ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। নিরাপত্তা বিশ্লেষক, সামরিক ব্যক্তিত্ব, লেখক ও গবেষক। ২০০৭-২০১২ সাল পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনার ছিলেন। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি পত্রিকায় কলাম লিখছেন নিয়মিত।
Advertisement
তাইওয়ান-চীনের মধ্যকার চলমান উত্তেজনার সত্যিকার কোনো রূপ আছে কি না- এমন প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন জাগো নিউজের সঙ্গে। লিখেছেন সায়েম সাবু।
জাগো নিউজ: আবারো চীন-তাইওয়ান উত্তেজনা। তাইওয়ানকে ঘিরে চলছে চীনের সামরিক মহড়া। এ উত্তেজনা কোথায় গড়াতে পারে?
এম সাখাওয়াত হোসেন: এমন মহড়ায় আসলে কিছুই ঘটে না। এসব শক্তিমত্তা দেখানোর প্রকাশ্য কৌশল। শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো এমনটিই করে। এখন চীন দেখাচ্ছে। কয়েকদিন পরে যুক্তরাষ্ট্র-জাপান দেখাবে।
Advertisement
জাগো নিউজ: কিন্তু তাইওয়ানে তো চীন শক্তির ব্যবহার করেছে আগে?
আরও পড়ুন>> ‘পারমাণবিক অস্ত্রের সঠিক ব্যবহার হচ্ছে হুমকি দেওয়া’
এম সাখাওয়াত হোসেন: এই মুহূর্তে চীন-তাইওয়ান যুদ্ধের মুডে নেই। চীন আরও দশ বছর যুদ্ধের মধ্যে জড়াবে না। এখন যা করছে, তা ভয় দেখানোর জন্য।
জাগো নিউজ: তাইওয়ান কি তাতে ভীতু?
Advertisement
এম সাখাওয়াত হোসেন: আমার কাছে তা মনে হয় না। তাইওয়ান এমন মহড়া দেখে অভ্যস্ত। তারা জানেন চীন তাইওয়ানকে দখল করবে না। কারণ গোটা বিশ্বের মানুষ জানে চীন এখন অর্থনৈতিক মুডে আছে। যে সড়কে চীন অবস্থান করছে, তাতে আরও পথ বাকি আছে। চীন তার অবস্থান নষ্ট করে যুদ্ধের পথে হাঁটবে না। তাইওয়ানের পাশেও নানা পক্ষ আছে। তারাও চাপ নিতে পারবে এবং নানা পক্ষের ওপর ভর করে চীনকেও চাপে রাখতে পারবে।
জাগো নিউজ: তাইওয়ানকে উসকে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র এবারও তাইওয়ানের পক্ষ নিয়ে কথা বলছে।
আরও পড়ুন>> ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আরও গতিশীল হবে’
এম সাখাওয়াত হোসেন: যুক্তরাষ্ট্র এখন কিছুই করবে না। কিছুদিন পর তাইওয়ানকে নিয়ে আরেকটি মহড়ার আয়োজন করতে পারে মাত্র। এর চেয়ে বেশি কিছু করার নেই।
জাগো নিউজ: দক্ষিণ এশিয়ায় যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে অনেকে ধারণা করছেন। সত্যতা কতটুকু?
এম সাখাওয়াত হোসেন: এই মুহূর্তে দক্ষিণ এশিয়ায় কোনো উত্তেজনা নেই। যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হবে বলেও মনে করি না। উত্তেজনা বেশি ছড়ায় সাধারণত মিডিয়া। বিশ্লেষকরা নিজের মতো করে কথা বলি। উত্তেজনা আমাদের সৃষ্টি।
ভারত নানা ভাব প্রকাশ করছে তার শক্তি নিয়ে। বড় রাষ্ট্রগুলোকে এমন করতে হয়। নইলে তো মোড়লগিরি থাকে না।
জাগো নিউজ: ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব চিরাচরিত। কী দেখতে পাচ্ছেন এখন?
এম সাখাওয়াত হোসেন: এ দু’টি রাষ্ট্র ভৌগোলিক অবস্থান নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে জড়াবে। ধর্ম, রাজনীতিও সে দ্বন্দ্বে গুরুত্ব পেয়ে আসছে। কিন্তু সরাসরি যুদ্ধের মতো কারণ সৃষ্টি হয়েছে বা আপাতত হবে বলেও মনে করি না। ভারত, পাকিস্তান, চীন, যুক্তরাষ্ট্র কেউই এখন যুদ্ধ করবে না।
আরও পড়ুন>> যুদ্ধ-মহামারি/২০২৩ সাল কিছুটা স্থিতিশীল পাবো
আমার কাছে মনে হয় না চীন কোনো পাগলামি করবে। চীন তাইওয়ানে হামলাও করতে চায় না। মনে রাখতে হবে আমেরিকার শক্তির কাছে চীন এখনো সমান হয়নি। উভয় দেশের ক্ষয়ক্ষতি হবে। করোনার পর চীনকেই বড় ধাক্কা সামলাতে হয়েছে।
একটি ভয়াবহ যুদ্ধ চলছে ইউরোপে। যে যুদ্ধ এতই ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে, যা নিয়ন্ত্রণ আর কারও হাতেই নেই। যুদ্ধ কোনদিকে যাবে বা সর্বজনীন যুদ্ধ হবে কি না তাও বোঝা যাচ্ছে না। পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার হবে কি না রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে, হলে কী পরিণতি হবে তাও ধারণা করা যাচ্ছে না। এ আলোচনাই তো শেষ হয়নি। দক্ষিণ এশিয়া এখন এমন আলোচনার বাইরে বলে মনে করি।
জাগো নিউজ: রাশিয়া-ইউক্রেনে পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা নিয়ে আপনার কী ধারণা?
এম সাখাওয়াত হোসেন: রাশিয়া আরও কোণঠাসা হলে পারমাণবিক বোমা মারবেই। এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমি জোর সম্ভাবনার কথা বলছি। আমেরিকাও এমন যুদ্ধে যুক্ত হতে পারে। রাশিয়ার প্রস্তুতির কথা যেভাবে মিডিয়ায় আসছে আর বেলারুশে যেভাবে পারমাণবিক অস্ত্র মজুত করেছে তাতে শঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে বলে মনে করি। আপাতত পৃথিবীর জন্য ভালো কিছু দেখতে পারছি না।
এএসএস/এএসএ/জিকেএস