মতামত

মার্কিন কংগ্রেসম্যানও দেখেছেন বাংলাদেশের অর্থনীতির চমক

 

স্বাধীনতা লাভের ৫০ বছর পর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির চমক নজর কেড়েছে মার্কিন কংগ্রেসম্যানকে। পাঁচ দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ব্যাপক প্রশংসা শোনা গেল যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যান জো উইলসনের সাম্প্রতিক বক্তৃতায়। সেখানকার প্রতিনিধি পরিষদে দেওয়া ভাষণে কংগ্রেসনাল বাংলাদেশ ককাসের কো-চেয়ারম্যান এবং স্পিকার উইলসন মন্তব্য করেন, গত ৫০ বছরে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচন, উন্নত স্বাস্থ্য ও শিক্ষা এবং নারীর ক্ষমতায়নসহ উল্লেখযোগ্য আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি দেখিয়েছে বাংলাদেশ। আর গত ৫০ বছরে দেশটির অভাবনীয় সাফল্য বিস্মিত করেছে জো উইলসনের মতো যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য রাজনীতিবিদ এবং অর্থনীতিবিদদেরও। গোটা দুনিয়াতেই বাংলাদেশের সাফল্য আজ গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের নতুন উদাহরণ গড়ে তুলেছে বিশ্বে। গোটা দুনিয়া তাই বাংলাদেশের এই সাফল্যের প্রশংসা করতে বাধ্য হয়েছে। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা প্রাপ্তির কিছুদিনের মধ্যেই পাশবিক হত্যাকাণ্ডের শিকারে হকবিহ্বল হয়ে যায় গোটা দেশ। স্বাধীনতার স্থপতি, জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে দেশের অগ্রগতি স্থবির করে দিতে চেয়েছিল ষড়যন্ত্রকারীরা। তারপর দীর্ঘ সামরিক শাসনও উন্নয়নের বড় বাধা হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশে।

স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি চিরকাল চেষ্টা করেছে লাল-সবুজের দেশটিকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করে নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা, দেশনেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দরিদ্রতম দেশগুলির তালিকা থেকে দ্রুত বেগে উন্নত অর্থনীতির দিকে ধাবমান হয়েছে বাংলাদেশ। তাই কংগ্রেসম্যান উইলসন বলেছেন, বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় দরিদ্রতম অর্থনৈতিক দেশ থেকে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনৈতিক দেশে পরিণত হয়েছে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের সরকার যে দেশকে সঠিক পথে চালিত করছে তা যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল রাজনীতিবিদরাও স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছেন। দেশের অর্থনীতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার দিকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন।

কোভিড পরিস্থিতিতে সারা বিশ্ব যখন টালমাটাল তখনও সেই ধকল নিজস্ব পদ্ধতিতেই মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্ব ও বিচক্ষণতায় তা সম্ভব হয়েছে। এই মহামারীর মধ্যেও বেড়েছে মাথাপিছু জাতীয় গড় আয়। বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু গড় আয় ছিল ২ হাজার ৪৫৭ মার্কিন ডলার। বর্তমান সেটি আরও বেড়েছে।

Advertisement

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশে মাথাপিছু গড় আয় ২ হাজার ৭৯৩ মার্কিন ডলার। এর থেকেই বোঝা যায় মানুষের আর্থিক প্রবৃদ্ধির হার অনেকটাই বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে ক্রয় ক্ষমতা ও জীবনযাপনের মান। আর এই সাফল্যেরই প্রশংসা করছেন যুক্তরাষ্ট্র-সহ অন্যান্য দেশের বিশিষ্টজনেরা। তাঁরা স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছেন, হেনরি কিসিঞ্জারের তলাবিহীন ঝুড়ি আজ গোটা দুনিয়াকে অর্থনৈতিক সাফল্যের নতুন পাঠ দিতে সক্ষম হয়েছে।

অথচ, দেশ স্বাধীনতার সময় পাকিস্তানের দীর্ঘ সময়ের শোষণের কারণে অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় ছিল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা। পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব বাঙালির অর্থনীতিকেও চিরতরে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল। বঙ্গবন্ধু সেই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের বেহাল অর্থনীতির হাল ফেরানোর চেষ্টা করলেও অকালে ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে প্রাণ দিতে হয় তাঁকে। তারপর দেশ দীর্ঘ সামরিক শাসনে অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতার দিকে ধাবিত হয়।

সেই অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার কালো মেঘ কাটিয়ে দেশকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে সক্ষম হন শেখ হাসিনা। প্রতিনিধি সভায় তাই কংগ্রেসম্যান উইলসন উল্লেখ করেছেন, ১৯৭১ সালের ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনীতি আজ ৪৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানের আর্থিক বিপর্যয়ের বিপরীতে বাংলাদেশের এই উত্থান তাই সকলকে বিস্মিত করে। প্রকৃত অর্থেই কোভিড দুর্যোগের সময়ও অর্থনীতিতে চমক দেখাতে সক্ষম হয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। মার্কিন কংগ্রেসম্যানের বক্তৃতাতেও সেই সাফল্যের স্বীকৃতি মিলেছে।

কৃষিপ্রধান যেকোনও দেশেরই অর্থনীতি অনেকটাই নির্ভর করে তার উৎপাদনশীলতার ওপর। আওয়ামী লীগ সরকারের বড় সাফল্য খাদ্যে স্বয়ম্ভরতা লাভ। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর আমলে কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বেড়েছে খাদ্য শস্যের উৎপাদন। ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে অনেকটাই সক্ষম হয়েছেন শেখ হাসিনা। ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন গোটা দুনিয়ার মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছে।

Advertisement

আলু উৎপাদনে বাংলাদেশের স্থান সপ্তম। অর্থকরী ফসলের মধ্যে পাট উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ। মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম স্থানে। এসবই সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার সুচিন্তিত পরিকল্পনা ও তার সঠিক বাস্তবায়নের ফলে। উইলসন নিজেও সেকথা স্বীকার করেছেন। প্রতিনিধি সভায় তাঁর সাফ কথা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশের খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে। আর তারজন্য তিনি শেখ হাসিনা সরকারের প্রশংসাও করেন।

শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নই নয়, বাংলাদেশ অন্যান্য সামাজিক ও গণতান্ত্রিক সূচকেও ব্যাপক উন্নতি করেছে। সফল গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজ করছে বাংলাদেশে। জঙ্গিবাদকে নির্মূল করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দেশে গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। ক্ষমতায় এসেই শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছিলেন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের কথা। সেইসঙ্গে প্রতিবেশী কোনও দেশেরই জঙ্গিবাদীদের বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে না দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছিলেন তিনি। সেই প্রতিশ্রুতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে তার সরকার। তাই বাংলাদেশে এখন ভয়মুক্ত পরিবেশে মানুষ বসবাস করতে পারছেন।

মার্কিন কংগ্রেসম্যান জো উইলসন বলেছেন, জঙ্গিবাদ দমন করে শেখ হাসিনা সরকার গণতন্ত্রের প্রতি জনগণের আস্থা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির মধ্যে রয়েছে এবং এর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শুধু তার নিজের জনগণকে উপকৃত করছে না, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধিতে অবদান রাখছে।’ তার মতে, ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় বিশ্বের অন্য কোনো দেশ এত বেশি শান্তিরক্ষী দেয়নি’।

 

যুক্তরাষ্ট্রের এই কংগ্রেসম্যানের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্রুতগতিতে সঠিক পথেই এগিয়ে চলেছে। শুধু অর্থনীতির সূচকেই নয়, জঙ্গিবাদ দমন এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাতেও সমান সাফল্য দেখাচ্ছে আওয়ামী লীগের সরকার। সেই সাফল্যের কারণেই পশ্চিমা দুনিয়াও বাংলাদেশের প্রশংসা করতে আজ বাধ্য হচ্ছে।

নারী ক্ষমতায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা, জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন থেকে শুরু করে একটি দেশের উন্নয়ন সূচকের প্রতিটি ক্ষেত্রে সাফল্যের চিহ্ন রেখেছে বাংলাদেশ। এই দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীকে কর্মক্ষম করে গড়ে তুলতে শিক্ষা ব্যবস্থায়ও আনা হয়েছে আমূল পরিবর্তন। নারী শিক্ষার জন্য বৃত্তি, প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত রাখতে পুষ্টিকর খাদ্য প্রদানের কর্মসূচি এবং সর্বোপরি কর্মমুখী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পেশাদার হিসেবে তরুণদের প্রতিষ্ঠার জন্য গ্রহণ করা হয়েছে অসংখ্য পদক্ষেপ।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা হিসেবে বাবার স্বপ্নকে লালন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একাধিকবার বক্তব্য প্রদানকালেও তিনি বলেছেন, ‘আমার পরিবারের সদস্যরা বেঁচে নেই। এ দেশের মানুষই আমার পরিবার’। নিজের সেই পরিবার, অর্থাৎ দেশের মানুষের নিরাপত্তা ও উন্নয়ন কার্যক্রম বলবত রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। তার হাত ধরেই মধ্যম আয়ের দেশের মান অর্জন করছে বাংলাদেশ। তার দেখানো পথেই একদিন বাংলাদেশ উন্নত দেশের কাতারে প্রবেশ করবে বলেই আশাবাদী আমরা।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

এইচআর/জিকেএস