ধর্ম

স্ত্রীকে মা বলে ফেললে স্বামীর করণীয় কী?

সুরা মুজাদালাহের প্রথম আয়াতে স্বামীর ব্যাপারে স্ত্রীর অভিযোগের বর্ণনা দিয়ে শুরু হবে ১৪৪৪ হিজরির ২৫তম তারাবিহ। আজকের তারাবিহতে সুরা মুজাদালাহ, সুরা হাশর, সুরা মুমতাহিনা, সুরা সফ, সুরা জুমআ, সুরা মুনাফিকুন, সুরা তাগাবুন, সুরা ত্বালাক এবং সুরা তাহরিম পড়া হবে। আজকের তারাবিহত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধানের তেলাওয়াতে শুরু হবে। তাহলো- স্ত্রীকে মা বলে ফেললে ওই স্বামীর করণীয় কী?

Advertisement

হাফেজে কোরআনগণ আজ ২৮তম পারার তেলাওয়াত শেষ করবেন। ২৫ রোজার তারাবিহ পড়ে মুসলিম উম্মাহ লাইলাতুল কদরের প্রার্থনাও করবে। বিগত জীবনের গুনাহ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। নিজের ও পরিবারের জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি প্রার্থনায় অশ্রু বিসর্জন দেবে মুমিন।

স্ত্রীকে মা বলে ফেললে স্বামী কী করবেন?

সুরা মুজাদালাহ তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হবে আজকের তারাবিহ। এ সুরার শুরুতেই মানুষের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ের ভুলে বিধান ও কাফফার ঘোষণা করা হয়েছে। স্ত্রীকে মা বলার অপরাধের বিধান-কাফফারার বিবরণ পড়া হবে আজ। সুরা মুজাদালাহর প্রথম আয়াতে আল্লাহ তাআলা নবিজিকে উদ্দেশ্য করে বলেন-

Advertisement

قَدۡ سَمِعَ اللّٰهُ قَوۡلَ الَّتِیۡ تُجَادِلُکَ فِیۡ زَوۡجِهَا وَ تَشۡتَکِیۡۤ اِلَی اللّٰهِ ٭ۖ وَ اللّٰهُ یَسۡمَعُ تَحَاوُرَکُمَا ؕ اِنَّ اللّٰهَ سَمِیۡعٌۢ بَصِیۡرٌ

আল্লাহ তার কথা শুনেছেন যে নারী (খাওলাহ বিনত সা‘লাবাহ) তার স্বামীর বিষয়ে তোমার সাথে বাদানুবাদ করছে আর আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানাচ্ছে, আল্লাহ তোমাদের দু’জনের কথা শুনছেন, আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা মুজাদালাহ: আয়াত ১)

শরিয়তের পরিভাষায় এই বিশেষ মাসআলাটিকে ‘যিহার’ বলা হয়। এই সুরার প্রাথমিক আয়াতসমূহে যিহারের শরিয়তসম্মত বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। এতে আল্লাহ তাআলা হজরত খাওলা রাদিয়াল্লাহু আনহার ফরিয়াদ শুনে তার জন্য তার সমস্যা সমাধান করে দিয়েছেন। তার খাতিরে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে এসব আয়াত নাজিল করেছেন। হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ‘সেই সত্তা পবিত্র, যার শোনা সবকিছুকে শামিল করে। যিনি সব আওয়াজ ও প্রত্যেকের ফরিয়াদ শুনেন। খাওলা বিনতে সালাবাহ যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে তার স্বামীর ব্যাপারে অভিযোগ করছিল, তখন আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু এত কাছে থাকা সত্বেও আমি তার কোনো কোনো কথা শুনতে পারিনি। অথচ আল্লাহ তাআলা সব শুনেছেন এবং বলেছেন- قَدْ سَمِعَ اللَّهُ قَوْلَ الَّتِي تُجَادِلُكَ فِي زَوْجِهَا وَتَشْتَكِي إِلَى اللَّهِ وَاللَّهُ (বুখারি ৭৩৮৫, নাসাঈ ৩৪৬০)

তাই সাহাবায়ে কেরাম এই নারীর প্রতি অত্যন্ত সম্মান প্রদর্শন করতেন। একদিন খলিফা হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু একদল লোকের সঙ্গে গমনরত ছিলেন। পথিমধ্যে এই নারীর সামনে এসে দণ্ডায়মান হলে তিনি দাঁড়িয়ে তার কথাবার্তা শুনলেন। কেউ কেউ বলল, আপনি এই বৃদ্ধার খাতিরে এতবড় দলকে পথে আটকিয়ে রাখলেন। খলিফা বললেন, জান ইনি কে? এ সেই নারী, যার কথা আল্লাহ তাআলা সপ্ত আকাশের উপরে শুনেছেন। অতএব, আমি কি তার কথা এড়িয়ে যেতে পারি? আল্লাহর কসম! তিনি যদি স্বেচ্ছায় প্রস্থান না করতেন, তবে আমি রাত পর্যন্ত তার সঙ্গে এখানেই দাঁড়িয়ে থাকতাম।’ (ইবনে কাসির)

Advertisement

স্ত্রীদের মা বলা অন্যায়। এ অপরাধ সম্পর্কে কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্ট বর্ণনা তুলে ধরেছেন। কোরআনে সে বিধানের আয়াতগুলো তুলে ধরা হলো-

اَلَّذِیۡنَ یُظٰهِرُوۡنَ مِنۡکُمۡ مِّنۡ نِّسَآئِهِمۡ مَّا هُنَّ اُمَّهٰتِهِمۡ ؕ اِنۡ اُمَّهٰتُهُمۡ اِلَّا الّٰٓیِٴۡ وَلَدۡنَهُمۡ ؕ وَ اِنَّهُمۡ لَیَقُوۡلُوۡنَ مُنۡکَرًا مِّنَ الۡقَوۡلِ وَ زُوۡرًا ؕ وَ اِنَّ اللّٰهَ لَعَفُوٌّ غَفُوۡرٌ

