জাতীয়

ঈদে সুগন্ধি চালেও বাড়তি খরচ

রোজার আগেই বেড়েছে প্রায় সব ধরনের মসলা ও নিত্যপণ্যের দাম। যদিও চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে বেশ কিছুদিন। তবে পোলাও-বিরিয়ানির জন্য ব্যবহৃত সুগন্ধি চালের দাম বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। গত এক বছরে কেজিতে বেড়েছে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা পর্যন্ত। গত বছর ঈদে যে চালের কেজি ১১০-১১৫ টাকা ছিল, এবার সেই একই চাল কিনতে গুনতে হবে ১৬০-১৭০ টাকা।

Advertisement

বাজার সংশ্লিষ্টদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুগন্ধি চালের সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। এরপরও কেন দাম বাড়লো তার কোনো সদুত্তরও নেই চাল ব্যবসায়ীদের কাছে। কেউ বলছেন, চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বাড়ছে। আবার কেউ চাল বাজারে করপোরেট কোম্পানিগুলোর মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করছেন।

দাম বাড়ার কারণ যেটাই হোক না কেন বিত্তবান কিংবা মধ্যবিত্ত পরিবারের বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানে পোলাও, বিরিয়ানি, ফিরনি, পায়েস থাকেই। আর সেসব আয়োজনের মূল উপকরণ হচ্ছে সুগন্ধি চাল। হোটেল-রেস্তোরাঁয়ও সুগন্ধি চালের ব্যবহার বেড়েছে। ফলে চাহিদার সঙ্গে দাম বাড়ায় সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে সুগন্ধি চাল।

আরও পড়ুন>চাল সহায়তা পাবে ১ কোটি মানুষ/রমজানে মানুষ চালের জন্য বিব্রতকর অবস্থায় পড়বে না: খাদ্যমন্ত্রী 

Advertisement

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিবার ঈদের আগে চিনিগুঁড়া ও বাংলামতি চালের দাম বাড়ে। এবারও বেড়েছে চালের দাম। তবে এবছর রোজার আগেই এ চালের দাম বাড়ানো হয়েছে। সে সময় প্যাকেটজাত প্রতিটি কোম্পানি সুগন্ধি চালের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজিপ্রতি বাড়িয়ে দেয়। যার প্রভাব পড়ে খুচরা বাজারে। সেখানেও দাম বাড়ে। ফলে ক্রেতা পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই কয়েক দফা বেড়ে যায় দাম।

সুগন্ধি চালের দাম নিয়ে বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) রাজধানীর সেগুনবাগিচা, শান্তিনগর ও কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের প্রতিবেদকের। তারা বলেন, গত দেড় মাস আগে একসঙ্গে সব কোম্পানি প্যাকেটজাত সুগন্ধি চালের দাম বাড়িয়ে দেয়। এরপর থেকে খুচরা বাজারেও দাম বেড়েছে।

সেগুনবাগিচার মুদি দোকানি সোহেল রানা বলেন, গত জানুয়ারিতে যখন সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো বেশি করে হওয়া শুরু হলো, তখন থেকে সুগন্ধি চালের দাম বাড়তে শুরু করে। এরপর রোজার কিছু আগে এসে হুট করে কেজিপ্রতি প্রায় আরও ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে ১৫০ টাকায় এসে ঠেকেছে। কোনো কোনো কোম্পানি ১৭০ টাকায় বিক্রি করছে।

সোহেল রানা আরও বলেন, রোজা, ঈদ এবং ঈদুল আজহায় বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে চিনিগুঁড়া ও বাসমতি চালের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি হয়। মূলত এ কারণে পাইকারিতে সুগন্ধি চালের দাম বেড়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন>চাল নিয়ে সিন্ডিকেটের ‘চালবাজি’ 

শান্তিনগর বাজারসংলগ্ন এলাকার এক গৃহিণী মাহমুদা পারভিন জানান, গত বছর দুই কেজি পোলাওয়ের চাল তিনি ২২০ টাকায় কেনেন। এরপর আর কেনা হয়নি। এখন এসে দেখেন দাম বেড়ে হয়েছে ৩১০ টাকা। দাম এত বেড়েছে, জানতেন না। কিন্তু বাজারে অন্য চালের দাম আগের মতোই রয়েছে।

