জাতীয়

ইরান-সৌদি সম্পর্ক বিশ্ব রাজনীতির নতুন মোড়

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডার কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয় এবং অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জাপানের ইয়োকোহামা সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখন অধ্যাপনা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে।

Advertisement

ইরান-সৌদি আরবের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়ন নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজের। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।

জাগো নিউজ: ইরান-সৌদি আরবের মধ্যকার সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটছে, যেখানে চীন ভূমিকা রাখছে। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি বদলে যাচ্ছে বলে অনেকে বিশ্লেষণ করছেন, যে বদল বিশ্ব রাজনীতিতেও ভূমিকা রাখতে পারে। আপনার বিশ্লেষণ জানতে চাই।

অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ: ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যকার সম্পর্ক খারাপ বহুদিনের। তারা নিজ নিজ দেশের দূতাবাসগুলোও বন্ধ করে রেখেছিল। ইরানকে শিয়াদের রাষ্ট্র এবং সৌদিকে সুন্নি রাষ্ট্র হিসেবেই বিশ্ব চেনে। এ বিভাজন থেকেই সম্পর্কের অবনতি হয় মূলত। চীনের মধ্যস্থতায় ইরান-সৌদির সম্পর্ক উন্নয়ন বিশ্ব রাজনীতির বড় ঘটনা মনে করি।

Advertisement

সম্পর্কের সত্যিকার প্রয়োগ যখন হবে তখন আমরা বুঝতে পারবো আসলে কী হতে যাচ্ছে। যদিও সৌদি ডেলিগেশন এরই মধ্যেই ইয়েমেনে গেছেন আলোচনা করতে। সম্পর্ক পুরোপুরি স্থাপন করা হলেই বোঝা যাবে আসলে কী ঘটতে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন>> ‘রাশিয়া কোণঠাসা হলে পারমাণবিক বোমা মারবেই’

তবে পরিবর্তন ঘটছে এটি স্বীকার করতেই হবে। পৃথিবী বহুমাত্রিকতায় ভর করে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি থামানোর কোনো উপায় নেই। একমুখী গতি থেকে বিশ্ব বেরিয়ে আসতে চাইছে। সময় লাগবে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে।

জাগো নিউজ: এ ঘটনার মধ্য দিয়ে ইরানের কর্তৃত্ব আরও প্রকাশ্যে এলো কি না?

Advertisement

ইমতিয়াজ আহমেদ: অবশ্যই। তবে শুধু ইরানের নয়। সৌদি আরবের কর্তৃত্বও প্রকাশ্যে এলো। বহুমাত্রিকতার মধ্যে ইরান ও সৌদি আরব দুটি ক্ষমতাবান রাষ্ট্র। তুরস্কও ক্ষমতাবান এখন। এরা একজনের কথায় উঠবে আর বসবে সেটাও নয়। আর বর্তমান পরিস্থিতি থেকে সত্যিকার ধারণাও পাওয়া যাবে না। আরও সময় নিতে হবে। সব ঠিক হওয়ার পরেও সম্পর্ক পিছিয়ে যায়। কখন কী ঘটবে বলা মুশকিল। আরও ক্ষমতাধর রাষ্ট্র আছে, যারা চায় না ইরান-সৌদি আরবের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়ন হোক।

আরও পড়ুন>> ‘চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল’

জাগো নিউজ: বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে সৌদি যুবরাজ সালমানের সম্পর্কের অবনতি ঘটছে। ইরান-সৌদির সম্পর্কের রসায়নে এ ঘটনাও কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে দেখছে?