‘তোমাদের মধ্যে যারা তাদের স্ত্রীগণকে মা বলে ফেলে, তাদের স্ত্রীগণ তাদের মা নয়। তাদের মা কেবল তারাই, যারা তাদেরকে জন্মদান করেছে। তারা তো অসমীচীন ও ভিত্তিহীন কথাই বলে। নিশ্চয় আল্লাহ মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল।' (সুরা মুজাদালাহ : আয়াত ২)

আলোচ্য আয়াতের মাধ্যমে ইসলামি শরিয়ত এই প্রথার দ্বিবিধ সংস্কার সাধন করেছে। প্রথমতঃ স্বয়ং প্রথাকেই অবৈধ ও গুনাহ সাব্যস্ত করেছে। কেননা স্ত্রীকে মা বলে দেয়া একটা আসার ও মিথ্যা বাক্য। তাদের এই অসার উক্তির কারণে স্ত্রী মা হয়ে যায় না। মা তো সে-ই যার পেট থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছে, তাদের এই উক্তি মিথ্যা এবং পাপও। কারণ, বাস্তব ঘটনার বিপরীতে স্ত্রীকে মা বলছে। দ্বিতীয় সংস্কার এই করেছেন যে, যদি কোনো মূর্খ অর্বাচীন ব্যক্তি এরূপ করেই বসে, তবে এই বাক্যের কারণে ইসলারি শরিয়তে স্ত্রী চিরতরে হারাম হবে না। কিন্তু এই বাক্য বলার পর স্ত্রীকে আগের মতো ভোগ করার অধিকারও তাকে দেয়া হবে না। বরং তাকে জরিমানাস্বরূপ কাফফারা আদায় করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَ الَّذِیۡنَ یُظٰهِرُوۡنَ مِنۡ نِّسَآئِهِمۡ ثُمَّ یَعُوۡدُوۡنَ لِمَا قَالُوۡا فَتَحۡرِیۡرُ رَقَبَۃٍ مِّنۡ قَبۡلِ اَنۡ یَّتَمَآسَّا ؕ ذٰلِکُمۡ تُوۡعَظُوۡنَ بِهٖ ؕ وَ اللّٰهُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرٌ

 ‘যারা তাদের স্ত্রীদের মা বলে ফেলে, অতপর নিজেদের উক্তি প্রত্যাহার করে, তাদের কাফফারা এই একে অপরকে স্পর্শ করার আগে একটি দাসকে মুক্তি দেবে। এটা তোমাদের জন্য উপদেশ হবে। আল্লাহ খবর রাখেন তোমরা যা কর।' (সুরা মুজাদালাহ : আয়াত ৩)

যদি কেউ স্ত্রীকে মা বলে ফেলে তবে সে স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করার আগে কাফফারা আদায় করবে। ১. একটি ক্রীতদাস স্বাধীন করবে। ২. তা না পারলে লাগাতার কোনো বিরতি ছাড়াই দু’মাস রোজা রাখবে। যদি রাখতে রাখতে মধ্যখানে কোনো শরয়ী কারণ ছাড়াই রোজা বন্ধ করে দেয়, তাহলে পুনরায় আবার নতুনভাবে প্রথম থেকে দু’মাসের রোজা পূর্ণ করতে হবে। আর শরয়ী কারণ বলতে যেমন, অসুস্থতা বা সফরে যাওয়া ইত্যাদি। ৩. যদি লাগাতার দু’মাস রোযা রাখতে না পারে, তবে ৬০জন মিসকিনকে (এক বেলা) আহার করাবে। কেউ কেউ বলেন, প্রত্যেক মিসকিনকে দুই মুদ্দ (অর্ধসা’ অর্থাৎ, সওয়া এক কিলো), আবার কেউ বলেন, এক মুদ্দ (গম বা চাল) দিলেই যথেষ্ট হবে। তবে কোরআনের আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, খাবার পেটপুরে খাওয়াতে হবে অথবা পেট ভরে যায় এতটা পরিমাণ খাদ্য দিতে হবে। অনুরূপ সকল মিসকিনকে একই সঙ্গে খাওয়ানোও জরুরি নয়, বরং একাধিক কিস্তির মাধ্যমে এ সংখ্যা পূরণ করা যেতে পারে। (ফাতহুল কাদির) তবে এটা জরুরী যে, যতক্ষণ না নির্দিষ্ট সংখ্যা পূরণ হয়েছে, ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করা জায়েয হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন-

فَمَنۡ لَّمۡ یَجِدۡ فَصِیَامُ شَهۡرَیۡنِ مُتَتَابِعَیۡنِ مِنۡ قَبۡلِ اَنۡ یَّتَمَآسَّا ۚ فَمَنۡ لَّمۡ یَسۡتَطِعۡ فَاِطۡعَامُ سِتِّیۡنَ مِسۡکِیۡنًا ؕ ذٰلِکَ لِتُؤۡمِنُوۡا بِاللّٰهِ وَ رَسُوۡلِهٖ ؕ وَ تِلۡکَ حُدُوۡدُ اللّٰهِ ؕ وَ لِلۡکٰفِرِیۡنَ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ

‘যার এ সামর্থ্য নেই, সে একে অপরকে স্পর্শ করার আগে বিরতিহীনভাবে দুই মাস রোজা রাখবে। যে এতেও অক্ষম হয় সে ষাট জন মিসকিনকে আহার করাবে। এটা এজন্যে, যাতে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত শাস্তি। আর কাফেরদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণা দায়ক আজাব।' (সুরা মুজাদালাহ : আয়াত ৪)

