ফরিদপুরের সালথা উপজেলা চেয়ারম্যান ও একাধিক মামলার আসামি মো. ওয়াদুদ মাতুব্বরকে সঙ্গে নিয়ে ছাগল ও জাল বিতরণ করেছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামরুল আহসান তালুকদার।
Advertisement
তবে সরকারি একটি অনুষ্ঠানে হত্যাচেষ্টাসহ একাধিক মামলার একজন আসামি বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকা নিয়ে এলাকাজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার (১০ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে সালথা উপজেলা পরিষদ চত্বরে দেশীয় প্রজাতির মাছ এবং শামুক সংরক্ষণ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দরিদ্র মৎস্যজীবীদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ‘ছাগল ও বৈধ জাল বিতরণ’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়।
সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আক্তার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সরকার ও সালথা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ওয়াদুদ মাতুব্বর।
Advertisement
গত শনিবার দিনগত গভীর রাতে হত্যাচেষ্টা ও হামলার অভিযোগে সালথা থানায় দুটি মামলা হয়। এ দুটি মামলায় উপজেলা চেয়ারম্যান ওয়াদুদ মাতুব্বরকে আসামি করা হয়েছে। উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের দোহারগট্টি গ্রামের মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের দায়ের করা মামলার এক নম্বর আসামি উপজেলা চেয়ারম্যান ওয়াদুদ মাতুব্বর। গট্টি ইউনিয়নের কসবা গ্রামের লিয়ন মোল্লার করা মামলায় ১৬ নম্বর আসামির তালিকায় নাম রয়েছে উপজেলা চেয়ারম্যানের।
এদিকে, মামলার পর সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সাদিক বলেছিলেন, আসামিরা পলাতক থাকায় গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। আসামিদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।
মামলার বাদী মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আমার করা মামলার এক নম্বর আসামি উপজেলা চেয়ারম্যান ওয়াদুদ মাতুব্বর। একজন আসামি যদি সরকারি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
এ বিষয়ে সালথা থানার ওসি শেখ সাদিক বলেন, সোমবার সকাল থেকে ফরিদপুরে পুলিশের ক্রাইম কনফারেন্সে অংশ নিই। ছাগল বিতরণ অনুষ্ঠানে উপজেলা চেয়ারম্যান থাকবেন তা জানা ছিল না।
Advertisement
উপজেলা চেয়ারম্যান ওয়াদুদ মাতুব্বর জাগো নিউজকে বলেন, ছাগল ও বৈধ জাল বিতরণের একটি অনুষ্ঠানে ডিসি সাহেবের সঙ্গে ছিলাম। তবে বেশি সময় ছিলাম না। আমার উপস্থিতির বিষয়টি নিয়ে কথা-বার্তা শুরু হলে অনুষ্ঠানস্থল থেকে চলে আসি।
সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আক্তার হোসেন বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানের নামে মামলা আছে, তিনি একাধিক মামলার আসামি বিষয়টি জানা ছিল না। অনুষ্ঠান শেষে বিষয়টি জেনেছি। তবে আগে যদি জানতে পারতাম তাহলে এমন ঘটনা ঘটতো না।
ফরিদপুর আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মানিক মজুমদার জাগো নিউজকে বলেন, যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে বিষয়টি ঠিক হয়নি। আইন অনুযায়ী হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি আদালত থেকে জামিন না নেওয়া পর্যন্ত সরকারি বা অন্য কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া ঠিক নয়।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান যে মামলার আসামি বিষয়টি জানা ছিল না। উপজেলায় একটি অনুষ্ঠানে কিছু সময় তিনি ছিলেন। কিন্তু তিনি রোববার দুপুরের দিকে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায়ও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে পুলিশও উপস্থিত ছিল।
জানা গেছে, গত ২ এপ্রিল সন্ধ্যার দিকে সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের দোহারগট্টি গ্রামের জাহিদ মাতুব্বরের ভাতিজা লাবলু মাতুব্বরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষের লোকজন। এর প্রতিবাদে গত বুধবার বিকেলে বালিয়াগট্টি বাজারে একটি মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই মানববন্ধন শেষে বাড়ি ফেরার পথে পৃথক হামলায় কমপক্ষে ১৫ জন আহত হন। এসময় অন্তত ১২টি বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় উপজেলা চেয়ারম্যান ওয়াদুদ মাতুব্বরকে আসামি করে সালথা থানায় দুটি মামলা হয়।
এন কে বি নয়ন/এমআরআর/জেআইএম