কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ব্লাস্ট রোগে নষ্ট হয়েছে আগাম জাতের ব্রি-ধান ২৮। ফলে সারাবছরের খাদ্যের জোগান নিয়ে দিশেহারা কৃষক। ব্রি-ধান ২৮ জাতের ধানে এর প্রকোপ বেশি। রোগের প্রভাবে ধান চিটা হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।
Advertisement
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এ বছর উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের জোয়ানশাহীসহ বেশ কয়েকটি হাওরে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৭ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে ব্রি-ধান ২৮ আবাদ হয়েছে। ধান নষ্ট হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা নিয়ে সংশয়ে আছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপী, সাদেকপুর, রসুলপুর, মেন্দিপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, চলতি মৌসুমে হাওরের বিলে উচ্চ ফলনশীল জাতের বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। কম সময়ে ফলন, চাল সরু এবং খেতে সুস্বাদু হওয়ায় হাইব্রিড জাতের পাশাপাশি উফসি-২৮ জাতের বোরো ধান চাষ করেন কৃষকেরা। কিন্তু উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের জমিতে (ব্রি-ধান ২৮) ব্লাস্ট রোগ দেখা দেওয়ায় ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
আরও পড়ুন: বোরো চাষে দরদি কৃষক, এ বছর সুখবরের সম্ভাবনা
Advertisement
ধানের শীষ আসার সঙ্গে সঙ্গে পুড়ে চিটা হয়ে গেছে। সেইসঙ্গে ইঁদুর গাছের গোড়া কেটে দেওয়ায় নষ্ট হচ্ছে ধান। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন জেলার কৃষকেরা। ধার-দেনা করে বোরো ধানের আবাদ করেছেন তারা। ধান নষ্ট হওয়ায় দেনা শোধ করবেন কীভাবে, সেই চিন্তায় দিন কাটছে তাদের। ধান নষ্ট হওয়ায় সারাবছর খাদ্যের জোগান নিয়ে দিশেহারা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা।
উপজেলার মৌটুপী গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মো. মিজানুর রহমান জানান, এ বছর তিনি ৮ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। এর মধ্যে হাইব্রিডের পাশাপাশি উফসি-২৮ জাতের ধান রোপণ করেন। কিন্তু এসব ধান গাছে ব্লাস্ট রোগ হওয়ায় ধান চিটা হয়ে গেছে। সেইসঙ্গে ভালো জমিতে ইঁদুর গোড়া কেটে দেওয়ায় ধান নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে তিনি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক কামাল মিয়া বলেন, ‘অন্যের জমি বর্গা নিয়ে এ বছর ৩০ বিঘা জমিতে বোরো-২৮ জাতের ধান রোপণ করেছি। ধানের শীষ আসার সঙ্গে সঙ্গে তা পুড়ে চিটা হয়ে গেছে। এ বছর একটা ধানও ঘরে তুলতে পারবো না। ছেলে-মেয়ে নিয়ে সারাবছর কী খেয়ে বাঁচবো সেই চিন্তায় আছি।’
আরও পড়ুন: ধানের বাদামি দাগ রোগ প্রতিকারে করণীয় জানালো কৃষি তথ্য সার্ভিস
Advertisement
রসুলপুর গ্রামের কৃষক সাইজুদ্দিন বলেন, ‘এ বছর ৫ বিঘা জমিতে ব্রি-ধান ২৮ আবাদ করেছি। এসব জমিতে ধান আবাদ করতে খরচ হয়েছে ৩৫-৪০ হাজার টাকা। এখন জমিতে যে পরিমাণ ধান পাওয়া যাবে, তাতে খরচের টাকাও উঠবে না বলে হয়।’
কৃষক এমদাদুল হক এমাদ বলেন, ‘২০ বিঘা জমিতে এ বছর বোরো ধান আবাদ করেছি। তার মধ্য ১০ বিঘা জমিতে তাড়াতাড়ি পানি চলে আসায় ব্রি-ধান ২৮ আবাদ করেছি। কয়েক দিন আগে হঠাৎ রাতে ঝড়-বৃষ্টি হয়েছিল। তারপর থেকেই জমিতে চিটা পড়তে শুরু করেছে। তারপর পুরো জমি সাদা হয়ে গেছে। এখন যে টাকা খরচ করে কাটবো; সেই টাকার ধান পাবো না।’
সাদেকপুর গ্রামের কৃষক রাফি উদ্দিন বলেন, ‘হাওরের নিচু জমিতে প্রতি বছরই ব্রি-ধান ২৮ চাষ করি। এ ধানে ফলন কম হলেও কম সময়ের মধ্যে ঘরে তোলা যায়। কিন্তু এ বছর ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে জমির সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এখন তো জমিতে শুধু ধানের গাছ পড়ে আছে। এমন জমির ধান কেটেই কী করবো?’
আরও পড়ুন: লোগো পদ্ধতি ধান চাষে ফলন বাড়ে
ভৈরব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা বেগম জানান, ব্রি-ধান ২৮ জাতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ বেশি হয়। ফলে এ ধান চাষ করে কৃষকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জমি পরিদর্শন করে সহযোগিতা ও বিভিন্ন পরার্মশ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।
রাজীবুল হাসান/এসইউ/জিকেএস