বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ‘গোড়ার মসজিদ’। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে বারোবাজার ইউনিয়নের বেলাট দৌলতপুর গ্রামে অবস্থিত মসজিদটি। এর আকৃতি বর্গাকার।
Advertisement
গোড়াই নামের একজন সুফি মসজিদটিতে বসবাস করতেন। তার নাম অনুসারে এটি ‘গোড়ার মসজিদ’ হিসেবে পরিচিত। মসজিদের পাশে আবিষ্কৃত একটি কবরকে স্থানীয়রা গোড়াই দরবেশের কবর বলে মনে করেন।
মসজিদের পূর্ব পাশে রয়েছে একটি বড় পুকুর। যদিও বর্তমানে পুকুর ঘাটটি ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রথমে মসজিদটিতে মাত্র একটি গুম্বজ ছিল। পরে ছোট ছোট দুটি গুম্বজ করা হয়। ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে বারোবাজারে এর খননকাজ শুরু হয়। সেসময় বেশ কয়েকটি মসজিদের সঙ্গে এ মসজিদটিও আবিষ্কৃত হয়। আবিষ্কারের পরপরই এ মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব তালিকায় স্থান করে নেয়।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ধারণা, গোড়াই মসজিদটি খুব সম্ভবত হোসেন শাহ বা তার ছেলে নসরত শাহর শাসনামলে তৈরি করা হয়েছে। মসজিদের দেওয়ালগুলোর পুরুত্ব কমপক্ষে পাঁচ ফুট। মসজিদে প্রবেশের জন্য রয়েছে তিনটি দরজা, যার মধ্যে মাঝখানের প্রবেশপথটি অপর দুটি থেকে অপেক্ষাকৃত বড় আকৃতির। ধারণা করা হয়, মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণের দেওয়ালেও দুটি করে মোট চারটি প্রবেশপথ ছিল যেগুলো এখন আর নেই। এছাড়া পূর্ব পাশের দেওয়াল বাদে বাকি তিন পাশের দেওয়ালে চারটি কালো পাথরের স্তম্ভের সন্ধান পাওয়া যায়। মসজিদের বাইরের দেওয়াল সম্পূর্ণটাই পোড়ামাটির কারুকার্য দিয়ে অলংকৃত। মুসলিম স্থাপত্যের এক নয়নাভিরাম ও অনন্য উদাহরণ মসজিদটি।
Advertisement
আকিদুল ইসলাম নামের একজন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঝিনাইদহ শহর থেকে এখানে নামাজ পড়তে এসেছি। নামাজ পড়ে আবার ঝিনাইদহের বাসায় ফিরে যাব। মসজিদটিতে নামাজ পড়ে খুবই আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায়। খুব আরাম লাগে এখানে নামাজ পড়তে।’
স্থানীয় মোস্তফা কামাল বলেন, ‘৭০০-৮০০ বছর আগে মসজিদটির সন্ধান পাওয়া যায়। মসজিদের কারুকার্যগুলো এভাবেই ছিল। যেগুলো ভেঙে গিয়েছিল পরে সেগুলো সংস্কার করা হয়। এখানে প্রতিনিয়ত অনেক লোকের সমাগম হয়।’
জেহান উদ্দিন নামের আরেকজন বলেন, গোড়ার মসজিদটি অনেক সুন্দর। আমরা স্থানীয়রা প্রতিদিন এখানে নামাজ পড়তে আসি। নামাজ পড়ার পাশাপাশি এখানে দূর-দূরান্ত থেকে অনেক দর্শনার্থী মসজিদটি দেখতে আসেন। এটি মোগল আমলের তৈরি বলে অনেকেই দাবি করেন।
মসজিদের ইমাম রাকিব আহমেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মসজিদটির যখন সন্ধান পাওয়া যায় তখন এটি মাটিচাপা দেওয়া ছিল। ওপরে বনজঙ্গল-গাছপালা থাকায় বোঝার উপায় ছিল না যে এর নিচে কোনো মসজিদ আছে। সেসময় মসজিদের আশপাশেই লোকজন নামাজ পড়তেন। একদিন ফুরফুরা শরিফের পির আবু বক্কর সিদ্দিক (রহ.) এখানে আসেন। তখন তিনি বলেছিলেন এখানে একটি মসজিদ আছে। তোমরা আশপাশে নামাজ না পড়ে এখানে সবাই নামাজ পড়বা। তখন থেকে সবাই এখানে নামাজ পড়া শুরু করেন।
Advertisement
এসআর/এএসএম