ওই বাজারে পোলাওয়ের চাল হিসেবে বিক্রি করা চিনিগুঁড়া খোলা চাল ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কালিজিরা বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫৫ টাকায়। আর বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোড়কজাত পোলাওয়ের চালের কেজি এখন ব্র্যান্ডভেদে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত। কিছু দোকানি প্যাকেটের গায়ের দামের থেকে ৫ থেকে ১০ টাকা কমিয়ে বিক্রি করছেন।

খুচরা দোকানে খোলা বাসমতি চাল (বাংলা) বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকায়। তবে মোড়কজাত ভারতীয় বাসমতি চালের কেজি ৩০০ থেকে ৪৬০ টাকা। পাকিস্তানি বাংলামতি চালের প্রতি কেজির প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৫৫০ টাকায়।

কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে প্রায় ১০ লাখ টন সুগন্ধি চাল উৎপাদন হচ্ছে। সারাদেশের মধ্যে উত্তরাঞ্চল ও ময়মনসিংহে সবচেয়ে বেশি চাষ হচ্ছে সুগন্ধি ধানের। আর সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হচ্ছে দিনাজপুরে। তবে সামগ্রিক ধান উৎপাদনের চিত্র কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কাছে থাকলেও আলাদা করে সুগন্ধি ধানের আবাদের সবশেষ তথ্য নেই প্রতিষ্ঠানটির কাছে।

জেলাভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দিনাজপুর জেলায় ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাড়তে থাকে সুগন্ধি ধানের আবাদ। সে বছর উৎপাদিত হয় ৮৬ হাজার ৯৯৪ টন সুগন্ধি চাল। এরপর ধারাবাহিকভাবে সুগন্ধি ধানের আবাদ ও উৎপাদন বেড়েছে এ জেলায়। ২০২০-২১ অর্থবছরে উৎপাদিত হয়েছে ২ লাখ ৩৫ হাজার টন চাল।

আরও পড়ুন>সুগন্ধি চালের বাজারে বড় সম্ভাবনা কাটারিভোগ 

দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলের অন্য জেলায় এখন বাদশাভোগ, কালিজিরা, চিনিগুঁড়া (ব্রি-৩৪), কাটারিভোগ, জিরা নাজির, পাইজাম ও বাংলামতি নামের সুগন্ধি চাল হচ্ছে। এসব চাল এখন রপ্তানিও হচ্ছে। এ অঞ্চলের সুগন্ধি চালের কদর এখন বিশ্বজোড়া। দিনাজপুরের কাটারিভোগ ও কালিজিরা চাল জিওগ্রাফিক্যাল আইডেনটিফিকেশনও (জিআই) পেয়েছে।

গত বছর জুন মাসের আগে পর্যন্ত বাংলাদেশের সুগন্ধি চাল বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। সে সময় ১৩৫টি দেশে এ চাল রপ্তানি হয়। বাংলাদেশি সুগন্ধি চালের বড় বাজার ছিল মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের দেশগুলো। সেখানে বাংলাদেশি প্রবাসীর সংখ্যা বেশি। তারা এটি ব্যবহার করতেন। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়াসহ অন্য দেশেও সুগন্ধি চাল রপ্তানি হয়েছে ওই সময়। আগাম অনুমতি সাপেক্ষে সুগন্ধি চাল রপ্তানি করা যেত। বাংলাদেশ থেকে ৪১টি প্রতিষ্ঠান চাল রপ্তানি করতো।

গত বছর দেশে দাম বেড়ে যাওয়ায় ফেব্রুয়ারি মাসে খাদ্য মন্ত্রণালয় সুগন্ধি ও সরু চাল রপ্তানি বন্ধ রাখার অনুরোধ জানায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত জুন মাসে সুগন্ধি চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করে।

এনএইচ/এসএনআর/এএসএ/জিকেএস