দেশের অন্যান্য জেলার মতো রংপুরেও রয়েছে ইফতার সামগ্রীর ঐতিহ্য। দিন যতই গড়াচ্ছে ততোই বাড়ছে মুখরোচক ইফতারের চাহিদা। বিভাগীয় এই নগরীর রোজাদারদের ইফতারে প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে নতুন নতুন খাবার।
Advertisement
রংপুরের ইফতার বাজারের বিশাল পসরায় রয়েছে দইবড়া, হালুয়া, ফালুদা, বুট বিরিয়ানি, হালিম, পাতাবড়া, পাটিসাপটা পিঠা, চিকেন ফ্রাই, শাহি জিলাপি, আলুর চপ, চিকেন রোল, মাঠা, বোরহানিসহ বাহারি সব খাবার। বিভিন্ন ফুটপাত থেকে পাড়া মহল্লাসহ অভিজাত রেস্ট্যুরেন্টগুলোতে এখন দুপুর গড়াতেই শোভা পাচ্ছে ইফতারের নানা রকম পসরা।
নগরীর কচারী বাজারের মৌবন, মহুয়া ছাড়াও ধাপ এলাকার মেজবান, লবঙ্গ, সেন্ট্রাল রোডের স্বাদ কানন, বৈশাখী, নর্থ ভিউ, ডিসির মোড়ে ক্যাসপিয়া, জিএল রায় রোডের গ্র্যান্ড প্যালেসের মতো নামিদামি হোটেল রেস্তোরাঁর ইফতার সমাহারে ভেজিটেবল রোল, নিমকপরা, নিমকি, ডিম চপ, শাক ফ্লোরি, বিফ টোস্ট, চিকেন টোস্ট, জালি কাবাব, মাটন সাসলিক, শামি কাবাব, টিকা কাবাব, চিকেন চপ, চিকেন তন্দুরি, রেশমি জিলাপি, ছানার পোলাও, খাসির রেজালা, খাসির কাবাব, পেঁয়াজু আর বেগুনি রয়েছে।
এতসব খাবারের ভিড়েও অনেকের কাছে প্রিয় জিলাপি। এখানকার জিলাপি একসময় বাঁশের খাঁচায় বিক্রি হতো। সারা বছর এই জিলাপি মিললেও রমজানের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়।
Advertisement
রংপুরের ঐতিহ্যবাহী জিলাপি প্রসঙ্গে লবঙ্গ হোটেলের সুপারভাইজার হোসেন আলী বলেন, এ বছর জিনিসপত্রের দাম বেশি। নগরের দূর-দূরান্ত থেকে এসে জিলাপি কিনে নিয়ে যায় লোকজন। জিলাপির পাশাপাশি ইফতারে মুড়ি ও বুন্দিয়া যেমন অপরিহার্য, তেমনি সুস্বাদু অন্যান্য মুখরোচক খাবারেরও চাহিদা রয়েছে।
মহুয়া কনফেকশনারির স্বত্ত্বাধিকারী নূরুল হক বলেন, বিভিন্ন ইফতার অনুষ্ঠানে হালুয়া, জিলাপি, বুটভুনা ও বুটবিরিয়ানির কদর বেশি। এছাড়া তাদের বিশেষভাবে তৈরি হালিমও বেশ জনপ্রিয়।
নগরীর কোর্ট মসজিদের সামনে মাঠা বিক্রি করেন আব্দুল কাইউম। পাশাপাশি তিনি হোম ডেলিভারি এবং বিয়ে, বউভাতসহ বড় অনুষ্ঠানে এই মাঠা বিক্রি করে থাকেন। আব্দুল কাইউম বলেন, তিনি মাঠা তৈরি করেন দুধ, চিনি, টক দই, লবণ ও এলাচ দিয়ে। সুস্বাধু হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় তার মাঠা। সাধারণ সময়ে দিনে ২০০ থেকে ২৫০ লিটার মাঠা বিক্রি করলেও রমজানে তা বেড়ে ৩০০ থেকে ৩৫০ লিটার হয়েছে। প্রতি গ্লাস ২০ টাকা ও লিটার ১০০ টাকা হিসেবে বিক্রি করেন। এতে দিনে প্রায় ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকার মাঠা বিক্রি হয় তার।
পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থী জায়েদ ইমরান বলেন, ইফতারের সময় মাঠা আমার ভীষণ পছন্দ। সারাদিন রোজা রাখার পর তৃষ্ণা মেটাতে প্রায় দিনই মাঠা কিনে নিয়ে যাই।
Advertisement
রংপুর নগরীর কাচারী বাজার এলাকার মহুয়া ও মতি বেকারির লাল রঙের হালুয়া এবার রয়েছে বেশ জনপ্রিয়তার তালিকায়। রংপুর নগরীর মৌবন এলাকায় ইফতার বিক্রির দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, সব ধরনের ইফতারের সঙ্গে প্রায় প্রত্যেকে কম-বেশি চাহিদা অনুযায়ী ক্রয় করছেন লালচে হালুয়া। হালুয়ার সঙ্গে বিভিন্ন মুখরোচক ইফতারের সমারহে রংপুর নগরীর কাচারী বাজার জমজমাট।
ইফতার কিনতে আসা ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ইফতারে হালুয়া বেশ পছন্দের। প্রায় দিনই এখান থেকে হালুয়া কিনি।
স্বাদ কানন হোটেলের ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম বলেন, আল্লাহর রহমতে সব ধরনের আইটেমের ইফতার ভালো বিক্রি হচ্ছে। তবে এর মধ্যে হালুয়াটি সবাই চেয়ে নিচ্ছে। বিশেষভাবে তৈরি লালচে রঙের এই হালুয়া খেতে যেমন সুস্বাদু দেখতেও বেশ আকর্ষণীয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে হালুয়া ৩৫০-৪০০ টাকা কেজি, জিলাপি ১৮০-২০০ টাকা কেজি, বু্ন্দিয়া ১৫০-১৬০ টাকা, ঘি দানা ৩০০ টাকা, ছানা পোলাও ২৫০ টাকা, সাদা ছানা পোলাও ৩২০ টাকা, ছোলা বুট ১৫০ টাকা কেজি, বোরহানি প্রতি লিটার ১৬০ টাকা, মাঠা ১০০ টাকা, বুট বিরিয়ানি ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া রংপুরের ভোজনরসিক মানুষের ইফতারে জায়গা করে নিয়েছে হালিম। রোজার মাসে ইফতারে অনেকেই হালিম খেতে পছন্দ করেন। মুখরোচক খাবার হিসেবে হালিমের জুড়ি নেই। সারাদিন রোজা রাখার পর মুখে রুচি বাড়াতে ইফতারে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে অনেকেই রাখেন মুখরোচক এই হালিম।
রংপুরের প্রায় হোটেলে হালিম পাওয়া গেলেও মহুয়ার হালিমের সুনাম নগরময়। নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভোজনরসিকরা এসে স্বাদ নেন এই হালিমের।
রংপুর নগরীর মৌবন এলাকা ছাড়াও নগরীর সিটি বাজার, শাপলা চত্বর ও স্টেশন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকার হোটেল ও বেকারিগুলোর সম্মুখে প্যান্ডেল-গেট ও আলোকসজ্জার ডেকোরেশন করে নানা রকমের মুখরোচক ইফতার সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। এবারের রমজানের ইফতার বাজারে এসব দোকানের বেচাকেনাও বেশ জমে উঠেছে।
এফএ/এএসএম