দেশজুড়ে

৩৯ বিঘা জমি নিয়ে মায়ের মুখোমুখি ব্যারিস্টারপুত্র

যশোরের চৌগাছায় ৩৯ বিঘা জমি নিয়ে বিরোধে মুখোমুখি অবস্থানে আছেন ব্যারিস্টারপুত্র এ কে এম মর্তুজা রাসেল ও তার মা লতিফা হায়দার। পাল্টাপাল্টি মামলার পর তারা সংবাদ সম্মেলনও করেছেন।

Advertisement

মা লতিফা হায়দারের অভিযোগ, ছেলে মর্তুজা রাসেল বাবার ৩৯ বিঘা জমি লিখে নেওয়ার জন্য মাকেসহ পরিবারের সব সদস্যের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন। বাবা হায়দার আলীকে বাড়ি থেকে নিয়ে গেছেন রাসেল।

অন্যদিকে ছেলে ব্যারিস্টার মর্তুজা রাসেলের দাবি, তার মাসহ অন্য ভাইবোনরা সম্পত্তির জন্য তার বাবার ওপর অমানসিক নির্যাতন চালিয়ে মৃত্যুমুখে নিয়ে গেছেন। বাবার প্রাণ রক্ষার্থে তিনি তাকে নিয়ে গেছেন।

লন্ডনে আইন পেশায় নিয়োজিত ব্যারিস্টার রাসেল যশোরের চৌগাছা উপজেলার মাকাপুর গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে এবং লতিফা হায়দার রাসেলের মা। শনিবার দুপুরে যশোর প্রেস ক্লাবে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেন মা-ছেলে। সংবাদ সম্মেলনে মা লতিফা হায়দার অভিযোগ করে বলেন, ‘রাসেল তার বাবার জমি লিখে নিতে আমাকেসহ পরিবারের সব সদস্যের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছে। বাড়ি ছাড়া হয়ে সন্তানদের নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছি। আমার স্বামী হায়দার কোথায় জানি না। হায়দারের জমি ট্রাস্টে লিখে দিতে চাই না। কিন্তু জমি লিখে দিতে আমাকে বাধ্য করছে রাসেল।’

Advertisement

লতিফা হায়দার আরও বলেন, ‘যে সন্তানকে জীবনের সবটুকু দিয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে ব্যারিস্টার করেছি, সেই সন্তানই আজ মাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। স্বামীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে আমার নামে দুটি মামলা করেছে। অপর পাঁচ সন্তানকেও মামলা দুটির আসামি করেছে। মামলার কারণে তারা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘২০০৭ সালে মুর্তজা লন্ডনে যান। তার পেছনে পরিবারের খরচ হয় ২০ লাখ টাকা। ২০১১ সালে গোপনে দেশে এসে বিয়ে করেন। এসব বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য হয়। সর্বশেষ ২০১৬ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য ফেরত শর্তে আরও ৩৭ লাখ টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু ওই টাকা ফেরত না দেওয়ায় গোলযোগ শুরু হয়। ২০২২ সালে দেশে এসে জমি লিখে নিতে চায়। না দেওয়ায় ট্রাস্টে সব জমি দানের ষড়যন্ত্র করে। ওই ট্রাস্টের সভাপতি সে নিজে হতে চায়। এতে বাধা দেওয়ায় আজ এ করুণ পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে গোটা পরিবারকে।’

লতিফার বড় মেয়ে পারভীন বিউটি বলেন, তার বাবা চৌগাছার মাকাপুর ধনীবাড়ির হায়দার আলী এখন মানসিক ভারসাম্যহীন। ১০০ বিঘা জমির মধ্যে ৫০-৬০ বিঘা জমি মুর্তজা হজম করেছেন। বাকি আছে ৩৯ বিঘা জমি দখলে নিতে এখন মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

এদিকে মা লতিফা হায়দারের সংবাদ সম্মেলনের পর পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন ব্যারিস্টার একেএম মর্তুজা রাসেল। তিনি দাবি করেন, লন্ডনে আইন পেশায় তিনি কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেন। ফলে দেশের সামান্য জমি নিয়ে তার কোনো লোভ নেই। বরং তার মাসহ অপর পাঁচ ভাইবোন ওই সম্পত্তির জন্য প্রতিনিয়ত তার বাবা হায়দার আলীর ওপর নির্যাতন চালাচ্ছেন। বাড়িতে লাগানো সিসিটিভি ফুটেজে সেই নির্যাতনের দৃশ্য দেখে তিনি লন্ডন থেকে দেশে ফেরেন। তার দেশে ফেরার খবরে বাবা হায়দারকে নিয়ে তার মা ও ভাইবোনরা বাড়ি ছেড়ে চলে যান। পরে আদালতের মাধ্যমে বাবাকে উদ্ধার করে নিজের জিম্মায় নিয়েছেন। ওই নির্যাতনের ঘটনায় তার ভাই ও বোন কারাগারে গেছেন।

Advertisement

ব্যারিস্টার একেএম মর্তুজা রাসেল অভিযোগ করে বলেন, ‘সুস্থ অবস্থায় বাবার কাছ থেকে কেউ সম্পত্তি লিখে নিতে পারবে না। এজন্য মা ও ভাইবোন মিলে নির্যাতন করে বিষ দিয়ে বাবাকে অসুস্থ করে ফেলেছে। এখন তাকে পেলে ওই জমি লিখে নেবে। এখন বাবাকে নিয়ে যাওয়ায় মরিয়া হয়ে মা ও ভাইবোনরা আমার বিরুদ্ধে মামলা দিতে চায়।’

মুর্তজার পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম হাবীব, মোর্তুজার ফুফু হামিদা বেগম ও শাহিদা বেগম।

মিলন রহমান/এসজে/এমএস