স্ত্রীকে মা বলে ফেলার অপরাধকে যিহার বলে। এ যিহারের কাফফারা এই যে, একজন দাস অথবা দাসীকে মুক্ত করবে। এরূপ করতে সক্ষম না হলে একাদিক্ৰমে দুই মাস রোজা রাখবে। রোগ-ব্যাধি কিংবা দুর্বলতাবশতঃ এতগুলো রোযা রাখতেও সক্ষম না হলে ৬০ জন মিসকিনকে পেট ভরে আহার করাবে। (ফাতহুল কাদির)

اِنَّ الَّذِیۡنَ یُحَآدُّوۡنَ اللّٰهَ وَ رَسُوۡلَهٗ کُبِتُوۡا کَمَا کُبِتَ الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِهِمۡ وَ قَدۡ اَنۡزَلۡنَاۤ اٰیٰتٍۭ بَیِّنٰتٍ ؕ وَ لِلۡکٰفِرِیۡنَ عَذَابٌ مُّهِیۡنٌ

‘যারা আল্লাহ, তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা অপদস্থ হয়েছে, যেমন অপদস্থ হয়েছে তাদের পূর্ববর্তীরা। আমি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ নাজিল করেছি। আর কাফেরদের জন্যে রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।' (সুরা মুজাদালাহ : আয়াত ৫)

লাইলাতুল কদর পাওয়ার সম্ভাবনাময় রাতের মধ্যে আজও একটি রাত। এ রাতে মুসল্লিরা ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করবে। হাফেজে কোরআনগণ তেলাওয়াত করবেন ২৮তম পাড়ার অনেকগুলো সুরা। যার মধ্যে রয়েছে- সুরা মুজাদালাহ, সুরা হাশর, সুরা মুমতাহিনা, সুরা সফ, সুরা জুমআ, সুরা মুনাফিকুন, সুরা তাগাবুন, সুরা ত্বালাক্ব ও সুরা তাহরিম। সুরাগুরোর সংক্ষিপ্ত আলোচ্য বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো-

সুরা মুজাদালাহ : আয়াত ২২

মদিনায় অবতীর্ণ সুরা মুঝাদালাহতে আল্লাহ তাআলা তাঁর হেদায়েতের বর্ণনা দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ হেদায়েতের মাধ্যমে মানব জীবনে জটিল ও কঠিন সমস্যার সমাধান করেছেন। তাছাড়া শরিয়তের বিধান প্রবর্তনের পাশাপাশি মানুষের দুঃখ কষ্ট দূর করার উপায়ও ওঠে এসেছে এ সুরায়।

এ সুরায় পরস্পরের কানাঘুষা করতে নিষেধ করা হয়েছে। এটা করা নিষিদ্ধ। যারা এমনটি করবে তাদের জন্য রয়েছে সীমালঙ্ঘনের শাস্তি। আল্লাহ তাআলা বলেন-

اَلَمۡ تَرَ اِلَی الَّذِیۡنَ نُهُوۡا عَنِ النَّجۡوٰی ثُمَّ یَعُوۡدُوۡنَ لِمَا نُهُوۡا عَنۡهُ وَ یَتَنٰجَوۡنَ بِالۡاِثۡمِ وَ الۡعُدۡوَانِ وَ مَعۡصِیَتِ الرَّسُوۡلِ ۫ وَ اِذَا جَآءُوۡکَ حَیَّوۡکَ بِمَا لَمۡ یُحَیِّکَ بِهِ اللّٰهُ ۙ وَ یَقُوۡلُوۡنَ فِیۡۤ اَنۡفُسِهِمۡ لَوۡ لَا یُعَذِّبُنَا اللّٰهُ بِمَا نَقُوۡلُ ؕ حَسۡبُهُمۡ جَهَنَّمُ ۚ یَصۡلَوۡنَهَا ۚ فَبِئۡسَ الۡمَصِیۡرُ

'আপনি কি ভেবে দেখেননি, যাদেরকে কানাঘুষা করতে নিষেধ করা হয়েছিল অতপর তারা নিষিদ্ধ কাজেরই পুনরাবৃত্তি করে এবং পাপাচার, সীমালংঘন এবং রাসুলের অবাধ্যতার বিষয়েই কানাঘুষা করে। তারা যখন আপনার কাছে আসে, তখন আপনাকে এমন ভাষায় সালাম করে, যা দ্বারা আল্লাহ আপনাকে সালাম করেননি। তারা মনে মনে বলে, আমরা যা বলি, এ জন্য আল্লাহ আমাদেরকে শাস্তি দেন না কেন? জাহান্নামই তাদের জন্যে যথেষ্ট। তারা তাতে প্রবেশ করবে। কতই না নিকৃষ্ট সেই জায়গা।' (সুরা মুজাদালাহ : আয়াত ৮)

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا تَنَاجَیۡتُمۡ فَلَا تَتَنَاجَوۡا بِالۡاِثۡمِ وَ الۡعُدۡوَانِ وَ مَعۡصِیَتِ الرَّسُوۡلِ وَ تَنَاجَوۡا بِالۡبِرِّ وَ التَّقۡوٰی ؕ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ الَّذِیۡۤ اِلَیۡهِ تُحۡشَرُوۡنَ

‘মুমিনগণ, তোমরা যখন কানাকানি কর, তখন পাপাচার, সীমালংঘন ও রসূলের অবাধ্যতার বিষয়ে কানাকানি করো না বরং অনুগ্রহ ও খোদাভীতির ব্যাপারে কানাকানি করো। আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর কাছে তোমরা একত্রিত হবে।' (সুরা মুজাদালাহ : আয়াত ৯)

اِنَّمَا النَّجۡوٰی مِنَ الشَّیۡطٰنِ لِیَحۡزُنَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ لَیۡسَ بِضَآرِّهِمۡ شَیۡئًا اِلَّا بِاِذۡنِ اللّٰهِ ؕ وَ عَلَی اللّٰهِ فَلۡیَتَوَکَّلِ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ

