অর্থনীতি

অনুদানের টাকা পাওয়া নিয়ে শঙ্কা ব্যবসায়ীদের

বঙ্গবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন অনেকেই। অনেকে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে অর্থ দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন। রোববার সকাল থেকেই জমা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। তবে অনুদানের এই টাকা হাতে না পৌঁছা পর্যন্ত সহযোগিতা পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

অন্যদিকে তাদের নেতারা বলছেন, তালিকা তৈরি করে মেয়রকে দেওয়া হয়েছে। যারা অনুদান না পাওয়ার শঙ্কার কথা বলছেন তারা এখানকার ব্যবসায়ীই নন। এখানকার ব্যবসায়ীরা এমন কথা বলতে পারেন না।

রোববার (৯ এপ্রিল) দুপুরে ব্যবসায়ী ও মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।

গত ৪ এপ্রিল সকালের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুড়ে ছাই হয়ে যায় বঙ্গবাজারের বেশ কয়েকটি মার্কেট। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন কয়েক হাজার ব্যবসায়ী। তাদের সহযোগিতায় হাত বাড়িয়ে দেন বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থা।

Advertisement

রোববার বেলা পৌনে ১১টায় আলেয়া হিজড়া তার হজের জন্য জমানো টাকা থেকে ২ লাখ টাকা দিয়ে দিনের শুরু করেন। এরপর বেলা সোয়া ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। তার নেতৃত্বে ২৬ লাখ টাকা জমা দেওয়া হয় তহবিলে। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। নিজেদের একদিনের বেতন ও ইফতারের খরচের ২ লাখ টাকা ব্যবসায়ী নেতাদের হাতে তুলে দেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য ২০ লাখ টাকা সহায়তা দেন তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর সদস্যরা। তবে এসব অনুদানের টাকা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা।

মো. ইয়াসিন নামে এক ব্যবসায়ী জাগো নিউজকে বলেন, আমরা দেখছি বিভিন্ন জায়গা থেকে অনুদান দেওয়া হচ্ছে। তবে সেই টাকা কবে আমাদের হাতে আসবে জানি না।

মো. সুমন হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ব্যবসায়ীদের তালিকা করা হয়েছে। আমার কাছ থেকে তিনবার কাগজ নিয়েছে। তারা কী করে জানি না। আমাদের হাত পর্যন্ত টাকা আসবে কি না, নিশ্চিত নই। হাতে টাকা না আসা পর্যন্ত বলতে পারবো না আমরা কতটুকু সহযোগিতা পেলাম।

আবদুল লতিফ নামে একজন বলেন, বিভিন্ন জায়গা থাকে নাকি সহায়তা আসছে। শুনেছি কেউ কেউ নাকি সহায়তা পেয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের সহায়তার বিষয়ে কেউ কিছু বলেনি।

Advertisement

শাহাবুদ্দিন বলেন, সহায়তা পেলে অবশ্যই ভালো হয়। নতুন করে দোকান দিতে পারলে আরও ভালো হয়। এতে সব কিছু মিলিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়ানো যাবে।

ব্যবসায়ীদের এমন শঙ্কার বিষয়ে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, যারা অনুদান পাওয়া নিয়ে শঙ্কার কথা বলছেন, তারা এখানকার ব্যবসায়ী নন। আমাদের ব্যবসায়ীরা এমন কথা বলতে পারেন না। কারণ তারা জানেন এখানে আমরা এ ধরনের কোনো অনিয়ম করি না, যা অনুদান আসবে তা ব্যবসায়ীদের মধ্যে যথার্থভাবেই দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, তালিকা করার বিষয়ে আমরা বঙ্গবাজার দোকান মালিক সমিতিকে দায়িত্ব দিয়েছি। তারা দেখভাল করছেন। তবে কোনো ব্যত্যয় ঘটলে আমরা ব্যবস্থা নেবো। এখানে যারা সদস্য, তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন কে থাকবে, কে থাকবে না। এখন পর্যন্ত ২৯০০ ব্যবসায়ীর তালিকা করা হয়েছে। তালিকায় ব্যবসায়ীদের রাখা দরকার। কারণ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এখন ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়। তাই শতভাগ ব্যবসায়ীর তালিকা হওয়া প্রয়োজন। তারপর এখানে যদি কখনো ভবন হয়, তখন মালিক যারা আছেন, তারা কে কী বরাদ্দ পাবেন সেটি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র দেখবেন। কারণ এই মার্কেটের মালিক সিটি করপোরেশন।

অগ্নিকাণ্ডের স্থানে ব্যবসায়ীরা বসতে চাচ্ছেন। কিন্তু এখনো ধ্বংসস্তূপ সরানো যায়নি। এগুলো সরাতে কতদিন লাগবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম দু-একদিনেই পরিষ্কার করা যাবে। কিন্তু যেখানে হাত দিচ্ছে সেখানেই আগুন। ফলে নতুন করে আবার পানি দিয়ে নেভাতে হচ্ছে। এ কারণে সরাতে সমস্যা হচ্ছে। আগুনসহ ট্রাকে তোলা যাবে না। এটা ঝুঁকিপূর্ণ। ঈদের আগে ব্যবসায়ীরা বসতে পারবেন কি না এটা এখন বলতে পারছি না।

এর আগে ব্যবসায়ীদের সহায়তা জমা নেওয়ার জন্য ‘বঙ্গবাজার অগ্নিকাণ্ড কে এস তহবিল’ নামে আইএফআইসি ব্যাংকে হিসাব খোলা হয়েছে। হিসাব নম্বর ০২০০০৯৪০৬৬০৩১ (সেভিংস অ্যাকাউন্ট)।

আরএসএম/এমএইচআর/জেআইএম