রাজধানীর মিরপুরে একাধিক দোকানের সমন্বয়ে গঠিত নান্নু মার্কেট। এখানে পোশাক, জুতা ও প্রসাধনীসহ প্রায় সবধরনের জিনিসপত্র থাকলেও ক্রেতাদের ভিড় নেই। ক্রেতার অভাবে ব্যবসার ভরা মৌসুমে অনেক দোকানিকে অলস সময় কাটাতে হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দোকান ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন ও ঈদ বোনাস দেওয়াই কষ্টকর হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
Advertisement
রোববার (৯ এপ্রিল) সকালে বিক্রয়ের হিসাব খাতা প্রতিবেদককে দেখিয়ে লাকি ফ্যাশনের এই স্বত্বাধিকারী বলেন, কোনো পোশাকে ৩০ টাকা, কোনোটায় ৫০ টাকা লাভ করেছি। ঈদের বাজারে এই সামান্য লাভ করলে হয় না। আমরা সারা বছর ঈদের জন্য অপেক্ষা করি। অন্য সময় তো বেচাকেনা কম।
পুরো রোজায় গত শুক্র ও শনিবার মার্কেট জমেছে জানিয়ে জাগো নিউজকে তিনি বলেন, রোজার বাকি দিনগুলোতে ভালো ব্যবসার প্রত্যাশা করছি। এমনিতেই ছোট আইটেম, দাম কম তার ওপর ক্রেতারাও দাম বলছে কম।
মার্কেটটিতে বাচ্চাদের শার্ট (২-৮) বছর শার্ট ও প্যান্ট যথাক্রমে ১৪০-১৮০, ১৬০-১৮০ টাকা (১০-১৬) বয়সী বাচ্চাদের শার্ট ও প্যান্ট যথাক্রমে ১৮০-২০০ টাকা, ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর বাচ্চাদের পোলো টি শার্ট ২০০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর মেয়েদের ফ্রক ১০০-২৫০ টাকা, পার্টি ড্রেস ৩০০-৬০০ টাকা, গাউন ৫০০-৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
Advertisement
আরও পড়ুন: ঈদ উপলক্ষে ১১ দিন বন্ধ থাকবে বাল্কহেড চলাচল
বিক্রেতারা বলছেন, বাচ্চাদের মতো বড়দের পোশাকের বিক্রি কম। মানুষের হাতে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় তারা পণ্যের খুব বেশি দাম করছে না। লামিশা ফ্যাশন হাউসের বিক্রয় প্রতিনিধি মো. রুপম জাগো নিউজকে বলেন, দোকান থেকেও অনলাইনে পোশাকের দাম বেশি। তাও সেখান থেকে কোনো দামাদামি না করেই ক্রেতা পোশাক কেনে। অথচ মার্কেটে এলে ক্রেতা দামাদামি করে। পুরো রোজায় গত শুক্র ও শনিবার ভালো ক্রেতা ছিল। অন্য সময়ে দু-চারজন ক্রেতা এলেও অধিকাংশ ক্রেতাই দরদাম করে চলে যান।
এই মার্কেটে বড়দের সুতির শার্ট ৫০০-৬৫০ টাকা, জিনস প্যান্ট ৬০০-১১০০ টাকায়, গ্যাবার্ডিন প্যান্ট ৮০০-১২০০ টাকা পলো টি শার্ট ৩০০-৮০০ টাকা, গোল গলা গেঞ্জি ২০০-৪০০ টাকা পাঞ্জাবি ৪০০-৬০০ টাকা, লেডিস টপস ৪৫০-৫০০ টাকা লেডিস জিন্স ৩০০-৬০০, লেডিস টি শার্ট ১০০-২০০ লেডিস ট্রাউজার ৩০০-৪০০ প্লাজো ২৫০-৪৫০, লং গাউন ৮০০ টাকায়, থ্রি পিস ৬০০-২৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া এক্সপোর্টের শার্ট ৬০০-১৬০০, প্যান্ট ১০০০-১২০০, গ্যাবার্ডিন ৬০০-৯০০, টি শার্ট ৪০০-৬০০, পোলো গেঞ্জি ৩০০-১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাচ্চাদের সেন্ডেল ৩০০-৫০০, লোফার ৩০০-৩৬০, ছেলেদের চটি ২৫০-৬০০, লোফার ৫০০-৮০০, কলাপুরী ৫০০-৮০০ ও নাগড়া ১০০০ টাকা ও মেয়েদের বিভিন্ন জুতা ৩০০-২০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
