২০১২ সালে এশিয়া কাপের ফাইনাল থেকে পাহাড়সম আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল মুশফিক-সাকিবরা। শেষ বল পর্যন্ত দুর্দান্ত লড়াই করে মাত্র ২ রানে হেরেছিল তারা। সে ম্যাচের স্মৃতি আজও কাঁদায় বাংলাদেশের হাজারো ক্রিকেটপ্রেমীদের। চার বছর পর আবার এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশ। বদলেছে প্রতিপক্ষ, বদলেছে ক্রিকেটের সংস্করণ। সেই সঙ্গে বদলেছে টাইগাররা। গত বছর থেকেই ওয়ানডেতে দুর্দান্ত খেলছেন তারা। টি-টোয়েন্টিতে সর্বশেষ টানা তিন ম্যাচ জিতে বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছে নিজেদের উন্নতির ছাপ। নতুন বাংলাদেশ এবার নতুন স্বপ্ন নিয়ে রোববার মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ভারতের মোকাবেলায় নামবে।প্রথমবারের মত এবারের এশিয়া কাপ আয়োজিত হচ্ছে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে। এ সংস্করণে বোলার মত সাফল্য নেই বললেই চলে টাইগারদের। তাই এ আসরে নামার আগে বাংলাদেশকে নিয়ে এতদূর ভাবেন কেউ। কিন্তু সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ। যোগ্য দল হিসাবেই ফাইনাল খেলছে তারা। প্রথম ম্যাচে হারের পর সামান্য হতাশাও দলে ঢুকতে দেননি মাশরাফি। সূর্যকে আড়াল করে যেমন মেঘ এনে দেয় এক টুকরো ছায়া, তেমনি মাশরাফিও ছায়া হয়ে আটকে রেখেছেন সকল হতাশাকে।তবে মাঠে নামার আগে ইনজুরি ভাবাচ্ছে বাংলাদেশ শিবিরকে। আগের দিন অনুশীলনে চোট পেয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। এর আগে এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে গেছেন দলের সেরা পেস বোলার মুস্তাফিজুর রহমান। চোট সমস্যা রয়েছে ভারতেও। তবে বড় ধরণের ইনজুরিতে কেউ না থাকায় সেরা তারকা সবাইকেই পাচ্ছে তারা। তবে মাশরাফি বেশি ভাবছেন ফাইনালের মত বড় ম্যাচ না খেলার অভিজ্ঞতাকে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই ধরণের টুর্নামেন্টে আমাদের ফাইনাল খেলা খুব বিরল। এইরকম পরিস্থিতিতে অনেক সময় ঘাবড়ে যাবার একটা সুযোগ থাকে। কি করতে হবে এই ভেবে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া। আমার মতে, এই ধরণের ফাইনাল তারাই জেতে যারা সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করে না। সিদ্ধান্ত মানে প্রয়োজনের সময় আগ্রাসী সিদ্ধান্ত নিতে কখনো সংশয়ে ভোগে না। আমরা চেষ্টা করব যেভাবে খেলেছি, সেভাবেই স্বাধীন থেকে খেলতে। এত বড় ম্যাচ খেলার অভ্যাস যেহেতু খুব বেশি নেই, আমরা চেষ্টা করছি চাপটা থেকে যেন যতটা মু্ক্ত থাকা যায়।’চাপে থাকলেও নিজদের সেরাটা দিতে পারলে যে কোন দলকে হারাতে পারেন তা ভালো করেই জানেন অধিনায়ক। এ ম্যাচে ভারতকে পরিস্কার ফেভারিট মেনেই মাঠে নামবেন তারা। তবে নিজেদের উপর আত্মবিশ্বাস রয়েছে অধিনায়কের। বলেন, ‘মুস্তাফিজের জায়গায় গত ম্যাচে তাসকিন-আল আমিন সবাই ভালো করেছে। এটা একটা দলের জন্য ভালো ব্যাপার যে, সেরা বোলারটি না থাকার পরও অন্যরা দায়িত্ব নিচ্ছে ও পারফর্ম করছে। এটা ভালো লক্ষণ। টপ অর্ডারে সাকিব-তামিম-সৌম্য-সাব্বির-মুশফিক, সবাই ম্যাচ বদলে দিতে পারে। সবাই নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে ভালো ম্যাচ হবে।’সাম্প্রতিক সময়ের পারফরমেন্সেও অনেক এগিয়ে ভারত। ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম সংস্করণে দুর্দান্ত খেলছে তারা। কিছুদিন আগেই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তিন ম্যাচের সিরিজে স্বাগতিকদেরই হোয়াইটওয়াশ করেছে টিম ইন্ডিয়া। এশিয়া কাপের চারটি ম্যাচেই সহজ জয় পেয়েছে তারা। তাই আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থেকেই মাঠে নামবে তারা। অপরদিকে সর্বশেষ তিনটি টি-টোয়েন্টি সিরিজের কোনটিতেই জিততে পারেনি বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজের হোয়াইটওয়াশ হবার পর দুর্বল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও দুটি সিরিজেই জয়হীন থাকে টাইগাররা। তবে এশিয়াকাপের মঞ্চে এসে ঘুরে দাঁড়ায় দলটি। প্রথম ম্যাচ হারলেও পরের টানা তিন ম্যাচ জিতে নিয়ে দারুণ আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ।তবে ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে ইতিহাস বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলছে না। টি-টোয়েন্টি পরিসংখ্যান ভালো নয় তাদের। ৫৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে জয় মাত্র ১৮টিতে, আর পক্ষান্তরে হার ৩৫টি। ভালো নয় ভারতের বিপক্ষে খেলার ফলও। এর আগে তিনবার লড়াইয়ে তিনবারই সহজ জয় পায় ধোনি বাহিনী। এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বেও ৪৫ রানের বড় ব্যবধানে বাংলাদেশকে হারায় ধোনি বাহিনী। এর আগে ২০০৯ ও ২০১৪ সালে আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের মোকাবেলা করে সহজ হার মানে টাইগাররা।তবে যত হিসাব-নিকাশে পিছিয়ে থাকুক বাংলাদেশ, নির্দিষ্ট দিনে যারা ভালো খেলবে তারাই জিতবে ম্যাচ। মাঠে হারার আগে হারবে না বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স এমনটাই আভাস দিচ্ছে বিশ্বকে। তাই উত্তাল মার্চ মাসে আরও একবার বিজয়ের সুর বাজাতে বদ্ধ পরিকর মাশরাফিরা।আরটি/এমআর/আরআইপি
Advertisement