এই হুঁশিয়ারিতে পাকিবাহিনীর সহযোগীরা বিন্দুমাত্র বিচলিত হয়নি। পাকি প্রভুদের ছত্রছায়ায় তাদের মনোরঞ্জনে বাঙালি নিধনে রাজাকার, আল বদর, আল শামস নামক সশস্ত্র খুনে বাহিনী গঠন করে সারাদেশে হত্যাযজ্ঞ চালায় এবং পাকিবাহিনীর নিষ্ঠুরতাকে আরও উদ্বুদ্ধ করে। এই ঘাতক বাহিনী সেই একাত্তর থেকে আজও বহাল। বাংলার মানুষ তাদের বিচারের দাবিতে এখনো রক্ত ঝরায়।
একাত্তরের ১৭ এপ্রিল প্রচণ্ড বিপদ ও ঝুঁকি নিয়ে কঠোর নিরাপত্তামূলক ও গোপনীয় ব্যবস্থায় মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে শপথ নিল প্রথম বাংলাদেশ সরকার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ওইদিনই এলাকার নামকরণ করা হয় মুজিবনগর। এবং তা সরকারের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি ও সশস্ত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী এবং এইচ এম কামরুজ্জামান, এমন মনসুর আলী ও খোন্দাকার মোশতাক আহমদকে মন্ত্রী করে ছয় সদস্যের সরকার ঘোষণা করা হয়েছিল ১০ এপ্রিল।
১৭ এপ্রিল এই সরকারের আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণের মধ্যে দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে আসন নেয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ এবং আত্মপ্রকাশ ঘটে সাড়ে সাত কোটি মানুষের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার ১৫ দিনের মাথায় ১০ এপ্রিল গঠিত হয় নতুন রাষ্ট্র ও নতুন সরকার। আর তার সাতদিনের মাথায় এই সরকার আনুষ্ঠানিক শপথ নেয়। পুরো কার্যক্রমটি ছিল আইনানুগ এবং বৈধ।
বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম শপথ পাঠ করান মন্ত্রিসভার সদস্যদের। এই অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। প্রথম সরকারের প্রথম কেবিনেট সচিব এইচ টি ইমাম তার ‘বাংলাদেশ সরকার ৭১’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ‘৭ এপ্রিল, ১৯৭১ মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে, যে স্থানে ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, ঠিক সেই স্থানেই দুশো বছরেরও বেশি কাল পরে স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সূর্যোদয় হলো- এর চাইতে আনন্দের আর গর্বের আর কী হতে পারে।
অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীপরিষদ সদস্যবৃন্দ এবং প্রধান সেনাপতি পতাকাত্তোলন করলেন। সশস্ত্র বাহিনীর অভিবাদন (গার্ড অব অনার) গ্রহণ করলেন। দেশি-বিদেশি সাংবাদিকবৃন্দ, বিপুল সংখ্যক জনতা আর নেতৃবৃন্দ দেখে অভিভূত হলেন।’ শপথ অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক প্রথম সরকারের প্রথম সচিব তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী লিখেছেন, ‘নিজেকে মনে হচ্ছিল ধাত্রীর মতো। একটি দেশের জন্ম হচ্ছে। প্রত্যক্ষ করছি।’ অনুষ্ঠানে মিশনারী স্কুলের ছাত্রীরা ‘আমার সোনার বাংলা’ গেয়েছিল জাতীয় সংগীত হিসেবে।
শপথ গ্রহণ শেষে ভাষণে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘এ লড়াইয়ে আমাদের জয় অনিবার্য, আমরা পাকিস্তানি হানাদারদের বিতাড়িত করবোই। আজ না জিতি কাল জিতবো। কাল না জিতি পরশু জিতবোই।’ জয় বাঙালির হয়েছিল, তবে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর তিন লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে। পেয়েছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত এক দেশ। একান্ন বছর আগে শপথ নেওয়া প্রথম সরকারের একটাই লক্ষ্য ছিল, যুদ্ধে জয়লাভ করা।
অর্থাৎ বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ হানাদারমুক্ত করা। আর সেই লক্ষ্যেই মুজিবনগর সরকার তার সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল। প্রচুর প্রতিকূলতার মুখোমুখি হলেও যুদ্ধ পরিচালনা অর্থ, অস্ত্র সংগ্রহ থেমে থাকেনি। তাজউদ্দীন আহমেদ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেওয়া ভাষণে দৃঢ় কণ্ঠে উচ্চারণ করলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশ আজ বাস্তব সত্য এবং এ সম্বন্ধে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর মনে যেন কোনো সন্দেহ না থাকে। সাড়ে সাত কোটি বীর বাঙালি আজ তাদের স্বাধীন সার্বভৌম সত্তা প্রতিষ্ঠা করেছে এবং যে কোনো মূল্যে তা রক্ষা করবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে সৃষ্ট স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে স্থাপিত হয়েছে এবং কোনো শক্তিই আর তা মুছে ফেলতে পারবে না।’
তাজউদ্দীন আহমদ পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এবং কেন কোন পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন এবং সরকার গঠন করা হয়েছে তার পূর্বাপর প্রেক্ষাপট তুলে ধরে একটি দীর্ঘ বিবৃতি (ইংরেজি ও বাংলাভাষায়) সাংবাদিকদের কাছে বিতরণ করেন। এই বিবৃতির ওপর ভিত্তি করে সাংবাদিকরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা কেন অনিবার্য ছিল এবং মুক্তিবাহিনীর পক্ষে জনমত তৈরি করার জন্য প্রতিবেদন লিখেছেন। ১৭ এপ্রিল সকালে যে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সৃষ্টি হলো, তা সেদিনই সারা বিশ্ববাসী জেনেছিল। উপমহাদেশের নাম শোনেননি এমন দেশের মানুষজন ওই প্রথম জানলো, বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী ৫৫ হাজার বর্গমাইলের একটি স্বাধীন দেশ আধুনিক সমরাস্ত্র সজ্জিত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দখল করে নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে।
একাত্তরের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ও শপথ গ্রহণ অবরুদ্ধ দেশে মুক্তিকামী বাঙালি ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ে আরও দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করে। ‘প্রাণের বিনিময়ে হলেও দেশকে হানাদারমুক্ত করতে হবে’- এই শপথ এবং অঙ্গীকার নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা রণাঙ্গন থেকে রণাঙ্গনে লড়াই চালিয়ে গেছে। যখন জেনেছে তার নিজস্ব রাষ্ট্র গঠিত হয়েছে এবং তার নির্বাচিত প্রতিনিধির সরকার গঠন করেছে, তখন দ্বিগুণ দারুণ উৎসাহে উদ্বুদ্ধ হয়ে শত্রু হননে মত্ত হয়েছে।
বায়ান্ন বছর আগে শপথ গ্রহণের ঐতিহাসিক দিনটিকে স্বাধীনতার পর ‘মুজিবনগর দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই দিনটি বারবার স্মরণ করায়, কী কঠোর সাহস, দৃঢ়তা, মনোবল, প্রত্যয় নিয়ে বাঙালি যুদ্ধ করেছিল আর তাদের পরিচালনা করেছিলেন তাদেরই আকাঙ্ক্ষিত সরকার- মুজিবনগর সরকার।
লেখক: একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক, কবি ও মহাপরিচালক প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)।
এইচআর/ফারুক/জেআইএম