ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, তাইওয়ান সংকট ত্বরান্বিত করার কোনো আগ্রহ ইউরোপের নেই। এমনকি ইউরোপের উচিত তাইওয়ান নিয়ে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের যেসব নীতি রয়েছে, সেগুলো না মেনে স্বাধীন একটি কৌশল অনুসরণ করা। রোববার (৯ এপ্রিল) প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করেন ম্যাক্রোঁ।
Advertisement
ম্যাক্রোঁ সবেমাত্র তিন দিনের চীন সফর শেষে দেশে ফিরেছেন। চীনে তিনি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের কাছ থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা পান। এর মধ্যেই বুধবার (৫ এপ্রিল) মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থির সঙ্গে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের বৈঠকে ক্ষুব্ধ হয়ে শনিবার (৮ এপ্রিল) থেকে তাইওয়ানের চারপাশে মহড়া শুরু করেছে চীন।
আরও পড়ুন>> তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের তিন দিনের সামরিক মহড়া শুরু
চীন গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত তাইওয়ানকে নিজস্ব এলাকা হিসেবে দেখে ও চীন সরকার দ্বীপটিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে শক্তি প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছে। যদিও তাইওয়ান সরকার বরাবরই চীনের দাবি ও কর্মকাণ্ডের তীব্র আপত্তি জানিয়ে আসছে।
Advertisement
চীন সফরের সময় শুক্রবার (৭ এপ্রিল) ফরাসি সংবাদপত্র লেস ইকোস ও পলিটিকোতে কথা বলেন ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। রোববার প্রকাশ করা ওই বক্তব্যে ম্যাক্রোঁকে বলতে শোনা যায়, তাইওয়ান ইস্যুতে চলমান সংঘাতকে ত্বরান্বিত করা ইউরোপের উচিত হবে না। এই মুহূর্তে ইউরোপের উচিত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে নিজের অবস্থান তৈরি করা।
ম্যাক্রোঁ পলিটিকোকে বলেন, তাইওয়ান বিষয়ে মার্কিন বা চীনা নীতির অনুসারী হতে হবে কিংবা দুই পরাশক্তির অত্যধিক প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে ইউরোপকে খাপ খাইয়ে নিতে হবে- এমন চিন্তা করাটা মোটেই ভালো কিছু নয়।
আরও পড়ুন>> ত্রিভুজ প্রেমের ফাঁদে আটকা তাইওয়ান
ফরাসি প্রেসিডেন্টের মতে, ইউরোপকে অবশ্যই তার প্রতিরক্ষাখাতকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। অধিক অর্থায়নের মাধ্যমে পারমাণবিক ও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির বিকাশ ঘটাতে হবে ও যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরতা সীমিত করতে মার্কিন ডলারের উপর নির্ভরতা কমাতে হবে।
Advertisement
এর আগে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর একজন উপদেষ্টা চীনের গুয়াংজুতে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, নিজেদের মধ্যে বৈঠকের সময় শি জিনপিং ও ম্যাক্রোঁ তাইওয়ান ইস্যুতে গভীর ও খোলামেলা আলোচনা করেছেন।
‘ম্যাক্রোঁর মতে তাইওয়ান নিয়ে সবারই সতর্ক হওয়া উচিত, যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে বা উত্তেজনা না বাড়ে। কারণ ইস্যুটি নিয়ে যত বিরোধ বাড়বে, চীন তত বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠবে।’
আরও পড়ুন>> যুক্তরাষ্ট্রে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট
২০২২ সালে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সফর কেন্দ্র করে তাইওয়ান ইস্যুতে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। চীনের হুমকি ও কঠোর হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে পেলোসি তাইওয়ান সফর করেন। এতে ভেঙে যায় ওই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা।
গত কয়েক দশকের রীতি ভেঙে কোনো উচ্চ পর্যায়ের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা তাইওয়ান সফর করেন। পেলোসি তাইওয়ান ছাড়ার পরপরই কয়েকদিন ধরেই তাইওয়ানের চারপাশে নজিরবিহীন সামরিক মহড়া চালায় চীন। এমনকি, দ্বীপটির চতুর্দিকে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করাসহ যুদ্ধ জাহাজ ও বিমান পাঠায় শি জিনপিং প্রশাসন।
আরও পড়ুন>> ঘুরতে গেলেই মিলবে নগদ টাকা!
তাইওয়ানের ওপর চীনের সার্বভৌমত্ব মানতে নারাজ যুক্তরাষ্ট্র, আবার তাইওয়ানকে স্বাধীন দেশ হিসেবেও স্বীকৃতি দেয় না মার্কিন কর্তৃপক্ষ। তাইওয়ানকে অস্ত্র সরবরাহ করা সত্ত্বেও চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।
সূত্র: রয়টার্স
এসএএইচ