অবশেষে সাত বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো খোলা হয়েছে সৌদি আরবে অবস্থিত ইরান দূতাবাসের দরজা। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রত্যক্ষদর্শী এক সাংবাদিক জানান, বুধবার (১২ এপ্রিল) রিয়াদে ইরানি দূতাবাস প্রাঙ্গণের মূল ফটকটি খোলা ছিল ও সেসময় ইরানের একটি প্রতিনিধিদল ভবনটি পরিদর্শন করেন।
Advertisement
গত মাসে চীনের মধ্যস্থতায় হওয়া এক চুক্তির আওতায় সৌদি আরব ও ইরান পূনরায় নিজেদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে রাজি হয়। রয়টার্স বলছে, এ দুই দেশের মধ্যে চলে আসা দীর্ঘদিনের বৈরী সম্পর্ক মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সংঘাত সৃষ্টি করেছে। তাছাড়া পরস্পর বিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে প্ররোচিত করেছে।
আরও পড়ুন>> সৌদি-ইরানকে এক করলো চীন, পশ্চিমাদের মাথাব্যথা
এর আগে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বুধবার ইরানের একটি প্রতিনিধি দল সৌদি আরবে পৌঁছে। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই দেশটির কূটনৈতিক মিশনটির গেট খোলা হয়।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি বলেন, রিয়াদ ও জেদ্দায় দূতাবাস এবং কনস্যুলেট চালুর জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে আমাদের প্রতিনিধি দলটি।
এদিকে, সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তেহরান ও মাশহাদ শহরে পুনরায় রিয়াদের দূতাবাস ও কনস্যুলেট চালু করার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করতে সৌদি কর্মকর্তারাও ইরানে অবস্থান করছেন।
আরও পড়ুন>> যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে চীনের দিকে সৌদি আরব
১৯৭৯ সালে ইরানের পশ্চিমাবিরোধী ইসলামি বিপ্লব ও শিয়া ধর্মতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার পর থেকেই রিয়াদ-তেহরানের মধ্যে মতাদর্শগত ও সামরিক দ্বন্দ্ব চলে আসছিল।
Advertisement
২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের পর সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যকার দ্বন্দ্ব বা উত্তেজনা ছায়াযুদ্ধে রূপ নেয়। তখন থেকেই রিয়াদ ও তেহরান মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর পাশাপাশি বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালানো শুরু করে। তবে নানা কারণে ইরান এক্ষেত্রে খুব একটা সফল হতে পারেনি।
ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে সৌদি সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো সংঘাত পরবর্তী দেড় দশকে এ অঞ্চলের অধিকাংশ অংশকে কার্যত স্থবির করে দেয়। অন্যদিকে, ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত বিদ্রোহীদের দমন করতে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের সামরিক অভিযান শুরু করে, যা বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটগুলোর মধ্যে অন্যতম।
আরও পড়ুন>> রমজানজুড়ে ইরানের যত উৎসব ও আয়োজন
তাছাড়া, দুই দশকের দীর্ঘ এ রাজনৈতিক সংকটে সিরিয়া, ইয়েমেন, লেবানন ও অন্যান্য উপসাগরীয় দেশে বিশাল অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত সংকট সৃষ্টি করে।
২০১৬ সালে সৌদি আরব শিয়া ধর্মগুরু নিমর আল-নিমরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এর জেরে তেহরানের সৌদি দূতাবাসে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। তখন থেকেই দুই দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে।
তবে করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের ফলে সৌদি ও ইরানের কর্মকর্তারা অন্ধকার সে অধ্যায়টি পুনরায় চালু করতে আগ্রহী হন।
সূত্র: রয়টার্স
এসএএইচ