দেশজুড়ে

যেসব কারণে ভোগান্তির হতে পারে ঈদযাত্রা

বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। এই মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে ১৫-২০ হাজারেরও বেশি ছোট-বড় যানবাহন। ঈদে এই যানবাহনের চাপ বাড়ে আরও কয়েকগুণ। ফলে সৃষ্টি হয় যানজট। এবারের ঈদেও প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে গ্রামে ছুটবে মানুষ। ফলে যানবাহনের চাপ বাড়বে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। তাই কিছু পদক্ষেপ নিলেই ঈদযাত্রা স্বস্তির হবে বলে ধারণা পরিবহন সংশ্লিষ্টদের।

Advertisement

সোমবার (১০ এপ্রিল) ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশের সাইনবোর্ড থেকে মেঘনাঘাট টোলপ্লাজা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়কটির বিভিন্ন পয়েন্টে নানা উন্নয়ন কাজ চলমান। এছাড়া রয়েছে ছোট-বড় সাতটি সিগন্যাল। এর মধ্যে মদনপুর চৌরাস্তা, মোগরাপাড়া চৌরাস্তা ও মেঘনা টোল প্লাজায় তিনটি বড় সিগন্যাল রয়েছে। এসব সিগন্যালে পড়ে দীর্ঘক্ষণ এখনই মানুষকে গাড়িতে বসে থাকতে হয়। এছাড়াও মেঘনা ও গোমতী সেতুতে টোল আদায়ে বিলম্ব এবং মহাসড়কে যানবাহন বিকল যানজটের অন্যতম বড় কারণ হতে পারে। যেসব কারণে ঈদযাত্রায় যাত্রীরা ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন।

আরও পড়ুন- ঈদযাত্রায় ভোগান্তি কমাতে প্রস্তুত পুলিশ

এদিকে ঈদ সামনে রেখে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল অংশে যানজট নিরসনের জন্য সড়ক বিভাজকের কাজ চলমান। পাশাপাশি মহাসড়কটির বিভিন্ন পয়েন্টে ফুটওভার ব্রিজ ও ইউটার্ন নির্মাণ কাজও চলমান। এসব কাজের কারণে এখনই যাত্রী ও চালকদের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।

Advertisement

অন্যদিকে শিমরাইল অংশে ডিভাইডারের কারণে চট্টগ্রামমুখী যাত্রী ওঠানামার লেনটি সরু হওয়ায় বর্তমানে এখানে যানজট লেগেই থাকছে।

বাসচালকদের দাবি, শিমরাইল মোড়, মদনপুর চৌরাস্তা ও মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় লোকাল বাসস্ট্যান্ড রয়েছে। এখানে যাত্রী ওঠানামা করার কারণে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। এ দুটি স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে যানজট থাকবে না। পাশাপাশি মহাসড়কটি ঘিরে শিমরাইল মোড় এবং মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় হকারদের কারণে যানবাহনগুলো চলাচল করতে বাধার সম্মুখীন হয়।

অপরদিকে মেঘনা টোল প্লাজায় সব টোল বুথ চালু রাখতে পারলে যানজট থাকবে না বলে মনে করেন তারা। এছাড়া ছোট ছোট যানবাহন সিএনজি, অটোরিকশা, ভ্যান মহাসড়কে চলাচল করতে না দিলেই হয়তো যানজট দূর হতে পারে।

আরও পড়ুন- ভোগান্তি কমাবে ‘হাতের মুঠোয় টিসিবি পণ্য’ অ্যাপ

Advertisement

এ ব্যাপারে কাঁচপুর হাইওয়ে থানার শিমরাইল ক্যাম্পের টিআই একেএম শরফুদ্দিন জানান, এ মহাসড়কটি বাংলাদেশের অন্যতম ব্যস্ততম মহাসড়ক। বর্তমানে সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে শিমরাইল এলাকায় ৩৪ জন পুলিশ সদস্য যানজট নিরসনের কাজ করছেন। ঈদ কেন্দ্র করে পুলিশ সদস্যের সংখ্যাও বাড়ানো হয়।

তিনি আরও জানান, ঈদ কেন্দ্র করে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়ে। আবার শিমরাইল অংশের চট্টগ্রামমুখী লেনে একাধিক সড়ক বিভাজক দেওয়ার কারণে মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ শিমরাইল মোড় অংশটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অন্যতম প্রধান বাসস্ট্যান্ড। এই স্থানটিতে অধিকাংশ যানবাহন যাত্রী ওঠানামা করে। তবে যানজট নিরসনে আমরা সবসময় মহাসড়কে প্রস্তুত থাকবো।

কাঁচপুর হাইওয়ে থানার টিআই (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) মো. ইব্রাহিম জানান, যানজট নিরসনে আমাদের হাইওয়ে টিম পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখবে। ঈদের আগ মুহূর্তে মহাসড়কে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি মোবাইল টিম, হোন্ডা টিম, অ্যাম্বুলেন্স টিম থাকবে। এছাড়া মহাসড়কে যেকোনো যানবাহন বিকল হয়ে গেলে কিংবা কোন সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে তা দ্রুত সরানোর জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড় এবং মদনপুর অংশে দুটি রেকার রাখা হবে। পাশাপাশি মেঘনাঘাট টোলপ্লাজা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। ঈদ কেন্দ্র করে টোলপ্লাজার প্রত্যেকটি বুথ সবসময় যেন সচল থাকে সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন- দুর্দিনেও আঁকড়ে আছে রূপগঞ্জের কিছু পরিবার

গত বছরের মতো মহাসড়কের অবৈধ সব ইউটার্নগুলো বন্ধ করা হবে কি না এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মদনপুর অংশটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। এই পয়েন্টে সবচেয়ে বেশি পুলিশ মোতায়েন থাকবে। আশা করছি, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর ঈদযাত্রা স্বাভাবিক হবে। আমরা ঘরমুখো মানুষের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করবো। নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস জানান, মহাসড়কে সড়ক বিভাজকগুলো করা হয়েছে যেন কোনো যানজট সৃষ্টি না হয়। এই সড়ক বিভাজকগুলোর কারণে কিছু যানবাহন এখন একলেনে যাত্রী ওঠানামা করাতে পারবে এবং আরেক লেন দিয়ে যানবাহন সহজেই কাঁচপুর ব্রিজের দিকে চলে যেতে পারবে। আমরা চেষ্টা করছি ঈদে যানবাহনের বাড়তি চাপ সৃষ্টির আগেই কাজ শেষ করার। পাশাপাশি টার্গেট থাকবে চলমান ফুটওভার ব্রিজ এবং ইউটার্ন নির্মাণের কাজগুলো এমনভাবে করার যেন মহাসড়কে কোনোরকম যানজট সৃষ্টি করতে না পারে।

এফএ/এমএস