মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে সাতবার। এই প্রকল্পের ব্যয়ও বাড়লো দুই হাজার ১৬৮ কোটি টাকা। প্রথমে এক হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হলেও এখন মোট ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৮২৬ কোটি টাকা। ফলে ধাপে ধাপে এ খাতে দুই হাজার ১৬৮ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়েছে।
Advertisement
সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেসিপ) প্রকল্পের আওতায় এই ব্যয় বাড়িয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। পরিকল্পনা কমিশন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়ন, দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও সমান সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে সার্বিক মানোন্নয়নের মাধ্যমে একটি আধুনিক মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলে বাংলাদেশের দারিদ্র্যবিমোচনে সহায়ক ভূমিকা পালন করা। ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি সময়ও বৃদ্ধি করা হয় প্রকল্পের। সমগ্র বাংলাদেশে মূল অনুমোদিত প্রকল্পটি ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর নাগাদ বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। এরপর ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে আবারও ২০২৮ সালের ডিসেম্বর নাগাদ মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়।
আরও পড়ুন> শিক্ষার মানদণ্ড নির্ধারণ করলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়
Advertisement
২য় সংশোধনীতে ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে আবারও ২০২০ সালের ডিসেম্বর নাগাদ মেয়াদ বৃদ্ধি (২য় বার), ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। এরপরে ২০২১ সালের ডিসেম্বর ২০২২ সালের ডিসেম্বর এবং ২০২৩ সাল নাগাদ মেয়াদ বাড়ানো হয়।
প্রকল্পটির প্রধান কাজ হচ্ছে কারিকুলামের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ১৫টি বিষয়ে টিচার্স গাইড প্রণয়ন। স্টাডিস অ্যান্ড সাবকন্ট্রাক্ট, উপবৃত্তি, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও কার্যক্রম বিকেন্দ্রীকরণ ও অনলাইন ব্যবস্থাপনা, স্কুল মনিটরিং ও সুপারভিশন জোরদারকরণে মাঠ পর্যায়ে জনবল নিয়োগ, সাধারণ স্কুল-মাদরাসায় ভোকেশনাল ও প্রি-ভোকেশনাল কোর্স চালু করা। পিছিয়ে পড়া স্কুল-মাদরাসার জন্য রিসোর্স টিচার প্রোগ্রাম যেমন, ইংরেজি, গণিত অথবা বিজ্ঞান বিষয়ে একজন করে শিক্ষক নিয়োগ। এছাড়া অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যেমন জেলা শিক্ষা অফিস ভবনের সম্প্রসারণ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন: বান্দরবান জেলা শিক্ষা অফিস ভবন নির্মাণ। চারটি মহানগরে নতুন থানা শিক্ষা অফিস স্থাপন, বিদ্যালয়/মাদরাসায় অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ, কারিগরি শিক্ষার বিস্তরণ (ভবন নির্মাণ) এবং আইসিটি লার্নিং সেন্টার স্থাপন।
আরও পড়ুন> শিক্ষার্থীদের ভিত শক্ত হয় এমনভাবে শিক্ষা দেবেন : প্রধানমন্ত্রী
প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে কোভিড-১৯ অতিমারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে প্রকল্পের নির্ধারিত কাজ শেষ না হওয়া এবং আন্তঃঅঙ্গ ব্যয় খাত সমন্বয়সহ প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি।
Advertisement
পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রকল্পটি মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগত মান, দক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং সমান সুযোগেরভিত্তিতে সার্বিক মানোন্নয়নের মাধ্যমে একটি অধিক প্রাসঙ্গিক মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলে বাংলাদেশের দারিদ্র্যবিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের অগ্রগতি ৮৯ শতাংশ হয়েছে। কিন্তু কোভিড-১৯ অতিমারির প্রাদুর্ভাবের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে প্রকল্পটির অগ্রগতি শ্লথ ও প্রলম্বিত হয়ে পড়ে। সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন নীতির কারণে কতিপয় আবশ্যকীয় প্রশিক্ষণ, কর্মশালা, আইসিটি টেকসইকরণ কর্মসূচি ও ভোকেশনাল কর্মসূচি বাস্তবায়ন অসম্পন্ন রয়েছে। এমতাবস্থায়, প্রকল্পের কর্মসূচির শতভাগ বাস্তবায়ন ও এর অর্জনসমূহ টেকসইকরণের লক্ষ্যে প্রকল্পের কার্যকর ও টেকসই সমাপ্তি আবশ্যক।
এমওএস/এসএনআর/বিএ/এমএস