Advertisement
তিনি বলেন, গত রোজার ঈদে প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা বিক্রি হত। এবার ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে না। আমরা শেষ ১০ দিনের অপেক্ষায় আছি। ওই সময়ে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা বিক্রির টার্গেট আছে। টার্গেট পূরণ হলে দোকান ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন, বোনাস দিতে পারবে মালিক।
ঈদের বেচাকেনার টাকা দিয়েই মালিক সারা বছরের দোকান ভাড়া দেন। সকালে ক্রেতা না থাকায় অলস সময় পার করতে দেখা গেছে দোকান মালিক ও বিক্রয় প্রতিনিধিদের। কাউকে দোকান ঝাড়া-মোছা করা, কাউকে ফেসবুক ও ইউটিউবে ভিডিও দেখতে দেখা গেছে।
এক্সপোর্টের জামা, প্যান্ট দেখছিলেন বিএফ শাহীন কলেজের ছাত্র ইরফান। বেশ কিছুক্ষণ যাচাই বাছাই করে জিনিস কিনে একটি দোকান থেকে বের হয়ে পড়েন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিবারই পোশাকের দাম বাড়ে। ভালো জিন্স গত বছর ও ৪৫০-৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া গেছে। তবে এবার দাম ১০০০ টাকার নিচে ভালো জিনস নেই। একইভাবে ১৫০০ টাকার নিচে শার্ট নেই। শার্টের দাম ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
পল্লবীর বাসিন্দা মুক্তা জানান, গতবারের চেয়ে এবার ভারতীয় থ্রিপিসের দাম বেড়েছে ৮০০-১০০০ হাজার টাকা বেশি বলছে বিক্রেতারা। একইভাবে দেশীয় থ্রিপিসের দাম বেড়েছে ২০০-৩০০ টাকা বাড়তি বলছে তারা।
বাড়তি দাম প্রসঙ্গে ফ্যাশন আওয়ারের স্বত্বাধিকারী সেলিম বলেন, কাঁচামালের দাম বেশি। তার ওপর বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়তি। পরিবহন খরচও চড়া। এ কারণে পোশাকসহ প্রত্যেকটা পণ্যের দাম বেশি। এই মার্কেট রোজার শেষ ১০ দিন জমজমাট হয়। অন্য সবার মতো আমরা ভালো বিক্রির আশা করছি।
আরও পড়ুন: ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ২০ লাখ টাকা দিলেন তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যরা
এই মার্কেটের মতো রাজধানীর অন্য মার্কেটেও বেচাকেনা কম বলে জানান বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, করোনার সময় থেকে এখন পর্যন্ত কোনো মার্কেটে খুব একটা ব্যবসা হয়নি। গত বছর যা হয়েছে তা কোনোমতো টিকে থাকার মতো। রমজানে এখন পর্যন্ত অনেক দোকানে বিক্রিও শুরু হয়নি। অনেকে ক্রেতা কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছেন। যাদের সক্ষমতা তুলনামূলক ভালো, তারা ভারতে গিয়ে কেনাকাটা করছেন। সব ব্যবসায়ী শেষ সময়ের অপেক্ষা করছেন। ঈদের আগে বেচাকেনা বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।
এসএম/এমআরএম/জেআইএম