'এই কানাঘুষা তো শয়তানের কাজ; মুমিনদেরকে দুঃখ দেয়ার জন্যে। তবে আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত সে তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। মুমিনদের উচিত আল্লাহর উপর ভরসা করা।' (সুরা মুজাদালাহ : আয়াত ১০)

এ সুরায় যিহার সম্পর্কিত শরিয়তের বিধান আলোচিত হয়েছে। তানজি বা গোপন কান পরামর্শ সম্পর্কিত বিষয়ের বিস্তারিত বর্ণনা এসেছে। বৈঠক ও মজলিশের আদব-কায়দার বিবরণ ওঠে এসেছে এ সুরায়। সর্বোপরি এ সুরার শেষে আল্লাহ ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে শত্রুতা পোষণকারীদের উদ্দেশ্যে সতর্কবাণী উচ্চারণের পাশাপাশি অপমানজনক শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

সুরা হাশর : আয়াত ২৪

এ সুরাটি মদিনায় অবতীর্ণ। ইয়াহুদি ও মুনাফিকদের শাস্তির বিবরণ স্থান পেয়েছে। কেননা তারা সব সময় বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত থাকতো। এ সুরার প্রথমাংশে আল্লাহর গুণাবলী এবং কাফির বনু নজির গোত্রের মদিনা থেকে নির্বাসনের কথা এসেছে। যুদ্ধ-বিগ্রহ সম্পর্কিত আইনের ধারা ঘোষণা করা হয়েছে এ সুরায়। যুদ্ধে প্রাপ্ত অর্থ-সম্পদ বণ্টনের বর্ণনাও দেয়া হয়েছে।

মুনাফিকদের আচার-আচরণ ও কু-প্রবৃত্তির আলোচনার পাশাপাশি আল্লাহর একত্ববাদের আগ্রহ-উপদেশ, ঈমানের উপকরণ, ঈমানদার ও বেঈমানের মাঝে পার্থক্য ও ঈমানের গুরুত্ব আলোচিত হয়েছে। এ সুরায় ঈমানদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান ওঠে এসেছে। আল্লাহর শেখানো দোয়াটি হলো-

رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِّلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ

উচ্চারণ : 'রাব্বানাগফিরলানা ওয়া লি ইখওয়ানিনাল্লাজিনা সাবাকুনা বিল ঈমানি ওয়া লা তাঝআল ফি কুলুবিনা গিল্লাল লিল্লাজিনা আমানু রাব্বানা ইন্নাকা রাউফুর রাহিম।'

অর্থ : 'হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে এবং ঈমানে আগ্রহী আমাদের ভ্রাতাগণকে ক্ষমা কর এবং ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রেখো না। হে আমাদের পালনকর্তা, আপনি দয়ালু, পরম করুণাময়।' (সুরা হাশর : আয়াত ১০)

এ সুরায় মহান আল্লাহকে ভয় করতে হবে তা বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহকে ভুলে থাকা মুমিনের কাজ নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ وَ لۡتَنۡظُرۡ نَفۡسٌ مَّا قَدَّمَتۡ لِغَدٍ ۚ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ خَبِیۡرٌۢ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ  وَ لَا تَکُوۡنُوۡا کَالَّذِیۡنَ نَسُوا اللّٰهَ فَاَنۡسٰهُمۡ اَنۡفُسَهُمۡ ؕ اُولٰٓئِکَ هُمُ الۡفٰسِقُوۡنَ

'মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ তা'আলাকে ভয় কর। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত, আগামী কালের জন্যে সে কি প্রেরণ করে, তা চিন্তা করা। আল্লাহ তা'আলাকে ভয় করতে থাক। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা'আলা সে সম্পর্কে খবর রাখেন। তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা আল্লাহ তা'আলাকে ভুলে গেছে। ফলে আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে আত্ন বিস্মৃত করে দিয়েছেন। তারাই অবাধ্য।' (সুরা হাশর : আয়াত ১৮-১৯)

আল্লাহ মানুষকে জীবন-বিধান হিসেবে কোরআন দিয়েছেন। এ কোরআন যদি অন্য কোনো সৃষ্টির উপর নাজিল করা হতো তারা আল্লাহর ভয়ে কম্পমান থাকতো। আল্লাহ তাআলার সে ঘোষণা-

لَوۡ اَنۡزَلۡنَا هٰذَا الۡقُرۡاٰنَ عَلٰی جَبَلٍ لَّرَاَیۡتَهٗ خَاشِعًا مُّتَصَدِّعًا مِّنۡ خَشۡیَۃِ اللّٰهِ ؕ وَ تِلۡکَ الۡاَمۡثَالُ نَضۡرِبُهَا لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمۡ یَتَفَکَّرُوۡنَ

' যদি আমি এই কোরআন পাহাড়ের উপর অবতীর্ণ করতাম, তবে তুমি দেখতে যে, পাহাড় বিনীত হয়ে আল্লাহ তা'আলার ভয়ে বিদীর্ণ হয়ে গেছে। আমি এসব দৃষ্টান্ত মানুষের জন্যে বর্ণনা করি, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।' সুরা হাশর : আয়াত ২১)

আল্লাহ তাআলার গুণের বর্ণনাও ওঠে এসেছে এ সুরায়। আর তা সকাল-সন্ধ্যায় এ তিনটি আয়াত পড়ায় রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত। আর তাহলো-

هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ - هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ - هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاء الْحُسْنَى يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