ইমতিয়াজ আহমেদ: বাইডেন ক্ষমতায় এসে অনেক বড় বড় কথা বলেছিলেন। সৌদি আরবের বিরুদ্ধে অনেক কিছুই বলেছিলেন। সব কিছু হজম করেও সৌদি-ইরানের সম্পর্ক থামাতে পারলো না। তার মানে বিশ্ব আর এককেন্দ্রিকতায় বিশ্বাস রাখতে পারছে না।

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রই এককভাবে কর্তৃত্ব দেখিয়ে আসছিল। যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্ব থেকে সরে যাচ্ছে বিশ্ব। অনেকেই ভেবেছিল যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীতে চীনের কর্তৃত্ব ও প্রতিযোগিতা চলবে। দেখা যাচ্ছে, চীন এ প্রতিযোগিতায় হেরে যাচ্ছে না বটে, কিন্তু অন্য রাষ্ট্রগুলোও বহুমাত্রিক পথে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। ইরান এখন বড় শক্তি। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতও একটি বড় শক্তি। সবাই কর্তৃত্ব দেখানোর চেষ্টা করবে।

ইরান-সৌদি আরবের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়ন ঘটছে বটে, কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে আরও বহু সমস্যা আছে। সেগুলোও দেখতে হবে। তবে ইরান-সৌদি সম্পর্ক বিশ্ব রাজনীতির নতুন মোড়, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

জাগো নিউজ: আপনি মধ্যপ্রাচ্যে আরও সমস্যার কথা বললেন। ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যকার সমস্যা বহুদিনের। সম্প্রতি নেতানিয়াহুর সরকার ফের আগ্রাসন চালাচ্ছে। এই আগ্রাসন ইরান-সৌদির সম্পর্কে ফাটল ধরানো বা ইসরায়েলের শক্তিমত্তার প্রকাশ কি না?

ইমতিয়াজ আহমেদ: ইসরায়েল এ ধরনের ছোট-বড় আগ্রাসন চালিয়ে আসছে বহুদিন ধরে। আগ্রাসনই তাদের একমাত্র পথ এবং এটি পুরোনো। বর্তমানে যারা ক্ষমতায় আছে, তারা প্রচণ্ড কট্টরপন্থি। এই কট্টরপন্থি সরকারের যুদ্ধ দরকার পড়ে।

ইসরায়েল সরকারের পেছনে মূল ভূমিকা রাখে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র প্রচুর অস্ত্র দিয়ে আসছে। আমেরিকান মিলিটারির নীতিই হচ্ছে অস্ত্র বিক্রি করা। ইসরায়েল এ অস্ত্রের অন্যতম ক্রেতা।

আরও পড়ুন>> ‘মিয়ানমার বিষয়ে বাংলাদেশের ব্যাপকভিত্তিক নীতি-কৌশল দরকার’

যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের এই নীতির পরিবর্তন আনতে হলে সবার আগে দেশ দুটির জনগণকে জাগতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ ইসরায়েল-ফিলিস্তিন নিয়ে আসলে সত্যিকার ভূমিকা রাখেনি। দেশটির জনগণ অনেক ইস্যুতে বড় বড় কথা বলে। কিন্তু এ বেলায় নিশ্চুপ। তবে ভবিষ্যতে হবে না, তা বলা যাবে না।

জাগো নিউজ: ইসরায়েলে যে ধরনের আন্দোলন হচ্ছে, তাতে দেশটির কাঠামো….

ইমতিয়াজ আহমেদ: ইসরায়েলের চলমান কাঠামো থেকে বের হয়ে আসাও সহজ নয়। অস্ত্র কেনা-বেচাই তাদের একটি কাঠামো। এই কাঠামো ভাঙলে অস্তিত্ব টিকবে না।

ইসরায়েলের মধ্যে নানা আন্দোলন হচ্ছে। স্মরণকালের বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভ চলমান। আমাদের মিডিয়া তেমন প্রচার করছে না। পশ্চিমা মিডিয়াও অনেক কিছু লেখে না। ফিলিস্তিন থেকে অনেকেই আমাকে খবর দেয়, ছবি দেয়। এসব খবর আমরা মিডিয়ায় দেখতে পাই না। তবে শেষ ভরসা সাধারণ জনগণ।

ইসরায়েলের জনগণ ইরান-সৌদি আরবের সম্পর্ক অবশ্যই দেখতে পাচ্ছে। চীনের ভূমিকাও দেখতে পাচ্ছে। এ ঘটনা ইসরায়েলের জনগণকে আরও উৎসাহ দেবে বলে মনে করি এবং রাষ্ট্রটির কাঠামো বদলাতে সহায়ক হতে পারে।

এএসএস/এএসএ/এএসএম