ধর্ম

নাজাতের দশকে রোজাদারের করণীয়

মহিমাময় মাস রমজান প্রায় শেষের দিকে। হাতেগোনা আর মাত্র ক’টা দিন বাকি। অবশিষ্ট এ দিনগুলোতে কীভাবে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে তোলা যায়, সেটাই হওয়া উচিত রোজাদার মুমিন মুসলমানের লক্ষ্য। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশকের রাতগুলোতে মহান আল্লাহর ইবাদতে নিজেকে সম্পূর্ণ সমর্পণ করতেন। হাদিসে এসেছে-

Advertisement

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন, ‘রমজানের শেষ দশকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবাদতের জন্য শক্ত করে কোমর বেঁধে নিতেন। সারা রাত ইবাদতের জন্য জাগ্রত থাকতেন। স্বীয় পরিবার-পরিজনকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিতেন।’ (বুখারি ২০২৪)

১. কোরআন তেলাওয়াত

কোরআন তেলাওয়াতের ধারাবাহিকতা বৃদ্ধি করা। পারিবারিক বা অন্য কোনো ব্যস্ততার কারণে যাদের তেলাওয়াতের সময় মিলে না, তারা নফল নামাজ কমিয়ে তেলাওয়াতে বেশি সময় দিতে পারে। রাতে কম ঘুমিয়ে সেহরির আগ পর্যন্ত কোরআন তেলাওয়াত করা যায়। সালাফদের অনেকেই রমজান এলে নফল নামাজের চেয়ে তেলাওয়াতেই বেশি সময় কাটাতেন। এমনকি অন্যান্য সব রকম দ্বীনি ব্যস্ততাও তারা ত্যাগ করে শুধু তেলাওয়াতে সময় দিতেন। শেষ দশদিনে ইমাম মালেক রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ইলমুল হাদিসের দরস থেকে অবসর গ্রহণ করে কোরআন তেলাওয়াতে বেশি সময় দিতেন। (লাতায়িফুল মাআরিফ ২০১)

Advertisement

বিখ্যাত ফকিহ ইবনু শিহাব জুহরি সম্পর্কে বর্ণিত আছে, রমজান এলে তিনি বলতেন, ‘এটা তো কোরআনের মাস এবং লোকজনকে আহার করানোর মাস।’ তিনি রাতদিন নিজেকে তেলাওয়াতে ব্যস্ত রাখতেন।

হজরত সুফিয়ান সাওরি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে বর্ণিত আছে, ‘রমজান এলে তিনি অন্যান্য সব নফল ইবাদত বাদ দিয়ে কোরআন তেলাওয়াতে মশগুল হতেন।’

উল্লেখ্য, নফল আমলের মধ্যে কোরআন তেলাওয়াত সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ। তাই যত বেশি সম্ভব, কোরআন তেলাওয়াতে নিজেকে ব্যস্ত রাখাটাই মহিমান্বিত এ মাসের শেষ দশকের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হওয়া চাই।

২.সালাতুত তাহাজ্জুদ

Advertisement

তাহাজ্জুদের নামাজে দীর্ঘ সময় ধরে নিজেকে মগ্ন রাখা। শেষ রাতে একটু দীর্ঘ সময় ধরে তাহাজ্জুদ পড়তে পারলে রমজানের শেষ দশকের দিনগুলোতে সওয়াবের ফসল ঘরে তুলতে বেগ পেতে হবে না। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ দশদিনের রাতগুলোকে বেশি বেশি তাহাজ্জুদ নামাজের দ্বারা সজ্জিত করতেন।

ইবনু রজব হাম্বলি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেষ দশকের তাহাজ্জুদ নামাজে ভিন্ন মাত্রা ও আবহ তৈরি হতো। তাহাজ্জুদে কোরআন তেলাওয়াতের সময় আজাব-সংশ্লিষ্ট আয়াত এলে তিনি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতেন। জান্নাতের বর্ণনা-সংক্রান্ত আয়াত এলে আল্লাহর কাছে তা তামান্না করতেন। বিস্ময়কর কোনো ঘটনা-সংক্রান্ত আয়াত এলে তাসবিহ পড়তেন। যেন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তাহাজ্জুদ, তেলাওয়াত, দোয়া এবং তাদাব্বুরে কোরআন একসঙ্গেই হতো।’ (লাতায়িফুল মাআরিফ)

৩. অধিক পরিমাণে দোয়া করা

বেশি বেশি দোয়া করা। সারা বছরের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ এ দিনগুলোতে সব প্রয়োজনের কথা মন খুলে মহান আল্লাহকে বলুন। আপনার সব দুশ্চিন্তার কথা আল্লাহকে বলুন। আপনার যাবতীয় গোনাহ থেকে আল্লাহর কাছে ইসতিগফার করুন। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া পৃথকভাবে ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। শায়খ সালিহ আল মুনাজ্জিদ বলেন, রমজানের শেষ দশকের এ দিনগুলিতে সবসময় নিজেকে দোয়াতে ব্যস্ত রাখাটাই হবে আমাদের জন্য বুদ্ধিমত্তার কাজ। বিশেষ করে, এ দোয়াগুলো যত বেশি সম্ভব পড়লে জীবনের মোড় পরিবর্তন হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। তাহলো-

১. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম- হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলে দিন, আমি যদি লাইলাতুল কদর কোন রাতে হবে তা জানতে পারি, তাতে আমি কী (দোয়া) পড়বো?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি বলবে-

اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

উচ্চারণ : 'আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)

২. ক্ষমা লাভে এ দোয়াগুলোও বেশি বেশি পড়া-

رَبَّنَا اكْشِفْ عَنَّا الْعَذَابَ إِنَّا مُؤْمِنُونَ

উচ্চারণ : 'রাব্বানাকশিফ আন্নাল আজাবা ইন্না মুমিনুন।'

অর্থ : 'হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের উপর থেকে আপনার শাস্তি প্রত্যাহার করুন, আমরা বিশ্বাস স্থাপন করছি।' (সুরা দুখান : আয়াত ১২)

৩. رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ

উচ্চারণ : 'রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন।'

অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! (আমাকে) ক্ষমা করুন এবং (আমার উপর) রহম করুন; আপনিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ রহমকারী।' (সুরা মুমিনুন : আয়াত ১১৮)

৪. رَبَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ

উচ্চারণ : 'রাব্বানা আমান্না ফাগফিরলানা ওয়ারহামনা ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন।'

অর্থ : 'হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। অতএব তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর ও আমাদের প্রতি রহম কর। তুমি তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু।' (সুরা মুমিনুন : আয়াত ১০৯)

৫. رَبِّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ فَاغْفِرْ لِيْ

উচ্চারণ : 'রাব্বি ইন্নি জ্বালামতু নাফসি ফাগফিরলি।'

অর্থ : '(হে আমার) প্রভু! নিশ্চয়ই আমি নিজের উপর জুলুম করে ফেলেছি, অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।' (সুরা কাসাস : আয়াত ১৬)

৬. رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

উচ্চারণ : 'রাব্বানা ইন্নানা আমান্না ফাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া ক্বিনা আজাবান নার।'

অর্থ : হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং তুমি আমাদের গোনাহ ক্ষমা করে দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা কর।' (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৬)

৭. رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ

উচ্চারণ : 'রাব্বানা জ্বালামনা আংফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন।'

অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! আমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি দয়া না করেন, তবে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবো।' (সুরা আরাফ : আয়াত ২৩)

৮. رَبَّنَا اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابُ

উচ্চারণ : 'রাব্বানাগফিরলি ওয়া লিওয়ালিদাইয়্যা ওয়া লিলমুমিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।'

অর্থ : হে আমাদের প্রভু! যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন তুমি আমাকে, আমার বাবা-মাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা কর।' (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪১)

৯. سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيْرُ

উচ্চারণ : 'সামিনা ওয়া আত্বানা গুফরানাকা রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাছির।'

অর্থ : ‘আমরা (আপনার বিধান) শুনলাম এবং মেনে নিলাম। হে আমাদের রব! আমাদের ক্ষমা করুন। আপনার দিকেই তো (আমাদের) ফিরে যেতে হবে।’ (সুরা আল-বাকারাহ : আয়াত ২৮৫)

১০. رَبَّنَا وَلاَ تُحَمِّلْنَا مَا لاَ طَاقَةَ لَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنتَ مَوْلاَنَا

উচ্চারণ : 'ওয়াফু আন্না ওয়াগফিরলানা ওয়ারহামনা আংতা মাওলানা ফাংছুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিন।'

অর্থ : 'হে আমাদের রব! যে বোঝা বহন করার সাধ্য আমাদের নেই, সে বোঝা আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়ো না। আমাদের পাপ মোচন করুন। আমাদের ক্ষমা করুন এবং আমাদের প্রতি দয়া করুন। তুমিই আমাদের প্রভু।' (সুরা বাকারাহ : আয়াত ২৮৬)

১১. رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِيْنَ سَبَقُوْنَا بِالْإِيْمَانِ

উচ্চারণ : 'রাব্বানাগফিরলানা ওয়ালি ইখওয়ানিনাল্লাজিনা সাবাকুনা বিল ঈমানি।'

অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের ক্ষমা করুন এবং যারা আমাদের আগে যারা ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে, তাদেরকেও ক্ষমা করুন।' (সুরা হাশর : আয়াত ১০)

১২. رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِيْ أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ

উচ্চারণ : 'রাব্বানাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া ইসরাফানা ফি আমরিনা ওয়া ছাব্বিত আক্বদামানা ওয়াংছুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিন।'

অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিন। আমাদের কাজের মধ্যে যেখানে তোমার সীমালঙ্ঘন হয়েছে, তা মাফ করে দিন। আমাদের কদমকে অবিচল রাখুন এবং অবিশ্বাসীদের মোকাবেলায় আমাদের সাহায্য করুন।' (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৪৭)

১৩. رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ

উচ্চারণ : 'রাব্বানা ফাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া কাফফির আন্না সায়্যিআতিনা ওয়া তাওয়াফফানা মাআল আবরার।'

অর্থ : 'হে আমাদের প্রভু! সুতরাং আমাদের গোনাহগুলো ক্ষম করুন। আমাদের ভুলগুলো দূর করে দিন এবং সৎকর্মশীল লোকদের সাথে আমাদের শেষ পরিণতি দান করুন।' (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৯৩)

১৪. রহমত লাভে এ দোয়াগুলো পড়া-

اَللَّهُمَّ اِنِّى اَسْئَلُكَ الْهُدَى وَ التُّقَى وَ الْعَفَافَ وَالْغِنَى

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা ওয়াত্তুক্বা ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে হেদায়েত (পরিশুদ্ধ জীবন) কামনা করি এবং আপনার ভয় তথা পরহেজগারি কামনা করি এবং আপনার কাছে সুস্থতা তথা নৈতিক পবিত্রতা কামনা করি এবং সম্পদ-সামর্থ্য (আর্থিক স্বচ্ছলতা) কামনা করি।

১৫. رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

উচ্চারণ : 'রাব্বানা আতিনা ফিদদুনইয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়া ক্বিনা আজাবান নার।' (সুরা বাকারা : আয়াত ২০১‌)

অর্থ : 'হে পরওয়ারদেগার! আমাদিগকে দুনয়াতেও কল্যাণ দান কর এবং আখেরাতেও কল্যাণ দান কর এবং আমাদিগকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা কর।'

১৬. رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِّلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ

উচ্চারণ : 'রাব্বানাগফিরলানা ওয়া লি ইখওয়ানিনাল্লাজিনা সাবাকুনা বিল ঈমানি ওয়া লা তাঝআল ফি কুলুবিনা গিল্লাল লিল্লাজিনা আমানু রাব্বানা ইন্নাকা রাউফুর রাহিম।' (সুরা হাশর : আয়াত ১০)

অর্থ : 'হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে এবং ঈমানে আগ্রহী আমাদের ভ্রাতাগণকে ক্ষমা কর এবং ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রেখো না। হে আমাদের পালনকর্তা, আপনি দয়ালু, পরম করুণাময়।'

১৭. رَبِّ بِمَا أَنْعَمْتَ عَلَيَّ فَلَنْ أَكُونَ ظَهِيرًا لِّلْمُجْرِمِينَ

উচ্চারণ : রাব্বি বিমা আনআমতা আলাইয়্যা ফালান আকুনা জ্বাহিরাল লিলমুঝরিমিন।’

অর্থ : ‘হে আমার পালনকর্তা! আপনি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন, এরপর আমি কখনও অপরাধীদের সাহায্যকারী হব না।’ (সুরা কাসাস : আয়াত ১৭)

১৮. বাবা-মার জন্য দোয়া করা-

رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا

উচ্চারণ : 'রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগিরা'

অর্থ : 'হে আমার প্রভু! তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমনিভাবে তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।' (সুরা বনি ইসরাঈল : আয়াত ২৪)

৪. মানুষকে সহায়তা করা

সদকার আমল করা। এটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ কাজ। যা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান এলে অতিমাত্রায় দান-সাদকা করতেন। হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, ‘নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবচেয়ে সাহসী এবং সর্বোত্তম দানশীল ছিলেন। রমজান এলে তার এ দানের মাত্রা আরও বেড়ে যেত।’ (বুখারি ১০৩৩)

৫. পরনিন্দা-চোগলখোরী থেকে নিবৃত্ত থাকা

রমজানের শেষ দশ দিনে বেশি বেশি ইবাদত করলে যেমন অধিক সওয়াব লাভ হয়, তেমনি যথাসম্ভব মানুষের গীবত বা পরনিন্দা করা থেকে নিজেকে বিরত রাখাটাও অধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কারণ, পরনিন্দা করার অভ্যাস ত্যাগ করতে না পারলে আল্লাহর কাছে শেষ দশকের এ তাৎপর্যময় দিনগুলোতে অন্যান্য যাবতীয় ইবাদাতের কোনো মূল্য নেই। এই কাজ এত বেশি জঘন্য যে, কোরআনে কারিমে গিবতের অভ্যাসকে আপন মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধারণা থেকে দূরে থাক। কারণ, কোনো কোনো অনুমান পাপ। তোমরা একে অন্যের গোপনীয় বিষয় সন্ধান কোরো না এবং একে অন্যের গীবত কোরো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে চাইবে (?)। বস্তুত তোমরা তো একে ঘৃণা করো। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু।’ (সুরা হুজরাত : ১২)

এমএমএস/জেআইএম