নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন অনন্য। তিনি ছিলেন একজন সিভিল সোসাইটির মানুষ, যিনি দল করতেন না। একজন ব্যক্তি যিনি সমাজ পরিবর্তনের লড়াইয়ের মাধ্যমে ভূমিকা রাখতে পারেন, এমন উদাহরণ বাংলাদেশ তো বটেই পৃথিবীর কোনো দেশেই নেই।
Advertisement
তিনি বলেন, প্রতিপক্ষ মনে কষ্ট পেতে পারে এমন কোনো কথা তিনি বলেননি কখনো। বরং শেষ পর্যন্ত তাকে মাছ চুরির মামলা দিয়েছে এবং করোনার কিটের অনুমোদন তো তাকে দিলই না।
বুধবার (১২ এপ্রিল) রাজধানীর ধানমন্ডিতে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের মেজর হায়দার মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন শেষে এসব কথা বলেন তিনি। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যু পরবর্তী সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, কিছু কিছু চরিত্র গড়ে ওঠে ঐতিহাসিকভাবে, যার তুলনা করা খুব মুশকিল। কবি বলেন আর রাজনৈতিক ব্যক্তি বলেন, একজনের সঙ্গে আরেকজনের তুলনা করা যায়। কিন্তু জফরুল্লাহ চৌধুরী একজন অনন্য মানুষ ছিলেন। তার যেসব গুণাবলি তা খুবই সাধারণ। কিন্তু সেটাই অসাধারণ হয়ে ওঠে। কারণ সাধারণের মধ্যে এটা পাওয়া যায় না, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মধ্যে যা আছে।
Advertisement
তিনি বলেন, আমি মনে করি জাফরুল্লাহ চৌধুরীর দেশপ্রেম ছিল অনেক বেশি। সেই যে লন্ডন থেকে চলে এলেন- মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিলেন, সে সময় তার কোনো কিছু পাবার আকাঙ্ক্ষা ছিল না। একটা ফিল্ড হসপিটাল করবেন মুক্তিযুদ্ধে এমন চিন্তা করে তিনি দেশে আসেন। সে সময় এ ধরনের চিন্তা কারোরই ছিল না। উনি সেটা ভেবেছেন এবং বাস্তবায়ন করেছেন। এটার জন্য তিনি আলাদা করে কোনো সাপোর্ট পাননি, আলাদা করে কোনো কৃতিত্ব পাননি। এমনকি স্বাধীনতার পরেও পাননি।
মান্না বলেন, সবাই মনে করেন বিলেত ফেরত একজন ডাক্তার টাকা-পয়সা কামাবেন, নামটাম কামাবেন, প্র্যাকটিস করবেন এবং বড় কিছু করবেন। তবে এমন কিছুই জাফরুল্লাহ চৌধুরী করেননি। উনি গণস্বাস্থ্য নিয়েই ছিলেন। গণস্বাস্থ্য এই টাইপের বা মডেলের হসপিটাল পৃথিবীর বহু জায়গায় রয়েছে। আমাদের দেশের অনেকেও এই টাইপের করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু উনি এটাকে অনন্য করে তুলেছেন।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই মানুষটা ৮১ বছর বয়সে মারা গেছেন। এই সময়ের মধ্যে ব্যক্তিগত পাওয়ার কোনো চেষ্টা করেননি তিনি। অসাধারণ ভালো সংগঠক ছিলেন। এক সময় ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি করতেন। পরবর্তীতে রাজনীতি করেননি। এমপি-মন্ত্রী হবার জন্য কোনো লবিংই তিনি করেননি। তিনি পরচর্চা করতেন না, অন্য মানুষের বদনাম করতেন না। এমনকি বর্তমান সরকারের তিনি একজন কড়া সমালোচক ছিলেন। প্রতিপক্ষ মনে কষ্ট পেতে পারে এমন কোনো কথা তিনি বলেননি কখনো। বরং শেষ পর্যন্ত তাকে মাছ চুরির মামলা দিয়েছে এবং করোনার কিটের অনুমোদন তো তাকে দিলই না।
তিনি আরও বলেন, একটা কথা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রতিনিয়তই বলতেন, এদেশে সহজলভ্যের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। এখানে ওষুধ খুব সুলভ করা যায়। পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও ভালো ব্যবসা করতে পারবেন। ওষুধের দামের বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বাদ দিয়ে তার আগের কথা বলছি, ওষুধের যেই দাম আছে তার অর্ধেক দামে বিক্রি করা সম্ভব। মাঝেমধ্যেই তিনি আমাদের এমন সব কথা বলতেন।
Advertisement
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন জাফরুল্লাহ ভাই প্রতিনিয়ত লড়াই করেছেন। কখনোই ভাবেন নাই যে সরকারের সঙ্গে একটা সম্পর্ক করে আমি ভালো জায়গায় থাকি। চাইলেই তিনি পারতেন। যেটা অনেক বুদ্ধিজীবী এবং তার পেশার লোক ডাক্তারদের মধ্যে দেখা গেছে। সেখানে তিনি একটা মডেল। আমাদের কাছে উনি মডেল কারণ উনি কোনো কিছুই চাইতেন না, যতই পারতেন দিতেন একটা গতিশীল আন্দোলন করার জন্য। যেমন উনি আমাকে বহুদিন বলেছেন, আমি তোমাদের ক্ষমতায় দেখতে চাই, কারণ আমি তো ক্ষমতায় যাব না। আমি যেই সমাজের স্বপ্ন দেখি সেটা তোমাদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যাবে। যে কথাই বলেন, সবাইকে নিয়ে থাকার মতো একটা সমাজ গড়বার চিন্তা তার (জাফরুল্লাহ) মধ্যে সবসময় কাজ করতো।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বন্ধু বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলতাফ আজিজ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি নাজিম উদ্দিন, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আবুল হোসেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বোন আলেয়া চৌধুরী, গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর প্রমুখ।
আরএসএম/কেএসআর/জেআইএম