অর্থ : তিনিই আল্লাহ তা'আলা, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই; তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যকে জানেন তিনি পরম দয়ালু, অসীম দাতা। তিনিই আল্লাহ তিনি ব্যতিত কোন উপাস্য নেই। তিনিই একমাত্র মালিক, পবিত্র, শান্তি ও নিরাপত্তাদাতা, আশ্রয়দাতা, পরাক্রান্ত, প্রতাপান্বিত, মাহাত্ন?শীল । তারা যাকে অংশীদার করে আল্লাহ তা' আলা তা থেকে পবিত্র। তিনিই আল্লাহ তা'আলা, স্রষ্টা, উদ্ভাবক, রূপদাতা, উত্তম নাম সমূহ তাঁরই। নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, সবই তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়।' (সুরা হাশর : আয়াত ২২-২৪)

এ তিন আয়াত তেলাওয়াতের ফজিলত হলো- ৭০ হাজার ফেরেশতা তার পাঠকারীর জন্য মাগফেরাত বা ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে।

সুরা মুমতাহিনা : আয়াত ১৩

মদিনায় অবতীর্ণ সুরা মুমতাহিনা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি সুরা। এ সুরায় আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তারা যেন কাফিরদের সঙ্গে কোনো প্রকার বন্ধুত্বের সম্পর্ক না রাখে। অনুগত বান্দা কিভাবে আল্লাহর কাছে প্রার্থন করবে তা ওঠে এসেছে এ সুরায়। আল্লাহ তাআলা বলেন-

رَّبَّنَا عَلَيْكَ تَوَكَّلْنَا وَإِلَيْكَ أَنَبْنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ

উচ্চারণ : 'রাব্বানা আলাইকা তাওয়াক্কালনা ওয়া ইলাইকা আনাবনা ওয়া ইলাইকাল মাসির।'

অর্থ : 'হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা তোমারই উপর ভরসা করেছি, তোমারই দিকে মুখ করেছি এবং তোমারই নিকট আমাদের প্রত্যাবর্তন।' (সুরা মুমতাহিনা : আয়াত ৪)

رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا فِتْنَةً لِّلَّذِينَ كَفَرُوا وَاغْفِرْ لَنَا رَبَّنَا إِنَّكَ أَنتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

উচ্চারণ : রাব্বানা লা তাঝআলনা ফিতনাতাল লিল্লাজিনা কাফারু ওয়াগফিরলানা রাব্বানা ইন্নাকা আংতাল আযিযুল হাকিম।'

অর্থ : 'হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি আমাদেরকে কাফেরদের জন্য পরীক্ষার পাত্র করো না। হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের ক্ষমা কর। নিশ্চয় তুমি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।' (সুরা মুমতাহিনা : আয়াত ৫)

এ সুরায় ঈমানদার নারীদের বিষয়ে কিছু দিকনির্দেশনা ও নীতিমালা বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا جَآءَکُمُ الۡمُؤۡمِنٰتُ مُهٰجِرٰتٍ فَامۡتَحِنُوۡهُنَّ ؕ اَللّٰهُ اَعۡلَمُ بِاِیۡمَانِهِنَّ ۚ فَاِنۡ عَلِمۡتُمُوۡهُنَّ مُؤۡمِنٰتٍ فَلَا تَرۡجِعُوۡهُنَّ اِلَی الۡکُفَّارِ ؕ لَا هُنَّ حِلٌّ لَّهُمۡ وَ لَا هُمۡ یَحِلُّوۡنَ لَهُنَّ ؕ وَ اٰتُوۡهُمۡ مَّاۤ اَنۡفَقُوۡا ؕ وَ لَا جُنَاحَ عَلَیۡکُمۡ اَنۡ تَنۡکِحُوۡهُنَّ اِذَاۤ اٰتَیۡتُمُوۡهُنَّ اُجُوۡرَهُنَّ ؕ وَ لَا تُمۡسِکُوۡا بِعِصَمِ الۡکَوَافِرِ وَ سۡـَٔلُوۡا مَاۤ اَنۡفَقۡتُمۡ وَ لۡیَسۡـَٔلُوۡا مَاۤ اَنۡفَقُوۡا ؕ ذٰلِکُمۡ حُکۡمُ اللّٰهِ ؕ یَحۡکُمُ بَیۡنَکُمۡ ؕ وَ اللّٰهُ عَلِیۡمٌ حَکِیۡمٌ

'মুমিনগণ, যখন তোমাদের কাছে ঈমানদার নারীরা হিজরত করে আগমন করে, তখন তাদেরকে পরীক্ষা কর। আল্লাহ তাদের ঈমান সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন। যদি তোমরা জান যে, তারা ঈমানদার, তবে আর তাদেরকে কাফেরদের কাছে ফেরত পাঠিও না। এরা কাফেরদের জন্যে হালাল নয় এবং কাফেররা এদের জন্যে হালাল নয়। কাফেররা যা ব্যয় করেছে, তা তাদের দিয়ে দাও। তোমরা, এই নারীদেরকে প্রাপ্য মোহরানা দিয়ে বিবাহ করলে তোমাদের অপরাধ হবে না। তোমরা কাফের নারীদের সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রেখো না। তোমরা যা ব্যয় করেছ, তা চেয়ে নাও এবং তারাও চেয়ে নিবে যা তারা ব্যয় করেছে। এটা আল্লাহর বিধান; তিনি তোমাদের মধ্যে ফয়সালা করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়।' [ সুরা মুমতাহিনা : আয়াত ১০)

وَ اِنۡ فَاتَکُمۡ شَیۡءٌ مِّنۡ اَزۡوَاجِکُمۡ اِلَی الۡکُفَّارِ فَعَاقَبۡتُمۡ فَاٰتُوا الَّذِیۡنَ ذَهَبَتۡ اَزۡوَاجُهُمۡ مِّثۡلَ مَاۤ اَنۡفَقُوۡا ؕ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ الَّذِیۡۤ اَنۡتُمۡ بِهٖ مُؤۡمِنُوۡنَ

'তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যদি কেউ হাতছাড়া হয়ে কাফেরদের কাছে থেকে যায়, অতঃপর তোমরা সুযোগ পাও, তখন যাদের স্ত্রী হাতছাড়া হয়ে গেছে, তাদেরকে তাদের ব্যয়কৃত অর্থের সমপরিমাণ অর্থ প্রদান কর এবং আল্লাহকে ভয় কর, যার প্রতি তোমরা বিশ্বাস রাখ।' (সুরা মুমতাহিনা : আয়াত ১১)

یٰۤاَیُّهَا النَّبِیُّ اِذَا جَآءَکَ الۡمُؤۡمِنٰتُ یُبَایِعۡنَکَ عَلٰۤی اَنۡ لَّا یُشۡرِکۡنَ بِاللّٰهِ شَیۡئًا وَّ لَا یَسۡرِقۡنَ وَ لَا یَزۡنِیۡنَ وَ لَا یَقۡتُلۡنَ اَوۡلَادَهُنَّ وَ لَا یَاۡتِیۡنَ بِبُهۡتَانٍ یَّفۡتَرِیۡنَهٗ بَیۡنَ اَیۡدِیۡهِنَّ وَ اَرۡجُلِهِنَّ وَ لَا یَعۡصِیۡنَکَ فِیۡ مَعۡرُوۡفٍ فَبَایِعۡهُنَّ وَ اسۡتَغۡفِرۡ لَهُنَّ اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ

'হে নবি, ঈমানদার নারীরা যখন আপনার কাছে এসে আনুগত্যের শপথ করে যে, তারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, তাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, জারজ সন্তানকে স্বামীর ঔরস থেকে আপন গর্ভজাত সন্তান বলে মিথ্যা দাবী করবে না এবং ভাল কাজে আপনার অবাধ্যতা করবে না, তখন তাদের আনুগত্য গ্রহণ করুন এবং তাদের জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল অত্যন্ত দয়ালু।' (সুরা মুমতাহিনা : আয়াত ১২)

সুরা সফ : আয়াত ১৪

সুরাটি মদিনায় অবতীর্ণ। এ সুরায় আল্লাহর পথে প্রাণ উৎসর্গ করার জন্য মুসলমানদের উৎসাহিত করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা তাঁর দ্বীনকে দুনিয়াতে বিজয়ী করবেন; এতে যত ষড়যন্ত্রই করা হোক না কেন? এ জন্য মুমিন বান্দাকে ঈমানের ক্ষেত্রে ঐকান্তিক নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা অবলম্বন করা নির্দেশ এসেছে এ সুরায়। আল্লাহ তাআলা বলেন-

اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الَّذِیۡنَ یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِهٖ صَفًّا کَاَنَّهُمۡ بُنۡیَانٌ مَّرۡصُوۡصٌ

'আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন, যারা তাঁর পথে সারিবদ্ধভাবে লড়াই করে, যেন তারা সীসাগালানো প্রাচীর।' (সুরা সফ : আয়াত ৪)

এ সুরায় আল্লাহর পথে জীবন ও সম্পদ দিয়ে উত্তম কেনাবেচার কথা করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

'হে মুমিনগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বানিজ্যের সন্ধান দিব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে? তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবনপণ করে জেহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম; যদি তোমরা বোঝ। তিনি তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন এবং এমন জান্নাতে দাখিল করবেন, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং বসবাসের জান্নাতে উত্তম বাসগৃহে। এটা মহাসাফল্য। এবং আরও একটি অনুগ্রহ দিবেন, যা তোমরা পছন্দ কর। আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য এবং আসন্ন বিজয়। মুমিনদেরকে এর সুসংবাদ দান করুন।' (সুরা সফ : আয়াত ১০-১৩)

এ সুরায় হজরত ইসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে ঘোষণা করা হয়েছে য, তিনি সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবি হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আবির্ভাবের সুসংবাদ প্রদান করেছেন। তিনি বনি ইসরাইল জাতিকে তাঁর প্রতি ঈমান আনয়নের নির্দেশ দিয়েছিলেন। আল্লাহ বলেন-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُوۡنُوۡۤا اَنۡصَارَ اللّٰهِ کَمَا قَالَ عِیۡسَی ابۡنُ مَرۡیَمَ لِلۡحَوَارِیّٖنَ مَنۡ اَنۡصَارِیۡۤ اِلَی اللّٰهِ ؕ قَالَ الۡحَوَارِیُّوۡنَ نَحۡنُ اَنۡصَارُ اللّٰهِ فَاٰمَنَتۡ طَّآئِفَۃٌ مِّنۡۢ بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ وَ کَفَرَتۡ طَّآئِفَۃٌ ۚ فَاَیَّدۡنَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا عَلٰی عَدُوِّهِمۡ فَاَصۡبَحُوۡا ظٰهِرِیۡنَ

'মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হয়ে যাও, যেমন ঈসা ইবনে-মরিয়ম তার শিষ্যবর্গকে বলেছিল, আল্লাহর পথে কে আমার সাহায্যকারী হবে? শিষ্যবর্গ বলেছিলঃ আমরা আল্লাহর পথে সাহায্যকারী। অতঃপর বনী-ইসরাঈলে র একদল বিশ্বাস স্থাপন করল এবং একদল কাফের হয়ে গেল। যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, আমি তাদেরকে তাদের শত্রুদের মোকাবেলায় শক্তি যোগালাম, ফলে তারা বিজয়ী হল।' (সুরা সফ : আয়াত ১৪)

সুরা জুমআ : আয়াত ১১

মদিনায় অবতীর্ণ সুরা জুমআয় আল্লাহ তাআলা নিজের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণার পর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রেরণের ঘোষণা দিয়েছেন। এ সুরায় আল্লাহ তাআলা মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন যে, সকল জীব-জন্তু, কীট-পতঙ্গ, তরুলতা তথা আসমান-জমিনের সকল সৃষ্টি জগতের মতো তোমরা মানবজাতিও তাঁর গুণাগুণ বর্ণনা কর।

