জাতীয়

পরিবেশ দূষণের জন্য প্রধানত ব্যবসায়ীরাই দায়ী: মনজিল মোরসেদ

পরিবেশ দূষণের জন্য প্রধানত ব্যবসায়ীরাই দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)-এর প্রেসিডেন্ট ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

Advertisement

শনিবার (১৫ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘বায়ুদূষণ কমাতে দ্বৈত নীতির পরিহার জরুরি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এবং বারসিক এ সভার আয়োজন করে।

অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে আইন প্রণয়নের যে উদ্যোগ আসে, সেটি জনগণের হবে কি না তা নির্ভর করে আইন প্রণয়নে কারা জড়িত তার ওপর। আমাদের সংসদে নেতৃত্ব দেন ব্যবসায়ীরা এবং পলিসি নির্ধারিত হয় তাদের স্বার্থে। পরিবেশ দূষণের জন্য প্রধানত দায়ী ব্যবসায়ীরা। সুতরাং আইন প্রণয়ন তাদের স্বার্থেই হবে এটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে একমাত্র উপায় হলো জনগণের জেগে ওঠা এবং আওয়াজ তোলা যে, পরিবেশ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা চলবে না।

অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ক্যাপস’র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বায়ুদূষণের স্বাস্থ্যঝুঁকি উপলব্ধি করে পিএম২.৫ এর আদর্শমান প্রতি ঘনমিটারে ১০ মাইক্রোগ্রাম থেকে কমিয়ে ৫ মাইক্রোগ্রাম করেছে। সেখানে বাংলাদেশের ‘বায়ুদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০২২’ (তফসিল-১)-এ পিএম২.৫ এর আদর্শমান প্রতি ঘনমিটারে ১৫ মাইক্রোগ্রাম থেকে বাড়িয়ে ৩৫ মাইক্রোগ্রাম করা হয়েছে। আবার বায়ুদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০২২ এর তফসিল-৫ অনুযায়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্ট্যাক ইমিশনের জন্য সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেনের অক্সাইডসমূহ এবং বস্তুকণার সর্বাধিক অনুমোদিত সীমা যথাক্রমে ২০০, ২০০ এবং ৫০ মিলিগ্রাম/ন্যানো ঘনমিটার. যা যেসব দেশ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলার সহযোগিতা করছে, তাদের চেয়েও এ মান ৪-৫ গুণ বেশি।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিল্প মন্ত্রণালয় আমদানি ব্যয় কমাতে ২০২৩ সালের ১২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত এক সভায় ৫০০ পিপিএম বা তার বেশি মাত্রার সালফার যুক্ত ডিজেল আমদানি করতে সম্মত হয়, যদিও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) তথ্য অনুযায়ী ডিজেলের মধ্যে সালফারের সীমা ৩৫০ পিপিএম পর্যন্ত নির্ধারিত ছিল।

তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর প্রণীত নতুন পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা-২০২৩ এর তফসিল-১ অনুযায়ী কয়লা ও তেল ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট (৫০ মেগাওয়াট পর্যন্ত) এবং গ্যাস ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট (১০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত) কমলা শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান।

এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণের প্রয়োজন নেই। কিন্তু পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা-১৯৯৭ অনুযায়ী সব বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে লাল বিভাগের অধীনে রাখা হয়েছিল, যার অর্থ এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ এবং একটি পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রস্তুত করার জন্য সব বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীর জন্য একটি আইনি বাধ্যবাধকতা ছিল।

উপরন্তু কমলা শ্রেণির শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার বাধ্যবাধকতা ছিল, কিন্তু নতুন পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা-২০২৩ এ তা অনুপস্থিত। ফলে কমলা শ্রেণির বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট তাদের কার্যক্রমে দূষণ ব্যবস্থাপনার বাধ্যবাধকতা থেকে ছাড় পাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ঢাকাসহ সমগ্র্য বাংলাদেশে যে তাপদাহ চলছে তার জন্য বায়ুদূষণও দায়ী বলে তিনি মনে করেন। তিনি এ সমস্যা সমাধানের জন্য চারটি সুপারিশ প্রস্তাবনা করেন।

Advertisement

ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেকচার এর সহসভাপতি এবং স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকীর সভাপতিত্বে ও ক্যাপস’র গবেষক প্রকৌশলী মো. নাছির আহম্মেদ পাটোয়ারীর সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল।

আলোচক হিসেবে অন্যদের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক ও ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান এবং বারসিক এর সমন্বয়কারী মো. জাহাঙ্গীর আলম উপস্থিত ছিলেন।

এফএইচ/ইএ/জেআইএম