খেলাধুলা

যে চিঠিতে দূরত্ব তৈরি মন্ত্রণালয় ও বাফুফের

 

জাতীয় নারী ফুটবল দলের অলিম্পিক বাছাই খেলতে মিয়ানমারও যাওয়া নিয়ে একটি চিঠি দূরত্ব তৈরি করে দিয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের মধ্যে। দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয় সাবিনা-কৃষ্ণাদের মিয়ানমার না পাঠানোর সিদ্ধান্ত।

Advertisement

বিষয়টি এতটাই তালগোল পাকিয়েছে যে, মেয়েদের ফুটবল ইস্যুতে বাগযুদ্ধ লেগে গেছে বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের মধ্যে। এর মধ্যে জড়িয়ে গেছেন স্বয়ং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেলও।

‘অর্থ পাওয়া যায়নি’- বলে মেয়েদের মিয়ানমার না পাঠানোর সিদ্ধান্ত- এমন ঘোষণা গণমাধ্যমে পাঠিয়েছিলেন বাফুফের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু নাইম সোহাগ। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘মেয়েদের মিয়ানমার পাঠানোর জন্য অর্থ চাওয়া হয়েছিল ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে। পজিটিভ ফিডব্যাক না পাওয়ায় বাফুফে দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বাফুফের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য ভালোভাবে নেননি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি। প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন,'তারা খেলা থেকে পিছিয়ে গেলেন এবং তার দোষারোপ করা হলো সরকারকে, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে। আমি মনে করি, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হয়নি। এটা ধৃষ্টতামূলক কথা হয়েছে। কথাটি আবার বলেছেন একজন কর্মকর্তা, যিনি চাকরি করেন।'

Advertisement

জাতীয় দলকে না পাঠানোর মতো সিদ্ধান্তের ঘোষণা কি বাফুফের সাধারণ সম্পাদক দিতে পারেন? এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো. আবু নাইম সোহাগ বলেন, 'বাফুফের ফিফা অনুমোদিত যে গঠনতন্ত্র সেখানে পরিষ্কার উল্লেখ আছে- বাফুফেকে প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষমতা শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের আছে।'

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে পাঠানো চিঠি নিয়েও তৈরি হয়েছে নানা বিভ্রান্তি। ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ‘টাকা চেয়ে ২৭ মার্চ চিঠি দিয়ে বাফুফে ২৯ মার্চ দল না পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। টাকা পেতে হলেও তো একটা প্রক্রিয়া আছে, সময়ের প্রয়োজন আছে।’

তবে বাফুফে সাধারণ সম্পাদকের দাবি, তারা যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রীকে প্রথম চিঠি দিয়েছিল ২৩ মার্চ রাতে। এরপর সংশোধিত বাজেটের চিঠি বাফুফে ২৫ মার্চ দেয় মন্ত্রণালয়কে। দুই দিন পর বাজেট নিয়ে আবার যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে যান বাফুফের সাধারণ সম্পাদক।

৩১ মার্চের মধ্যে অর্থ পাওয়ার নিশ্চিয়তা চেয়েছিল বাফুফে। তাহলে তার দুই দিন আগেই কেন দল না পাঠানোর ঘোষণা? জানতে চাইলে বাফুফে সাধারণ সম্পাদক বলেন' যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়ের সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়। যেহেতু আমরা কোনো পজিটিভ ফিডব্যাক পাইনি, তাই বাফুফে থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে দলটি যাচ্ছে না।'

Advertisement

প্রশ্ন উঠেছে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো বাফুফের বাজেট নিয়েও। ২৩ মার্চ পাঠানো প্রথমে চিঠিতে বাফুফে থেকে চাওয়া হয়েছিল ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। সেই বাজেট সংশোধন করে ২৫ মার্চ চাওয়া হয়েছিল ৯২ লাখ টাকা। সেখানে প্রতিজনের বিমান টিকিটের মুল্য ধরা হয়েছিল ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। তা নিয়ে উঠেছে বড় প্রশ্ন।

