জাতীয়

বাঙালি সংস্কৃতির শক্তি পহেলা বৈশাখ

বাংলা সাহিত্যের প্রাণপুরুষ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়- ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।/ এসো হে বৈশাখ, এসো, এসো।’ আজ বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন, আজ পহেলা বৈশাখ। সব ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে একাত্মতা প্রকাশ করে বাঙালি সংস্কৃতির শক্তি নতুন করে আবিষ্কার করা যায় এই দিনে। পহেলা বৈশাখ আমাদের সব সংকীর্ণতা পরিহার করে উদারনৈতিক জীবন ব্যবস্থা গড়তে উদ্বুদ্ধ করে। আমাদের মনের ভেতরের ক্লেদ, জীর্ণতা দূর করে নতুন উদ্যমে বাঁচার অনুপ্রেরণা দেয়।

Advertisement

আজকের সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে সূচনা ১৪৩০ বঙ্গাব্দের। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষ, সব বাঙালি সব সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে একই হৃদয়াবেগে একটি মোহনায় মিলিত হয়ে উদযাপন করে এই সর্বজনীন উৎসব। আজ বর্ণিল উৎসবে মাতবে দেশ। এ কারণে অনেকেই নতুন পোশাক কিনেছেন। এছাড়া খানাপিনা, গানবাদ্যসহ সব কিছুতে থাকবে বাঙালিয়ানার প্রাধান্য। দিনভর ঘোরাঘুরি, আড্ডা, আমন্ত্রণ ও তুমুল উচ্ছ্বাসে মেতে উঠবে সব বয়সী মানুষ। নারীরা পরবে লাল-সাদা শাড়ি, ছেলেদের পরনে থাকবে রংবেরঙের পাঞ্জাবি, ফতুয়াসহ বৈশাখের সাজসজ্জা। মা-বাবার সঙ্গে বেরিয়ে পড়বে শিশু-কিশোরের দল। রাজধানীতে আজ বসবে নানা সাংস্কৃতিক উৎসব। মানুষ দলবেঁধে তাতে অংশ নেবে।

ভোরের প্রথম আলো রাঙিয়ে দেবে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে। ‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হবে। মঙ্গল শোভাযাত্রা শাহবাগ মোড় হয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হবে। এর আগে সকাল ৭টায় রমনার বটমূলে বরাবরের মত ছয়ানট বর্ষবরণের আয়োজন করেছে। শুভ্রতার প্রত্যাশায় তাকে স্বাগত জানাতে মানুষ পথে নেমে আসবে। প্রভাতের প্রথম আলোয় সংগীত সমাবেশ আর মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে বরণ করে নতুন বছরকে।

বৈশাখ প্রকৃতিতে সব রঙ নিয়ে আসে। বৈশাখ মানেই রঙের মেলা। যদিও এ সময় প্রকৃতি খুব কঠোর থাকে, যার মাধ্যমে বৈশাখ আমাদের মধ্যে সুদৃঢ় এক শক্তি তৈরি করে দেয়। বৈশাখে প্রকৃতির বৈপরীত্য থাকে। একটি কোমল, আরেকটি রূঢ় রূপ। এটা ঠিক বাঙালিদের চরিত্রের মতো। সব মিলিয়ে বৈশাখ মানে আত্মআবিষ্কারের মাস।

Advertisement

এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়ে দেশবাসীকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বাংলা নববর্ষের তাৎপর্য এবং মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস ও ইউনেসকো কর্তৃক এটিকে ‘Intangible Cultural Heritage’-এ অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে এদিন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমির উদ্যোগে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে এবং দেশের সব জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে বৈশাখী শোভাযাত্রা আয়োজন করা হবে।

এছাড়া দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উদযাপন হবে নববর্ষ। অন্যদিকে সরকারি ও সেসরকারি টেলিভিশন ও বেতারগুলোতে বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। বাংলার ঘরে ঘরে চলবে বাহারি খাওয়ার আয়োজন। তবে এবার রমজান মাস হওয়ায় সকালে কোথাও পান্তা-ইলিশ খাওয়ার আয়োজন থাকছে না। দিনটি উপলক্ষে দেশব্যাপী নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

বাংলা নববর্ষের গোড়াপত্তনের খোঁজে ফিরে যেতে হবে অনেক অনেক আগে অবাংলা অধ্যুষিত এলাকায়। খ্রিষ্ট্রপূর্ব ৫৭ অব্দে প্রাচীন ভারতের রাজা বিক্রমাদিত্যের নামানুসারে হিন্দু বিক্রমী পঞ্জিকা প্রণয়ন করা হয়েছিল। এই পঞ্জি অনুসারে ভারতের পূর্বাঞ্চল, উত্তর পূর্বাঞ্চল ও নেপালের বিভিন্ন অংশে বসবাসরত গ্রামীণ বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে নিছক একটি ঋতু উৎসব হিসেবে প্রচলিত ছিলো পহেলা বৈশাখ। তবে তার আমেজ বাংলা পর্যন্ত পৌঁছাতে চলে এসেছিল ৫৯৩ খ্রিস্টাব্দ। সপ্তম শতকে বাংলা বর্ষের প্রমাণ সময়ে বেশ পরিবর্তন এনে বাংলার বুকে বাংলা দিনপঞ্জির উদ্ভব ঘটান বাংলার প্রথম স্বাধীন নৃপতি গৌড়েশ্বর মহারাজাধিরাজ শশাঙ্ক মহাদেব।

এইচএস/এমকেআর

Advertisement