আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রকে লজ্জায় ফেলা কে এই ২১ বছরের তরুণ?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দপ্তর পেন্টাগনের গোপন তথ্য ফাঁস করার অভিযোগে আটক করা হয়েছে দেশটির এয়ার ন্যাশনাল গার্ডের এক সদস্যকে। জ্যাক টেইক্সেইরা নামে ওই সদস্যের বয়স মাত্র ২১ বছর। অভিযোগ উঠেছে, তিনি অনলাইন গেমের একটি চ্যাটরুমে ইউক্রেন যুদ্ধ সম্পর্কিত পেন্টাগনের একগুচ্ছ গোপন নথি ফাঁস করে দিয়েছেন।

Advertisement

ভিডিও ফুটেজে ম্যাসাচুসেটসের বাসভবন ঘেরাও করে টেইক্সেইরাকে আটক করতে গেছে। এসময় বোস্টন থেকে প্রায় এক ঘণ্টার দূরত্বে একটি শহরে বাড়ির পেছনে তিনি হাঁটছিলেন। এফবিআই কর্মকর্তাদের দেখে দু'হাত তোলেন টেইক্সেইরা। পরে কর্মকর্তারা তাকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যান।

আরও পড়ুন>> গোপন নথিতে গুমর ফাঁস: ইউক্রেনে লড়ছে পশ্চিমাদের বিশেষ বাহিনীও

এ সময় ওই এলাকার রাস্তাঘাট বন্ধ করে দিয়েছিল পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দাদের একজন ডিক ট্রেসি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ছয় থেকে সাতজন সেনা সদস্যকে সশস্ত্র অবস্থায় হাঁটতে দেখেছেন তিনি।

Advertisement

ধারণা করা হচ্ছে, শুক্রবারই (১৪ এপ্রিল) টেইক্সেইরাকে আদালতে নেয়া হবে। তিনি ম্যাসাচুসেটস এয়ার ন্যাশনাল গার্ডের গোয়েন্দা ইউনিটের একজন সদস্য। এয়ার ন্যাশনাল গার্ড হলো মার্কিন বিমান বাহিনীর সংরক্ষিত ফোর্স।

সিবিএস নিউজের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে চাকরিতে যোগ দেন টেইক্সেইরা। তার অফিশিয়াল পদবি হলো সাইবার ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম জার্নিম্যান এবং তিনি জুনিয়র পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন>> যুক্তরাষ্ট্রে নথি ফাঁস: যুদ্ধের পরিকল্পনা বদলাতে বাধ্য হলো ইউক্রেন

বৃহস্পতিবার তাকে আটকের পর যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ড বলেছেন, কোনো দুর্ঘটনা ছাড়াই সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে নিরাপত্তা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।

Advertisement

আলাদা সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট রাইডার বলেছেন, পেন্টাগনের এই নথি ফাঁসের ঘটনা একটি ‘ইচ্ছাকৃত অপরাধমূলক কাজ’।

কিন্তু একজন তরুণ এয়ারম্যান কীভাবে এ ধরনের অতিগোপন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে প্রবেশাধিকার পেলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা অল্প বয়স থেকেই অনেক দায়িত্ব পেয়ে থাকেন। তিনি বলেন, একজন প্লাটুন সার্জেন্টের কথাই ধরুন। যুদ্ধের সময় একটি দলকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার কাজ এসব ব্যক্তির ওপর দেওয়া হয় দায়িত্বশীলতা ও বিশ্বাস থেকে।

আরও পড়ুন>> ইউক্রেনে ট্যাংক পাঠিয়ে কি ঠিক করলো ন্যাটো সদস্যরা?

