রাজনৈতিক দলগুলোতে পদবঞ্চিত নেতারা বিভিন্ন সময়েই বিক্ষোভ দেখান, ক্ষেত্রবিশেষ সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন। আর্জিটা এমন থাকে যেন ‘দলের কাঙ্ক্ষিত পদটি না পেলে রাজনীতির সলিল সমাধি ঘটবে।’ অথচ এসব চিন্তার বিরুদ্ধে রাজনীতিতে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তৈরি করে গেলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
Advertisement
মহান মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে মেহনতি মানুষের জন্য সবসময় কাজ করার চেষ্টা করেছেন ডা. জাফরুল্লাহ। জনগণের জন্য কাজ করতে গিয়ে দেশের বহু রাজনৈতিক দল এবং প্রত্যেক সরকারের সঙ্গে সখ্যতা বজায় রেখেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে তিনি রাজনীতিতে সোচ্চার থাকলেও কোনো দলীয় পদ-পদবি ছিল না তার।
আরও পড়ুন>> ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মারা গেছেন
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পরিবর্তনে ভূমিকা থাকলেও সরকারের অংশ কখনো হননি ডা. জাফরুল্লাহ। স্বাধীনচেতা প্রতিবাদী মানুষ হিসেবেই তিনি সর্বাধিক পরিচিত। সাধারণ মানুষের স্বার্থে কথা বলতে গিয়ে তিনি কখনো সরকারের সমালোচনা করেছেন, আবার কখনো সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। একই আচরণ বিরোধীদলের প্রতিও ছিল তার।
Advertisement
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক জোটে যুক্ত হন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বিএনপি, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে তৎকালীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে থাকলেও ব্যক্তি হিসেবে সেখানে ছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), গণঅধিকার পরিষদের মতো রাজনৈতিক দল গঠনে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ভূমিকা থাকলেও তিনি এসব দলের কোনো পদ-পদবি গ্রহণ করেননি। তবে ভাসানী অনুসারী পরিষদের সহ-সভাপতি এবং পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে ওই সময় ভাসানী পরিষদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ছিল না। তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর কর্মকাণ্ড মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া।
জনমনে ধারণা, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিশেষ কোনো একটি দলের প্রতি দুর্বলতা ছিল। বাস্তবতা হচ্ছে, তিনি বঙ্গবন্ধুর সরকার, জিয়াউর রহমানের সরকার, হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের সরকার বা পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ-বিএনপি যে দলই সরকার গঠন করেছে প্রত্যেক সরকার এবং বহু রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সুসম্পর্ক স্পষ্ট ছিল।
আরও পড়ুন>> নিভৃতচারী দেশপ্রেমিকের নীরব প্রস্থান
Advertisement
এমন বর্ণাঢ্য জীবনের ইতি টেনে সবকিছুর ঊর্ধ্বে চলে গেছেন দেশের মানুষকে নিয়ে ভাবনায় ডুবে থাকা এ মানুষটি। মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) রাত ১১টায় মারা যান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
রাতেই প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এবিএম আবদুল্লাহ তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী গুরুতর অসুস্থ হয়ে রাজধানীর ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ৮১ বছর বয়সী জাফরুল্লাহ চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে কিডনিসহ নানা রোগেও ভুগছিলেন।
কেএইচ/ইএ/এএসএম