অর্থনীতি

থামছে না জেমিনি সি ফুড

শেয়ারের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখিয়েই চলেছে জেমিনি সি ফুড। কোম্পানিটির শেয়ার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। মাত্র সাত কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দাম ৫০ শতাংশের ওপরে বেড়ে গেছে। শেয়ারের এই দাম বাড়াকে অস্বাভাবিক বলছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না, বরং কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েই চলেছে।

Advertisement

প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের এই দাম বাড়ার পেছনে কোনো বিশেষ চক্র রয়েছে বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা খুবই কম। অল্প সংখ্যক শেয়ার হওয়ার কারণে বিশেষ চক্রের পক্ষ এই কোম্পানির শেয়ার দাম খুব সহজে বাড়ানো সম্ভব। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের এ ধরনের কোম্পানিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

এদিকে সপ্তাহের প্রতিটি কার্যদিবসে জেমিনি সি ফুডের শেয়ার দাম বেড়েছে। এতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে দাম বাড়ার শীর্ষ স্থানটি দখল করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি। গত সপ্তাহের লেনদেন শুরু হওয়ার আগে জেমিনি সি ফুডের শেয়ার দাম ছিলো ৫২৮ টাকা ২০ পয়সা। এরপর দাম বাড়তে বাড়তে সপ্তাহ শেষে ৭১৪ টাকা ৮০ পয়সায় থিতু হয়েছে। অর্থাৎ এক সপ্তাহের শেয়ার দাম বেড়েছে ১৮৬ টাকা ৬০ পয়সা বা ৩৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

আরও পড়ুন: জেমিনি সি ফুডের শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম

Advertisement

শুধু গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবস নয়, কোম্পানিটির শেয়ার দাম গত ২৮ মার্চের পর থেকে টানা বাড়ছে। ২৮ মার্চ কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৪৫৬ টাকা ৭০ পয়সা। এ হিসাবে মাত্র সাত কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ২৫৮ টাকা ১০ পয়সা বা ৫৬ দশমিক ৫১ শতাংশ।

কোম্পানিটির শেয়ারের এই দাম বৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক বলছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। সেই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করতে ডিএসই থেকে সতর্কবার্তাও প্রকাশ করা হয়েছে। অবশ্য ডিএসই সতর্কবার্তা প্রকাশ করলেও তাতে কোনো কাজ হয়নি। উল্টো দাম বাড়ার পালে আরও হাওয়া লেগেছে।

গত ৫ ও ৬ এপ্রিল দুই দফায় ডিএসই থেকে বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে সতর্কবার্তা প্রকাশ করা হয়। সতর্কবার্তায় বলা হয়, জেমিনি সি ফুডের শেয়ারের দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষকে নোটিশ করা হয়। জবাবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সম্প্রতি শেয়ারের যে অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে তার পেছনে অপ্রকাশিত কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। ডিএসই থেকে এই সতর্কবার্তা প্রকাশ করার পরও ৫ ও ৬ এপ্রিল দুই দিনই কোম্পানিটির শেয়ার দাম দিনের সর্বোচ্চ পরিমাণ বাড়ে।

আরও পড়ুন: বিনিয়োগ-রপ্তানি বাড়াতে বেপজার আরও ৮ কারখানা ভবন

Advertisement

শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০২২ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরে বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ নগদ ও ৩০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছে। তার আগে ২০২১ সালে বিনিয়োগকারীদের মাত্র ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি।

সর্বশেষ প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানিটি ২০২২ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসের ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি ৭ টাকা ১০ পয়সা মুনাফা করেছে।

মাত্র ৬ কোটি ১০ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের এই কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৬১ লাখ ৫ হাজার ২০৬টি। এর মধ্যে ৩০ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ শেয়ার আছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৪০ দশমিক ৭২ শতাংশ। আর ২৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ আছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে। এছাড়া দশমিক ৩৩ শতাংশ আছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে।

গত সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৯৮ কোটি ৫৭ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। আর প্রতি কার্যদিবসে গড়ে লেনদেন হয়েছে ১৯ কোটি ৭১ লাখ ৫১ হাজার টাকা।

এদিকে গত সপ্তাহে দাম বাড়ার শীর্ষ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা অ্যাপেক্স ফুডের শেয়ার দাম বেড়েছে ১৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ। ১৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ দাম বাড়ার মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বিডি অটোকার।

এছাড়া দাম বাড়ার শীর্ষ দশে স্থান করে নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আমরা নেটওয়ার্কের ১৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ, মিডল্যান্ড ব্যাংকের ১৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ, রহিম টেক্সটাইলের ১৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ১৪ দশমিক ২১ শতাংশ, সোনালী আঁশের ১৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং বাংলাদেশ ল্যাম্পের ১২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ দাম বেড়েছে।

এমএএস/এমএইচআর/জেআইএম