জানা গেছে, মিয়ানমার যাওয়া-আসার টিকিট ৭৫ হাজার টাকায় পাওয়া যায়। তাহলে কেন প্রতি টিকিটে ৫০ হাজার টাকা করে বেশি ধরা হয়েছিল? এমন প্রশ্ন করা হলে বাফুফে সাধারণ সম্পাদক বলেন,'কথা উঠেছে কেন আমরা বিমান টিকিটি ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা করে চেয়েছিলাম? অবশ্যই ৭৫ হাজার টাকায় টিকিট পাওয়া যেতো। কিন্তু সেই এয়ারলাইন্সে মেয়েদের পাঠাতে চাইনি। কারণ, ৭৫ হাজার টাকার টিকিটে ট্র্যানজিট ১৩ ঘণ্টা। যেটা আমাদের কোচিং স্টাফ ও টেকনিক্যাল বিভাগে কোনোভাবেই অনুমতি দেয়নি।'

বাফুফের নিজস্ব বাস আছে। তারপওর বাজেটে মেয়েদের বিমানবন্দরে পাঠানোর বাজেট ধরা হয়েছিল ২৫ হাজার টাকা। এর যুক্তি হিসেবে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, 'আমাদের যে বাসটি আছে সেটা ননএসি। আমরা যদি ওই বাসে করে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের বিমানবন্দরে পাঠাতাম তাহলে তো আপনারই আমাদের ধুয়ে দিতেন। আমরাতো নন এসি বাসে মেয়েদের বিমানবন্দরে পাঠাতে পারি না। তাই দলের যাওয়া ও আসার জন্য ২৫ হাজার টাকা ধরা হয়েছিল। '

পুরো বাজেট নিয়ে বাফুফে সাধারণ সম্পাদক মো. আবু নাইম সোহাগ বলেছেন, 'আমরা যে বাজেট দিয়েছিলাম সেটা সম্পূর্ণ যৌক্তিক। সেখানে অতিরঞ্জিত কিছু ছিল না। তবে এটা ঠিক, যদি এই বাজেট নিয়ে আমাদের সঙ্গে বসা হতো তখন কিছু জায়গায় কাঁটসাঁট তো করাই যেতো। এই যেমন আমরা ৫০টি বল চেয়েছিলাম, সেটা তো কমানো যেতো আলোচনা করে। কিন্তু নেই আলোচনারও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। মেয়েদের পকেট অ্যালাউন্স ধরা হয়েছিল ২০০ মার্কিন ডলার করে। তবে এটা পুরো সফরের জন্য, প্রতিদিনের জন্য নয়। ১০ দিনের সফরে একজন খেলোয়াড় ২০০ ডলার পাবে না? মেয়েদের জার্সি, মোজাসহ অন্যান্য সামগ্রীর বাজেট নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। আসলে কোনো কিছুই প্রয়োজনের বাইরে চাওয়া হয়নি। একটি সফরের জন্য খেলোয়াড়দের যা যা প্রয়োজন তাই চাওয়া হয়েছিল।'

এদিকে মিয়ানমারে জাতীয় নারী ফুটবল দল না পাঠানোর সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া পরিস্থিতি নিয়ে আজ (বুধবার) বিকেলে জরুরি সভায় বসছে বাফুফে। সেখানে জাতীয় নারী দলকে মিয়ানমার না পাঠানোর বিষয়টি প্রধান আলোচনায় রাখা হয়েছে। এ ছাড়া এ মাসেই নারী অনূর্ধ্ব-১৭ দলের সিঙ্গাপুর সফর নিয়েও আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। কাজী মো. সালাউদ্দিনের সভাপতিত্বে এই জরুরি সভা শুরু হবে বিকেল ৪ টায়।

আরআই/আইএইচএস/