দেশজুড়ে

রমজানে ১৫-১৬ লাখ টাকার জিলাপি বিক্রি হয় জাকির হোসেনের

জেলা শহরে কাজে এসেছিলেন সুজন মিয়া। কাজের ফাঁকে দুপুরের দিকেই ঘি দিয়ে ভাজা টক-মিষ্টি জিলাপি কিনলেন তিনি। ইফতারতো সন্ধ্যায়, দুপুরে কেন এই জিলাপি কিনতে আসলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, জেলাজুড়েই এই জিলাপির অনেক জনপ্রিয়তা। বিকেল বা সন্ধ্যায় অনেক ভিড় হয়। এজন্য কাজের ফাঁকে আগেই কিনে রাখছি। কাজ শেষ হলে চলে যাবো।

Advertisement

সোমবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে নগরীর জিলা স্কুল মোড় এলাকার জাকির হোসেনের হোটেল মেহেরবান’র সামনে দাঁড়িয়ে কথা হয় মুক্তাগাছা উপজেলার বাসিন্দা সুজন মিয়ার সঙ্গে।

হোটেল মালিক জাকির হোসেন কিশোর বয়সে ১৯৭৩ সালে জেলার ফুলবাড়িয়া থেকে শহরে আসেন। এক বছর চায়ের দোকানে কাজ করার পর ১৯৭৪ সালে নগরীর জিলা স্কুল মোড়ের হোটেল মেহেরবানে কাজ নেন। তখন এর মালিক ছিলেন নগরীর মইনুল হোসেন নামের একজন। ১৯৯২ সালের দিকে তিনি হোটেল চালাতে না পেরে জাকির হোসেনকে দায়িত্ব দেন। এর পরের বছর ঘিয়ে ভাজা টক-মিষ্টি জিলাপি তৈরি করেন জাকির হোসেন।

জাকির হোসেন বলেন, আমার মনে আছে তখন ১৯৯৩ সাল। কোনো একদিন অনিক বৃষ্টি হয়, বৃষ্টির পানিতে শহর থৈ থৈ অবস্থা। ওই দিন জিলাপির অনেক খামির নষ্ট হচ্ছিল। তখন রাতে চিন্তা করি, এই খামির দিয়ে কি তৈরি করা যায়। ওই রাতেই মাসকলাই ডালের গুঁড়া ও তেতুল ভিজিয়ে পানি মিশিয়ে জিলাপি তৈরি করি। পরে ওই জিলাপি আমি, আমার দোকানের কর্মচারী ও পরিবারের লোকজন খেয়ে বুঝতে পারি, এই জিলাপি তৈরি করলে চলবে। এরপর থেকেই মূলত এই জিলাপি তৈরি করা শুরু করি। তবে তখন এর এত সুনাম ছিল না। গত ১০ থেকে ১২ বছর যাবত এর জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়।

Advertisement

জাকির হোসেন বলেন, ১৯৯৩ সালে যখন এই জিলাপি তৈরি করি। তখন এতটা স্বাদও ছিল না। দিন যতই যাচ্ছে, স্বাদ ততোই বাড়ছে। কারণ, এখন আরও ভালো করে বানানোর চেষ্টা করি। বর্তমানে এই জিলাপি তৈরি করতে, আতপ চালের গুঁড়া, অল্প ময়দা, মাসকলাই ডালের গুঁড়া ও তেতুল মেশানো পানি দিয়ে এর খামির তৈরি করি। এরপর খামির একদিন জিইয়ে রাখার পর কারিগররা হাতে জিলাপি তৈরি করে তেলের মাঝে দুইবার ভাজে। এরপর ঘি মেশানো চিনির সিরায় চুবানো হয়।

বছরের অন্যান্য সময় কম দামে ভাত, মাছ, ডাল বিক্রি করি। পাশাপাশি আমৃত্তি ও টক মিষ্টি জিলাপি বিক্রি করা হয়। বিশেষ করে রমজান মাসে অন্তত ২০ থেকে ২২ জন দোকানে কাজ করে। তারপরও টক-মিষ্টি জিলাপি তৈরি ও বিক্রি করে কুলিয়ে উঠতে পারি না। দুপুর থেকে বিক্রি শুরু হয়। তবে বিকেলে ক্রেতাদের অনেক চাপ থাকে। টক মিষ্টি জিলাপি, আমৃত্তি, সাধারণ জিলাপি, ছোলাবুট, পেঁয়াজু, বেগুনি ইফতারের অন্যান্য সামগ্রীসহ দৈনিক অন্তত পক্ষে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকার ইফতার বিক্রি হয়। রোজার একমাসে ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকা বিক্রি হয়।

এক দশকে ময়মনসিংহ নগরে বিলাসবহুল অনেক রেস্তোরাঁ হয়েছে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পুরোনো রেস্টুরেন্টে করেছেন আধুনিক সাজসজ্জা। কিন্তু জিলা স্কুল মোড়ের হোটেল মেহেরবান গত ১০ বছরে একটুও বদলায়নি। পুরোনো ছোট্ট ঘরেই চলছে হোটেল মেহেরবান। এখনো সেই তেমনই রয়েছে।

ঘি দিয়ে ভাজা স্পেশাল টক মিষ্টি জিলাপির কারিগর আলমাস মিয়া বলেন, আমি শুধু সারাদিন জিলাপি ভাজার কাজ করি। অন্যরা খামির বানানো, বিক্রিসহ অন্যান্য কাজ করে। বছরে শুধু রমজান মাসেই এই জিলাপির ব্যাপক চাহিদা থাকে।

Advertisement

অপর কারিগর গোলাম মোস্তফা বলেন, ২০ বছর যাবত এই হোটেলে কাজ করে আসছি। প্রতি রমজান মাসে ঘি দিয়ে ভাজা স্পেশাল টক মিষ্টি জিলাপি তৈরি করছি। ঘি দিয়ে ভাজা টক জিলাপি ৩০০ টাকা, আমৃত্তি ২৪০ টাকা ও সাধারণ জিলাপি ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়।

হোটেল মেহেরবানের আমৃত্তি তৈরির কারিগর শহিদ মিয়া বলেন, আমিও এই হোটেলে গত ৪ থেকে ৫ বছর যাবত আমৃত্তি ভাজার কাজ করে আসছি। আমৃত্তির খামির একবার ভাজা হয়। পরে চিনির সিরায় চুবিয়ে আমৃত্তি তৈরি করি।

এফএ/এএসএম