রাজনীতি

‘এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাবো না, এটি চূড়ান্ত’

খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য। ভূ-তত্ত্ব বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ ও লেখক। সাবেক মন্ত্রী।

Advertisement

আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করা এবং জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা বলেন জাগো নিউজের সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপি আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।

জাগো নিউজ: নির্বাচন বয়কটের পথেই বিএনপি। পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রার্থী দেওয়া হচ্ছে না। এমন ধারাবাহিক বয়কটের মধ্য দিয়ে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কি না?

আরও পড়ুন>>কূটনীতিকরা বিএনপির পরিকল্পনা জানতে চায়: শামা ওবায়েদ

Advertisement

খন্দকার মোশাররফ হোসেন: নির্বাচনে অংশ নেওয়া যেমন রাজনীতি, অংশগ্রহণ না করাও তেমন রাজনীতি। এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাবো না, এটি চূড়ান্ত।এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। নির্বাচন নিয়ে এত জালিয়াতি হতে পারে, তা বিশ্ব ইতিহাসে নেই। ভোটই তো হয় না। মরা মানুষও ভোট দেয়। এমন পরিস্থিতির মধ্যে কোনো মূলধারার রাজনৈতিক সংগঠন নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। নির্বাচনে যাবো না যতক্ষণ এই সরকার ক্ষমতায় থাকবে, এই সিদ্ধান্তেই আমরা আছি।

জাগো নিউজ: নির্বাচনে অংশ না নেওয়া এদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি, যা বিএনপির হাত ধরে আরও শক্তিশালী হচ্ছে। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে নির্বাচনে অংশ না নেওয়া শেখ হাসিনা সরকারকে আরও শক্তিশালী করছে, অপরদিকে বিএনপি আরও দুর্বল হচ্ছে। অন্তত অনেক বিশ্লেষক তাই মনে করছেন।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন: ২০১৮ সালের নির্বাচনে মাত্র ছয়টি আসনে বিএনপি জিতলো। বিএনপি কি ছয়টি আসন পাওয়ার দল! অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ফাঁদ পেতে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যে ষড়যন্ত্র, সেখানে তো বারবার আমরা সুবিধা করে দিতে পারি না।

জাগো নিউজ: ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নিলেন না। ২০১৮ সালে অংশ নিলেন। এখন নির্বাচনে যাবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই দ্বি-চারী অবস্থান থেকে বিএনপির আসলে অর্জন কী?

Advertisement

আরও পড়ুন>>কঠোর আন্দোলনের বার্তা দিতেই রমজানে মাঠে বিএনপি

খন্দকার মোশাররফ হোসেন: নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি না বলে আমাদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত অভিযোগ এলো। এই অভিযোগ খণ্ডাতেই ২০১৮ সালে নির্বাচনে অংশ নিলাম। আমরা অংশ নিয়েছি বলেই আওয়ামী লীগ দিনের ভোট রাতে সম্পন্ন করেছে। অংশ না নিলে তো বিশ্ববাসী এই চিত্র দেখতে পেতো না। কী কারণে আমরা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবো না, তার প্রমাণ দিয়েছি ২০১৮ সালের নির্বাচনে গিয়ে। এই সরকার যে নানা ষড়যন্ত্র করেই টিকে থাকতে চায়, তা মানুষ বুঝে গেছে। মানুষও চায় আমরা এই সরকারের অধীনে আর নির্বাচনে অংশ না নিই।

জাগো নিউজ: আপনারা বলছেন, নির্বাচনে অংশ নিলেও সরকার ষড়যন্ত্র করে, অংশ না নিলেও ষড়যন্ত্র করে। তাহলে আপনাদের সামনে উপায় কী?

খন্দকার মোশাররফ হোসেন: আগের যে কোনো ষড়যন্ত্রে সরকার আর হালে পানি পাবে না। আমরা আর ষড়যন্ত্র করতে দেবো না। জনগণও আর এই সরকারকে মেনে নেবে না।

জাগো নিউজ: কী হবে? কী করার আছে বিএনপির?

খন্দকার মোশাররফ হোসেন: আমি রাজনীতিবিদ। আমি কোনো গণক না। কী হবে তা সময় ধরে বলা যাবে না।জাগো নিউজ: একটি ফলাফলের আশা নিয়েই তো রাজনীতি করেন…

আরও পড়ুন>>ইউনিয়ন-ওয়ার্ডে বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে দ্বিধান্বিত তৃণমূল

খন্দকার মোশাররফ হোসেন: ফলাফল আসবেই। কারণ কোনো স্বৈরশাসকই টিকে থাকতে পারেনি। আন্দোলনের মাধ্যমেই পতন ঘটাবো। জনগণের আন্দোলনেই মুক্তি মিলবে।

জাগো নিউজ: জনগণ আপনাদের এ আন্দোলনে ভরসা পায়?

খন্দকার মোশাররফ হোসেন: জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না। বছরের পর বছর ধরে জনগণকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। জনগণই রুখে দাঁড়াবে।

জাগো নিউজ: রাষ্ট্র, সমাজে নানা অসঙ্গতি বিরাজমান। দ্রব্যমূল্য বাড়ছে। জ্বালানির দাম বাড়লো। কিন্তু মানুষ সয়ে নিলো। প্রতিবাদে রাস্তায় নামেনি। আপনারও নামাতে পারেননি। ভবিষ্যতে নামবে, তার কী প্রমাণ?

খন্দকার মোশাররফ হোসেন: মানুষ ঘুরে দাঁড়ায়নি ঠিক, তবে সামনে দাঁড়াবে না তা আপনি নিশ্চিত করে বলতে পারেন না। মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বলেই শেখ হাসিনাকে ২০০১ সালে হারতে হয়েছে। এরশাদকেও বিদায় নিতে হয়েছে। জনগণ ঘুরে না দাঁড়ালে তো এরশাদই সারাজীবন ক্ষমতায় থাকার কথা ছিল। তবে আন্দোলন অতো সহজ নয়। জনগণকে নিয়ে আন্দোলন করা কঠিন বলেই আমি মনে করি।

জাগো নিউজ: এই কঠিন কাজ করার মতো সক্ষমতা এখন বিএনপির আছে?

খন্দকার মোশাররফ হোসেন: এই কঠিন কাজ এখন বিএনপির করতে হবে না। জনগণই এই কঠিন কাজ করবে বলে আমার বিশ্বাস। মানুষের পিঠ তো দেওয়ালে ঠেকে গেছে।

জাগো নিউজ: জনগণ নিজেই যদি কঠিন আন্দোলন করে, তাহলে আপনাদের ওপর আস্থা রাখবে কেন? অন্য আরও রাজনৈতিক শক্তি আছে?

খন্দকার মোশাররফ হোসেন: আমরা জনগণের জন্যই আন্দোলন করছি। গণতন্ত্র তো আওয়ামী লীগ হত্যা করেছে স্বাধীনতার পরই। গণতন্ত্র হত্যা করেই আওয়ামী লীগ বাকশাল গঠন করেছিল। জিয়াউর রহমান ক্ষমতা নিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন। খালেদা জিয়া এরশাদের স্বৈরতন্ত্রের পতন ঘটিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন।

জনগণ জানে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা দিতে হলে কেবল বিএনপিকেই বিশ্বাস করা যায়। এ কারণেই জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে বলে মনে করি।

এএসএস/এএসএ/জিকেএস