টেইেক্সইরার স্কুলের সহপাঠী ছিলেন ২২ বছর বয়সী এডি সৌজা। রয়টার্সকে তিনি বলেছেন, সাবেক সহপাঠীর খবর শুনে তিনি অবাক হয়েছেন। তার কথায়, সে খুবই ভালো ছেলে। কখনো কোনো সমস্যা করতো না। একেবারেই শান্ত একটা মানুষ। মনে হচ্ছে, এটি একটি বোকা শিশুর ভুল কাজ।

যেভাবে ফাঁস হয়েছিল নথিকয়েক মাস আগে ৫০ থেকে ১০০টির মতো গোপনীয় প্রতিবেদন ডিসকর্ড নামে একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এটি গেমারদের কাছে খুবই জনপ্রিয় মাধ্যম।

মার্কিন কংগ্রেসের হাউস ইন্টেলিজেন্স কমিটির চেয়ারম্যান রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান মাইক টার্নার বলেছেন, তার কমিটি খতিয়ে দেখবে, কেন এটি ঘটলো এবং কেন কয়েক সপ্তাহ তা কারও নজরে এলো না। একইসঙ্গে, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কীভাবে রোধ করা যায় সেটিও তারা দেখবেন।

নথিগুলো যে চ্যাটরুমে ফাঁস হয়েছে তার একজন সদস্যের সাক্ষাৎকার গত বুধবার প্রকাশ করে ওয়াশিংটন পোস্ট। তিনি অভিযুক্ত তরুণকে ক্যারিশম্যাটিক ও বন্দুক সম্পর্কে আগ্রহী বলে উল্লেখ করেন।

আরও পড়ুন>> ইউক্রেনকে ১৫৬০ কোটি ডলার দিচ্ছে আইএমএফ

ওয়াশিংটন পোস্টের খবর অনুসারে, ওই ব্যক্তি ডিসকর্ড চ্যাটরুমের দলনেতা। দু’ডজন সদস্যের দলটি মিম, অফেন্সিভ জোকস ও চ্যাট ছাড়াও দলবদ্ধভাবে প্রার্থনা করে এবং সিনেমা দেখে। এ দলটিতে রাশিয়া, ইউক্রেন ছাড়াও ইউরোপ, এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার লোকজন রয়েছে।

শুরুতে ফাঁস হওয়া নথিগুলো একটি ছোটো চ্যাটরুমে দেয়া হয়। তবে মার্চের শুরুতে এগুলো ডিসকর্ড সার্ভারগুলোতে চলে আসে, যার মধ্যে একটি গেমের জন্য আরেকটি একজন ফিলিপিনো ইউটিউবারের।

সেখান থেকেই এগুলো চলে যায় টেলিগ্রাম চ্যাটরুমসহ নানা জায়গায়, যার মধ্যে কিছু রাশিয়াপন্থি চ্যানেলও ছিল। কিছু ক্ষেত্রে তাদের ইউক্রেনে হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছিল।

কী ছিল গোপন নথিতেএসব নথির কয়েকটির ওপর ‘টপ সিক্রেট’ লেখা ছিল। কয়েকটিতে ইউক্রেন যুদ্ধের বিস্তারিত চিত্র, কিছু জায়গায় চীন ও তার মিত্রদের বিষয়ে খবর এবং বিভিন্ন দেশ ও ব্যক্তির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারির তথ্য ছিল।

নথিতে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকে জবাবদিহির বিষয়টিতে ততটা গুরুত্ব দেননি।

আরও পড়ুন>> ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে’ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারি: ট্রাম্প

ওয়াশিংটন মনে করে, জাতিসংঘ মহাসচিব রাশিয়ার স্বার্থ দেখার চেষ্টা করেছেন। কৃষ্ণসাগর দিয়ে শস্য রপ্তানির বিষয়ে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যে চুক্তি হয়েছে, সে সম্পর্কিত তথ্য রয়েছে ফাঁস হওয়া নথিতে। সেখানে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ মহাসচিব চুক্তি সংরক্ষণে খুব আগ্রহী এবং তিনি রাশিয়ার দাবির প্রতি নমনীয়, যা রাশিয়াকে জবাবদিহির আওতায় আনার বৃহত্তর স্বার্থের পরিপন্থি।

গত ২৩ মার্চের একটি নথিতে দেখা যায়, ইউক্রেনের ভেতরে থেকে কাজ করছে পশ্চিমা বিশেষ বাহিনী। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কন্টিনজেন্ট রয়েছে যুক্তরাজ্যের, যার সদস্য প্রায় ৫০ জন। এছাড়া লাটভিয়ার ১৭, ফ্রান্সের ১৫, যুক্তরাষ্ট্রের ১৪ ও নেদারল্যান্ডের একজন সদস্য রয়েছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলাকেএএ/