তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে চুয়াডাঙ্গা। বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। এ নিয়ে টানা ১২দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হলো চুয়াডাঙ্গায়। এতে দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিশেষ করে বেশি বিপাকে পড়েছেন জেলার খেটে খাওয়া মানুষ।
Advertisement
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২ এপ্রিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৩৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা ছিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত টানা দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে এ জেলায়। ৩ এপ্রিল ৩৫.৫ ডিগ্রি, ৪ এপ্রিল ৩৭ ডিগ্রি, ৫ এপ্রিল ৩৭ ডিগ্রি, ৬ এপ্রিল ৩৭.৬ ডিগ্রি, ৭ এপ্রিল ৩৮ ডিগ্রি, ৮ এপ্রিল ৩৮.৫ ডিগ্রি, ৯ এপ্রিল ৩৯ ডিগ্রি, ১০ এপ্রিল ৩৯.২ ডিগ্রি, ১১ এপ্রিল ৩৯.৬ ডিগ্রি, ১২ এপ্রিল ৩৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল।
তীব্র গরম ও রোদের তাপের কারণে শ্রমিক, দিনমজুর, ভ্যান ও রিকশা চালকরা কাজ করতে না পেরে অলস সময় পার করছেন। একটু প্রশান্তির খোঁজে গাছের ছায়া ও ঠান্ডা পরিবেশে স্বস্তি খুঁজছে সব শ্রেণির মানুষ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তা-ঘাটে লোকজনের চলাচল সীমিত হয়ে পড়ে। আবার অনেকে জরুরি প্রয়োজন ও জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রচণ্ড দাবদাহ উপেক্ষা করে কাজে বের হচ্ছেন। অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন কেউ কেউ। জেলা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও বেড়েছে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী রোগীর সংখ্যা।
চুয়াডাঙ্গা সদরের কুলচারা গ্রামের শফিউল বলেন, এত তাপ সহ্য করা কঠিন। জমিতে বেশিক্ষণ কাজ করতে পারলাম না। এখন ছায়ায় বসে আছি। আজ কাজ শেষ করতে দেরি হবে। যে গরম পড়ছে, আর কাজ করতে পারবো কি-না জানি না।
Advertisement
একই গ্রামের তাপস দাস বলেন, ধানে এখন শিষ বের হয়েছে। কিন্তু প্রচণ্ড রোদে তা পুড়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন পানিও দেওয়া লাগছে। যেখানে আগে সপ্তাহে দুদিন পানি দিলেই চলত। এখন প্রতিদিন দিতে হচ্ছে। এরপরও কী হবে বলা যাচ্ছে না।
ব্যাটারিচালিত ভ্যানচালক কুদ্দুস আলী বলেন, ঈদের কেনাকাটা থাকলেও মানুষজন বাজারে আসছে না। তাই ভাড়াও হচ্ছে না। দুপুর হয়ে গেছে এখনো তেমন ভাড়া হয়নি। শুয়ে-বসে দিন কাটাচ্ছি। এভাবে চললে সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়বে।
চুয়াডাঙ্গা গুলশানপাড়ার বাসিন্দা গৃহিণী নারগিস আক্তার বলেন, এত তাপে ঘর থেকে বের হতে পারছি না। রান্না-বান্না করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। ইফতারির পরে রোদ আর তাপ কমলে চুলার পাড়ে যাবো।
চুয়াডাঙ্গা সদরের আমিরপুর গ্রামের আকাশ আলী বলেন, আজকে রোদের তেজের কারণে গরমে কাজ করতে পারছি না। গত কয়েকদিন যাবত প্রচন্ড গরম পড়লেও আজকে গরমে কাজ করা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করি। এমন কয়েকদিন হলে কাজে আসা সম্ভব না।
Advertisement
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সড়কের বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী এমদাদুল হক এমদাদ বলেন, মোটরসাইকেলযোগে বিভিন্নস্থানে মার্কেটিংয়ের কাজ করি। মোটরসাইকেল চালালে বাতাসে স্বস্তি লাগলেও আজ রোদের প্রখরতার কারণে মনে হচ্ছে গরম হাওয়ায় পুড়ে যাচ্ছে শরীর। রোজা রেখেছি। এ গরমে গলা-বুক যেন শুকিয়ে আসছে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ২ এপ্রিল থেকে আজ পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড হলো। আজ থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। আপাতত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। ফলে এ তাপমাত্রা আরও বাড়বে।
এসজে/জেআইএম