এ সুরায় আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে ইবাদাত-বন্দেগির পাশাপাশি নিজেদের জীবিকার তাগিদে জমিনে বিচরণের নির্দেশ করেছেন। সর্বশেষ জুমআর নামাজ সংক্রান্ত বিধি-নিষেধ আরোপ করেছেন। যেখানে জুমআনর নামাজের জন্য আহ্বান করার পর করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ ذَرُوا الۡبَیۡعَ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ   فَاِذَا قُضِیَتِ الصَّلٰوۃُ فَانۡتَشِرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَ ابۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِ اللّٰهِ وَ اذۡکُرُوا اللّٰهَ کَثِیۡرًا لَّعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ

'হে মুমিনগণ! জুমআর দিনে যখন নামাজের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ। অতপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।' (সুরা জুমআ : আয়াত ৯-১০)

সুরা মুনাফিকুন : আয়াত ১১

মদিনায় অবতীর্ণ সুরাটিতে মুনাফিকদের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় হিজরতের পর মুনাফিকরা মারাত্মক বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তারা বিশ্বনবির দরবারে এসে ইসলাম গ্রহণের কথা বলে আবার গোপনের অবিশ্বাসীদের সঙ্গে আতাত করে। যার ফলে তাদের সম্পর্কে এ সুরা অবতীর্ণ হয়।

এ সুরায় মুসলমানদেরকে দুনিয়ার লোভ-লালসা, সৌন্দর্য, ফ্যাশনে পড়ে আল্লাহর ইবাদাত ও আনুগত্য হতে দূরে সরে না যেতে বলা হয়েছে। যেমনিভাবে মুনাফিকরা সরে গেছে। আর আল্লাহ ইবাদাত থেকে বিরত থাকা মারাত্মক ক্ষতি।

দুনিয়ায় মানুষের সন্তান-সন্তুতি ও ধন-সম্পদের কারণে বেখেয়াল হয়ে আল্লাহকে ভুলে না যায়। সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تُلۡهِکُمۡ اَمۡوَالُکُمۡ وَ لَاۤ اَوۡلَادُکُمۡ عَنۡ ذِکۡرِ اللّٰهِ ۚ وَ مَنۡ یَّفۡعَلۡ ذٰلِکَ فَاُولٰٓئِکَ هُمُ الۡخٰسِرُوۡنَ

'হে মুমিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে। যারা এ কারণে গাফেল হয়, তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত।' (সুরা মুনাফিকুন : আয়াত ৯)

সর্বোপরি যারা মুখে ঈমানের দাবি করলেও তাদের অন্তরে ঈমানের ছিটেফোঁটাও ছিল না। তাদের বিষয়ে এ সুরা নাজিল হয়। আল্লাহ তাআলা তাদের আবেদনের কথাকে এভাবে তুলে ধরেন-

'আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় কর। অন্যথায় সে বলবে, হে আমার পালনকর্তা! আমাকে আরও কিছুকাল অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি সদকা করতাম এবং সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। প্রত্যেক ব্যক্তির নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ কাউকে অবকাশ দেবেন না। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে খবর রাখেন।' (সুরা মুনাফিকুন : আয়াত ১০-১১)

সুরা তাগাবুন : আয়াত ১৮

মদিনায় অবতীর্ণ সুরা তাগাবুনে আল্লাহর কুদরত, মহত্ত্ব এবং বড়ত্বের আলোচনার পর মানুষের মধ্যে যারা আল্লাহকে স্বীকার করে আর যারা স্বীকার করে না তাদের প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলার সিফাত সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে। এ সুরায় ও মুনফিকদের সম্পর্কে সতর্কবানী উচ্চারণ করা হয়েছে।

সুরা ত্বালাক্ব : আয়াত ১২

মদিনায় অবতীর্ণ এ সুরায় ত্বালাক সম্পর্কিত বিধি-বিধান আলোচিত হয়েছে। তালাক পরবর্তী ইদ্দত সম্পর্কিত বিধি-বিধান, শিশু সন্তান থাকলে তাদের সর্ম্পকিত বিধানও আলোচিত হয়েছে এ সুরায়। এ সুরায় আল্লাহ তাআলা বলেন-

یٰۤاَیُّهَا النَّبِیُّ اِذَا طَلَّقۡتُمُ النِّسَآءَ فَطَلِّقُوۡهُنَّ لِعِدَّتِهِنَّ وَ اَحۡصُوا الۡعِدَّۃَ ۚ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ رَبَّکُمۡ ۚ لَا تُخۡرِجُوۡهُنَّ مِنۡۢ بُیُوۡتِهِنَّ وَ لَا یَخۡرُجۡنَ اِلَّاۤ اَنۡ یَّاۡتِیۡنَ بِفَاحِشَۃٍ مُّبَیِّنَۃٍ ؕ وَ تِلۡکَ حُدُوۡدُ اللّٰهِ ؕ وَ مَنۡ یَّتَعَدَّ حُدُوۡدَ اللّٰهِ فَقَدۡ ظَلَمَ نَفۡسَهٗ ؕ لَا تَدۡرِیۡ لَعَلَّ اللّٰهَ یُحۡدِثُ بَعۡدَ ذٰلِکَ اَمۡرًا

'হে নবী, তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে চাও, তখন তাদেরকে তালাক দিয়ো ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং ইদ্দত গণনা করো। তোমরা তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করো। তাদেরকে তাদের গৃহ থেকে বহিস্কার করো না এবং তারাও যেন বের না হয় যদি না তারা কোন সুস্পষ্ট নির্লজ্জ কাজে লিপ্ত হয়। এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। যে ব্যক্তি আল্লাহর সীমালংঘন করে, সে নিজেরই অনিষ্ট করে। সে জানে না, হয়তো আল্লাহ এই তালাকের পর কোন নতুন উপায় করে দেবেন। (সুরা তালাক : আয়াত ১)

