বাগেরহাটের ফকিরহাটে পতিত জমিতে সূর্যমুখী চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন চাষিরা। এতে একদিকে যেমন আয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে পতিত অনাবাদি জমি কাজে লাগিয়ে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা। আর কোলেস্টেরলমুক্ত তেল উৎপাদন করে ক্ষতিকর পামওয়েল ও সয়াবিনের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবেন ভোক্তারা।
Advertisement
কৃষি বিভাগ বলছে, সূর্যমুখীর ফলন দেখে তেল জাতীয় ফসল উৎপাদনে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। পতিত জমিতে সূর্যমুখীর এমন বাম্পার ফলন দেখে ও কম পুঁজি বিনিয়োগে বেশি লাভবান হওয়ায় সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ বাড়ছে এ অঞ্চলের মানুষের।
ফকিরহাট উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ফকিরহাট উপজেলায় ১৫০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে সূর্যমুখীর। এরমধ্যে সরকারি প্রণোদনায় ১ হাজার ৩০ জন চাষি সূর্যমুখীর চাষ করেছেন ১৩৭ হেক্টর জমিতে। এসব জমিতে বাম্পার ফলনও হয়েছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে সূর্যমুখী চাষে লাভের আশা
Advertisement
ফকিরহাটের লখপুর এলাকার সূর্যমুখী চাষি মোতালেব মোড়ল জানান, সরকারি প্রণোদনার মাধ্যমে বীজ ও সার পেয়ে এবছর প্রথম সুর্যমূখীর চাষ করেছেন তিনি। প্রথমে তেমন আগ্রহ না থাকলেও ফলন দেখে অনেক ভালো লাগছে। প্রতিটি গাছে অনেক বড় বড় ফুল হয়েছে। ফুলের মনোরম দৃশ্য দেখতে ও ছবি তুলতে প্রতিদিন ভিড় করছেন অনেকেই। আবহাওয়া ও বাজার ভালো থাকে অনেক টাকা লাভ হবে। তার মতো আরও কৃষক সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হয়েছেন। ভবিষ্যতে বৃহৎ পরিসরে চাষ করবেন বলে তিনি জানান।
স্থানীয় কৃষক রহমান শেখ জানান, ধান ওঠার পর পড়ে থাকা জমিতে এবছর সূর্যমুখীর বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সূর্যমুখী তেলের গুণাগুণ শুনে ও বাম্পার ফলন দেখে তিনিও আগামী বছর সূর্যমুখী চাষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ফকিরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাছরুল মিল্লাত জানান, তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় সরকারের প্রণোদনা ও কৃষি বিভাগের নজরদারিতে পতিত জমিতে সূর্যমুখীর বাম্পার ফলন হয়েছে। সূর্যমুখীর বীজ থেকে উৎপাদিত তেলে লিনোলিক অ্যাসিড থাকে যা হার্টের জন্য ভালো। সূর্যমুখী তেলের উৎপাদন বাড়লে মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত তেল পাবে, চাষিরাও লাভবান হবেন। কম খরচে বেশি লাভের সুযোগ থাকায় ফকিরহাটের অনেকেই সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
আরও পড়ুন: অনুর্বর মাটিতে ভেন্না চাষ করবেন যেভাবে
Advertisement
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোহন কুমার ঘোষ বলেন, ‘সরকার ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে তেল জাতীয় ফসলের চাষাবাদ বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। কৃষকদের প্রণোদনার মাধ্যমে বীজ, সার ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এবছর ফকিরহাটে সূর্যমুখীর বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতিটি গাছে ফুল ফোটার পর বাগানগুলো অপরূপ সৌন্দর্য ধারণ করেছে।’
এভাবে প্রণোদনার মাধ্যমে পতিত জমিতে তেল জাতীয় ফসল সূর্যমুখীর চাষাবাদের আওতায় আনতে পারলে একদিকে আয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
আব্দুল্লাহ আল ইমরান/এসইউ/এমএস