আন্তর্জাতিক

রাশিয়ার ‘শুভবুদ্ধির উদয়ে’ চীনেই ভরসা পশ্চিমাদের

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন থামাতে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাহায্য চেয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমান্যুয়েল ম্যাক্রোঁ। বেইজিং সফররত ফরাসি প্রেসিডেন্ট জিনপিংয়ের উদ্দেশে বলেছেন, আমি জানি, রাশিয়ার শুভবুদ্ধির উদয় ঘটাতে এবং সবাইকে আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনতে আপনার ওপর ভরসা করতে পারি। আর জিনপিং বলেছেন, বিশ্বশান্তি রক্ষার ‘দায়িত্ব ও সামর্থ্য’ রয়েছে চীন এবং ফ্রান্সের। খবর বিবিসির।

Advertisement

যদিও মস্কো বলছে, এখন পর্যন্ত ‘শান্তিপূর্ণ মীমাংসার কোনো লক্ষণ নেই’ এবং তাদের আক্রমণ অব্যাহত থাকবে।

কয়েক বছর ধরে চীনের সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা না জানানোয় বেইজিংয়ের ওপর আরও ক্ষিপ্ত হয়েছে পশ্চিমারা। তবে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এখন সম্পর্কোন্নয়নের উপায় খুঁজছেন। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতেও আগ্রহী তিনি।

আরও পড়ুন>> চীনে তেল রপ্তানিতে সৌদিকে পেছনে ফেললো রাশিয়া

Advertisement

বেইজিং সফরে ম্যাক্রোঁর সঙ্গী হয়েছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন। চীনের নেতাদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) বেইজিংয়ে বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজের মাধ্যমে সম্মান জানানো হয় ফরাসি প্রেসিডেন্টকে। এরপর চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন তিনি। চীনা ও ফরাসি কর্মকর্তারা এ বৈঠককে ‘খোলামেলা’ ও ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ বলে বর্ণনা করেছেন। পরে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন দুই প্রেসিডেন্ট।

বেইজিংয়ে সামরিক কুচকাওয়াজ পরিদর্শনে জিনপিং ও ম্যাক্রোঁ। ছবি সংগৃহীত

শি জিনপিং বলেন, চীন শান্তি আলোচনার পক্ষে এবং সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান চায়। এসময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে ‘যৌক্তিক সংযম’ প্রত্যাশা করেন বলে জানান তিনি। সংঘাতে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন চীনা প্রেসিডেন্ট।

Advertisement

আরও পড়ুন>> সৌদি-ইরানকে এক করলো চীন, পশ্চিমাদের মাথাব্যথা

ম্যাক্রোঁ বলেন, যতদিন ইউক্রেন দখলে থাকবে, ততদিন আমরা নিরাপদ ও স্থিতিশীল ইউরোপ পাবো না। আর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক সদস্যই সংস্থার সনদ লঙ্ঘন করছে, এটি একেবারে অগ্রহণযোগ্য।

ফরাসি নেতা এদিন যথেষ্ট নমনীয় সুরে কথা বলেছেন। বক্তব্যের মধ্যে একাধিকবার তিনি শি জিনপিংয়ের দিকে তাকান এবং সরাসরি চীনা প্রেসিডেন্টের উদ্দেশে কথা বলেন। তবে আচরণের দিক থেকে পুরোপুরি তার বিপরীত ছিলেন জিনপিং। এদিন চীনা প্রেসিডেন্টকে অনেকটাই নির্বিকারভাবে বক্তব্য রাখতে দেখা গেছে।

পরে এক পৃথক সংবাদ সম্মেলনে ভন ডার লিয়েন বলেছেন, চীন রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করলে তা হবে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং এটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীনের মধ্যে সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য অবনতি ঘটাবে।

আরও পড়ুন>> চীনকে ঠেকাতে একাট্টা যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য-অস্ট্রেলিয়া

ইউরোপীয় কমিশন প্রধান আরও বলেছেন, তিনি আশা করেন, বেইজিং এমন ভূমিকা পালন করবে যা ‘ন্যায়সঙ্গত শান্তির প্রচার করে’।

ভন ডার লিয়েন বলেছেন, তার সঙ্গে বৈঠকের সময় জিনপিং ‘সঠিক পরিস্থিতি ও সময় হলে’ ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলার ‘ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করেছেন’।

এদিকে, রাশিয়াও স্বীকার করেছে, আলোচনায় মধ্যস্থতার জন্য ‘অত্যন্ত কার্যকর ও নেতৃস্থানীয় সম্ভাবনা’ রয়েছে চীনের।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, কিন্তু ইউক্রেনের পরিস্থিতি জটিল। এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ মীমাংসার কোনো সম্ভাবনা নেই। যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া ছাড়া আপাতত রাশিয়ার আর কোনো উপায় নেই।

কেএএ/