- 'অতঃপর তারা যখন তাদের ইদ্দতকালে পৌঁছে, তখন তাদেরকে যথোপযুক্ত পন্থায় রেখে দেবে অথবা যথোপযুক্ত পন্থায় ছেড়ে দেবে এবং তোমাদের মধ্য থেকে দু'জন নির্ভরযোগ্য লোককে সাক্ষী রাখবে। তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে সাক্ষ্য দিবে। এতদ্দ্বারা যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে। আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন।' (সুরা তালাক : আয়াত ২)

এ সুরায় আল্লাহকে বেশি বেশি ভয় করার কথা বলা হয়েছে। এ ভয় করায় রয়েছে অনেক নেয়ামত লাভের ঘোষণা। আল্লাহ তাআলা বলেন-

সমস্যার সমাধানে তাকওয়া

যে ব্যক্তি আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় করে আল্লাহ তাকে দুনিয়ার রোগ-শোক,বিপদ-মুসিবত থেকে মুক্তি দেবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَمَنْ يَتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا

‘যে কেউ আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য (সমস্যা থেকে উদ্ধার পাওয়ার) কোনো না কোনো পথ বের করে দেবেন।’ (সুরা ত্বালাক : আয়াত ২)

নিশ্চিন্ত রিজিক লাভে তাক্বওয়া

যে ব্যক্তি আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় করে আল্লাহ তাকে এমন ব্যবস্থাপনায় রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন, যা বান্দা কল্পনাও করে না। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ

‘আর (যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে তিনি) তাকে রিজিক দেবেন (এমন উৎস) থেকে যা সে ধারণাও করতে পারে না।’ (সুরা ত্বালাক : আয়াত ৩)

সব কাজ সহজে তাকওয়া

কাজ যত কঠিন হোক না কেন, বিপদ যত কঠিন হোক না কেন, মহামারি যত কঠিন হোক না কেন, আল্লাহকে ভয় করলে আল্লাহ তার কঠিন কাজও সহজ করে দেবেন বলে ঘোষণা দেন-

وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُۥ مِنْ أَمْرِهِۦ يُسْرًا

‘যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন।’ (সুরা ত্বালাক : আয়াত ৪)

গুনাহ মাফ ও প্রতিফল লাভে তাকওয়া

তাক্বওয়া এমন একটি আমল, যা মুত্তাকি ব্যক্তির গুনাহ মোচন করে দেয় এবং অনেক বড় প্রতিফল দান করেন বলেও ঘোষণা দেয়-

وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يُكَفِّرْ عَنْهُ سَيِّـَٔاتِهِۦ وَيُعْظِمْ لَهُۥٓ أَجْرًا

‘যে কেউ আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার পাপ মোচন করে দেবেন, আর তার প্রতিফলকে বিশাল বিস্তৃত করে দেবেন।’ (সুরা ত্বালাক : আয়াত ৫)

সুরা তাহরিম : আয়াত ১২

মদিনায় অবতীর্ণ এ সুরাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুরা। এ সুরায় আল্লাহ তাআলা হালাল-হারাম সম্পর্কিত বিষয়াদি আলোচনা করেছেন। আল্লাহ তাআলা এ সুরায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্রা স্ত্রীগণের কতিপয় ঘটনার বর্ণনা উল্লেখ করেছেন।

দুনিয়া স্ত্রীদের উচিত স্বামীদের কথা, সম্পদ ইত্যাদি বিষয়ের নিরাপত্তায় সতর্ক থাকা। কেননা স্বামীর সম্পদ, কথা-বার্তা বা তথ্য সবই আমানত। তা যেন কোনোভাবেই খেয়ানত না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখা। স্বামীর কোনো কথা অন্যের কাছে না বলা।

এ সুরায় আল্লাহ তাআলা মুমিনদের ও তাদের পরিবারবর্গের হেফাজতে সতর্ক থাকা ও চেষ্টার কথা বলেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ

'হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ। তারা আল্লাহ তাআলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাই করে।' (সুরা তাহরিম : আয়াত ৬)

জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষায় মানুষ আল্লাহর কাছে বার বার ক্ষমা প্রার্থনা করবে-

رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

উচ্চারণ : 'রাব্বানা আতিনা ফিদদুনইয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়া ক্বিনা আজাবান নার।'

অর্থ : 'হে পরওয়ারদেগার! আমাদিগকে দুনয়াতেও কল্যাণ দান কর এবং আখেরাতেও কল্যাণ দান কর এবং আমাদিগকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা কর।' (সুরা বাকারা : আয়াত ২০১‌)

এ সুরায় মুমিন বান্দার ক্ষমা প্রার্থনায় ওঠেছে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ দোয়া। আর তাহলো-

رَبَّنَا أَتْمِمْ لَنَا نُورَنَا وَاغْفِرْ لَنَا إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

উচ্চারণ : 'হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের নূরকে পূর্ণ করে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি সবকিছুর উপর সর্ব শক্তিমান।' (সুরা তাহরিম : আয়াত ৮)

সর্বোপরি এ সুরায় আল্লাহ তাআলা নারী জাতি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। দাম্পত্য জীবনের সুখ-শান্তি কিভাবে অর্জিত হবে তার পথনির্দেশ করেছেন এ সুরায়। পারস্পারিক ধৈর্য, সহনশীলতা, ন্যায়বিচার ও পরস্পরের হক আদায় প্রসঙ্গে নীতিমালা প্রণীত হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআনের এ গুরুত্বপূর্ণ সুরাগুলো বুঝে পড়ার এবং তাঁর ওপর আমল করার পাশাপাশি নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসকে শিরকমুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জিকেএস