অর্থনীতি

সবজিতে মিলছে না হিসাব

বাজারে গেলে চোখে পড়বে কাঁকরোল। খেতে চাইলে গুনতে হবে প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা! আশ্চর্য হলেও উপায় নেই। রমজানে খুব অস্বস্তি দিচ্ছে সবজির দাম। কোনোভাবেই যেন কমছে না, মিলছে না ক্রেতা-বিক্রেতা কারও হিসাব নিকাশ।

Advertisement

শুক্রবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগ, হাজিপাড়া ও রামপুরা এলাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

রামপুরা বাজারের সবজি বিক্রেতা হালিম মিয়া বলেন, স্বাভাবিক সময়ে সবজির এতো দাম কখনো দেখিনি। রমজান হিসেবে দাম কম হওয়ার কথা। কারণ রমজানের শেষের দিকে সবজির চাহিদা কমে যায়। তারপরও এতো দাম কেন বুঝতে পারছি না।

তিনি বলেন, আলু আর পেঁপে ছাড়া কোনো সবজি ৬০ টাকার নিচে নেই। বেশিরভাগ সবজির কেজি ৮০ টাকার ওপরে।

Advertisement

তবে ব্যবসায়ীদের এমন কথার সঙ্গে একমত নন ক্রেতারা। তারা বলছেন, বিভিন্ন অজুহাতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ান ব্যবসায়ীরা। এখনো তা-ই করছেন। কোথাও সবজির সরবরাহ কম নয়, সেজন্য দামের এ ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা কোনো যৌক্তিক কারণে- এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। বিক্রেতারা ইচ্ছা করেই দাম বাড়িয়ে দেন।

মালিবাগ বাজারে কথা হয় আব্দুস সালাম নামের এক ক্রেতার সঙ্গে। জাগো নিউজকে আব্দুস সালাম বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের উদ্যোগ বা ঠিকমতো বাজার মনিটরিং না করায় বাজারের এমন অবস্থা। ওরা বাজারে আসেন আর লোকদেখানো কাজ করেন। প্রকৃতপক্ষে মানুষের পকেট কাটার আখড়া যে বাজার- সেটা তারা দেখেন না।

রমজানে বাজারগুলোতে দুপুরের পরপরই ভিড় বেশি বাড়ে। শুক্রবার দুপুরের পর দেখা যায় কেউ কেনাকাটায় ব্যস্ত, কেউবা পণ্য দেখছিলেন ঘুরে ঘুরে। এর মধ্যেই হঠাৎ একটি দোকানে চোখ আটকে গেলো অনেকের। সবজি বিক্রেতার সঙ্গে এক ক্রেতার বাকবিতণ্ডা চলছে কাঁকরোলের দাম নিয়ে।

কাছে গিয়ে জানা গেলো, ২২০ টাকা দাম চাওয়াতে চটেছেন ওই ক্রেতা। কীভাবে দাম এত হয়, সেটা বিক্রেতা অফজাল হোসেনের কাছে জানতে চেয়েছেন। বিক্রেতা বলছেন, আমার কেনা বেশি দামে, বিক্রিও বেশি দামে। এ নিয়েই দুজনের মধ্যে চলছিল বচসা।

Advertisement

কথা হয় ওই ক্রেতা আলম হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। এত টাকা দিয়া সবজি কিনমু ক্যামনে। আর কোনো সবজির কেজি ক্যামনে এত হয়। সোনা দিয়ে মুড়ে চাষ করেছে?’

তিনি বলেন, ‘পেপে আর কুমড়ার ফালি শুধু এখন কমে পাওয়া যায়। এগুলা খাইতে খাইতে জান শেষ। অন্য যেটাই কিতে যাই বলে ৮০ টাকা কেজি!’

বাজার ঘুরেও আলম হোসেনের কথার প্রমাণ মিললো। এরমধ্যে কাঁকরোল ছাড়াও আরেক সবজির দাম খুব বেশি দেখা গেছে। সেটা ধুন্দল। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা দরে।

এছাড়া বরবটি, ভেন্ডি, কচুর লতি, উচ্ছে, শজনে, ঝিঙে ও চিচিঙ্গা ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া প্রতি কেজি পটল, বেগুন ও একপিস ফুলকপি কোথাও ৬০ টাকা আবার কোথাও কোথাও ৭০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

অন্যদিকে কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি শসা (দেশি) ৬০ টাকা, টমেটো দেশি ৬০, মরিচ ৮০ থেকে ১২০, আলু ২৫-৩০, পেঁপে ৪০-৫০ এবং প্রতিটি লাউ ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সবজি বিক্রেতা হুমায়ূন বলেন, রোজার শুরুতে দুই সপ্তাহ আগে বেগুন, শসার দাম ছিল আরও বেশি। অন্য সবজিগুলোর দাম ছিল (বর্তমান দাম থেকে) সামান্য বেশি।

তিনি বলেন, এখন আমরা সবজির দাম বেশি রাখছি, ব্যাপারটা এমন নয়। এবার শীতের শুরু থেকেই সবজির দাম বেশি। তাই আড়ত থেকে সবজি কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। ফলে বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে। এবার উৎপাদন কম হওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি এ বিক্রেতার।

হুমায়ূন আরও বলেন, আর এক সপ্তাহ পরে সবজির দাম কমবে বলে আশা করছি। কারণ তখন মানুষ গ্রামে যাবে। ঢাকায় সবজির চাহিদা কমে যাবে।

মাছের বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সেখানেও মাছের বাড়তি দাম কমেনি। এছাড়া ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২১০-২২০ টাকার মধ্যে। পাশাপাশি গরুর মাংস ৭৫০ টাকা ও খাসির মাংস এক হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

এনএইচ/কেএসআর/এএসএম