সাহিত্য

নিগার সুলতানার কবিতা

রেনুকে লেখা

Advertisement

পাহাড়ঘেরা মিয়ানওয়ালী জেলখানার ছোট কনডেম সেল,ডিসেম্বর মাসের এমন ঝোড়ো বৃষ্টি কখনো চোখে পড়েনি, এমন অসময়ের বিদ্যুৎ চমক আর তীব্র শীত আমাকে মৃত্যুর ডাক দেয়;কাঁটাতারের পাশ ঘেঁষেই আমার কবর খোঁড়া প্রায় শেষের পথে! এবার যদি ফিরে আসি, খুব ইচ্ছে টুঙ্গিপাড়া যাবার!

প্রিয় রেনু, পরম বন্ধু আমার! কথা দিয়েছিলাম, অবসরের এই দিনে লিখবো কিছু স্মৃতির কথা—আমার চশমার কাঁচ ঘোলা, বাষ্প হচ্ছে কিছু বন্দি আবেগ,বন্ধুহীন গরাদের শিকলগুলোতে যুদ্ধের ডামাডোল; ঠিক পাশের সেলেই দিন-রাত পাগলের আহাজারি চিৎকার!অবশ স্নায়ু ভুলে গেছে দিনরাত্রি, এবং অনেকগুলো বছর!জেলখানার ওই শীর্ণ বাগান— তাকিয়ে দেখি আকাশ জোড়া একঝাঁক স্বপ্নের গোলাপ!

প্রিয় রেনু, ভাবছো হয়তো নিঃসঙ্গতার প্রলাপ! কাল রাতেও তোমার মুড়ি মাখা আর ভাজা কৈ মাছ স্বপ্নে এলো!বড়ো বিস্বাদ লাগে মাংস আর শুকনো গমের রুটি,এবারের ঈদেও দেখা হলো না মায়ের সাথে! রাসেল বুঝি এখনো জেলখানা মানেই বাবার বাড়ি বলে জানে? হাচু আপার বাবা যে তারও বাবা—কামাল কি তা জানে?

Advertisement

প্রিয় রেনু, বললে বিশ্বাস করবে না!এত প্রিয় তামাকের ঘ্রাণ— এমনকি আমার সন্তানের নাম—বড় অচেনা লাগে!জানি, অশ্রুহারা আমার দুঃখিনী মা রক্তে ভেসে যায়— পানার জলে শত শত বঞ্চিত মানুষের লাশ!জানি, বস্ত্রহীনা বোনটি আমার আকাশপানে মুখ লুকায়, আহারে আমার অভাগিনী মা! আহারে আমার দুঃখিনী মা!

প্রিয় রেনু, বললে বিশ্বাস করবে না! পাহাড়ঘেরা মিয়ানওয়ালী জেলখানার ছোট কনডেম সেল,চারিপাশে গুমরে মরা স্তব্ধ বাতাস; লালরঙা আলোহীন জানালা! আমার মতো তারাও অপেক্ষা করে এক টুকরো স্বাধীন মাটির!অপেক্ষা করে মুজিবের মুক্তির, অপেক্ষা করে একটি লাল-সবুজ পতাকার,একটি জয়ধ্বনির! একটি জয় বাংলার!

এসইউ/জিকেএস

Advertisement