কোরআন নাজিলের মাস রমজান। তাই রমজান যেমন রোজার মাস, তেমনি পবিত্র কোরআনের মাসও বটে। রমজান মাসের সঙ্গে আল কোরআনের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় ও গভীর। মাসটি রহমত, বরকত, নাজাত, মাগফেরাতের মাস। বিশেষভাবে কোরআনের মাস। তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জনের মাস।
Advertisement
রমজান মাসে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোরআন তেলাওয়াত করতেন। জিবরিল আলাইহিস সালাম নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কোরআন তেলাওয়াত শোনাতেন। নবিজিও জিবরিল আলাইহিস সালামকে কোরআন তেলাওয়াত করে শোনাতেন।
রমজান মাসে কোরআন নাজিল হয়। এই রমজান মাসেই ঐশীগ্রন্থ আল-কোরআন সংরক্ষিত ফলক বা ‘লওহে মাহফুজ’ থেকে প্রথম আসমানে নাজিল হয়েছিল। ফলে রমজান পবিত্র কোরআন নাজিল বা অবতরণের সম্মানে সম্মানিত মাস।
এ কারণেই রমজানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোরআন চর্চার পরিমাণ বাড়িয়ে দিতেন। তিনি অধিক পরিমাণ কোরআন তেলাওয়াত করতেন এবং ফজরের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত মসজিদে নববিতে সাহাবিদের কোরআন শিক্ষা দিতেন। প্রতি রমজানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও জিবরিল আলাইহিস সালাম পরস্পরকে কোরআন শোনাতেন।
Advertisement
১. হজরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘তার পিতা তাকে বলেছেন, প্রতি রমজানে জিবরিল আলাইহিস সালামকে একবার কোরআন তেলাওয়াত করে শোনাতেন। কিন্তু মৃত্যুর বছর তিনি তাকে দুবার কোরআন শোনান।’ (বুখারি ৬২৮৫)
২. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর অপর এক বর্ণনায় এসেছে, রমজানের প্রতি রাতে জিবরিল আলাইহিস সালাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে দেখা করতেন। তাঁরা পরস্পরকে কোরআন শোনাতেন।’ (বুখারি)
আল্লামা ইবনে রজব রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এই হাদিসটি প্রমাণ করে যে, রমজানে কোরআন শিক্ষা করা এবং তার জন্য একত্র হওয়া তথা কোরআন শিক্ষার আসর করা মুস্তাহাব। (লাতায়িফুল মায়ারিফ, রোজা অধ্যায়)
৩. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিবরিল আলাইহিস সালামকে কোরআন শোনাতেন রাতের বেলা। সুতরাং রমজানে দিনের চেয়ে রাতে কোরআন তেলাওয়াত উত্তম প্রমাণিত হয়।
Advertisement
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর সাহাবি ও পূর্ববর্তী বুজুর্গদের কাছে নামাজে তেলাওয়াত করাটাই অধিক প্রিয় ছিল। তবে রমজানে তারা নামাজের বাইরেও অনেক বেশি কোরআন তেলাওয়াত করতেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানে দীর্ঘ তেলাওয়াতে নামাজ আদায় করতেন। বিশেষত তাহাজ্জুদের নামাজ দীর্ঘ তেলাওয়াতে আদায় করতেন। কখনো কখনো এত দীর্ঘ তেলাওয়াত করতেন যে দুই রাকাত নামাজে পুরো রাত কেটে যেত। হাদিসে পাকে এসেছে-
৪. হজরত হুজায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, তিনি এক রাতে (রমজানের) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে নামাজ আদায় করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুরা বাকারা তেলাওয়াত করলেন, এরপর সুরা নিসা এবং এরপর সুরা আল-ইমরান। যখনই কোনো ভীতি প্রদর্শনের আয়াত এসেছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। তিনি বলেন, দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে করতে বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু এলো এবং নামাজের জন্য আজান দিল। (বায়হাকি)
এ ছিল রমজানে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোরআন তেলাওয়াতের নমুনা। তিনি রাতভর নামাজে দীর্ঘ কোরআন তেলাওয়াত করতেন।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, রমজানে রাতের বেলা বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা। দীর্ঘ কেরাতে নামাজ আদায় করা। কোরআন বিশুদ্ধভাবে শেখা ও শেখানো।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজানে কোরআন তেলাওয়াতের হক যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম