লাইফস্টাইল

এবারের ঈদে নারীদের যত ট্রেন্ডি পোশাক

ঈদ মানেই খুশি। আর ঈদ মানেই নতুন নতুন জামা। অনেকেই হয়তো ঈদের পোশাক এরই মধ্যে কিনে ফেলেছেন, আবার অনেকে কেনার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

Advertisement

তবে ঈদের পোশাক কেনার আগে জেনে নেওয়া দরকার, এবারের ঈদ ফ্যাশন ট্রেন্ডে কোন পোশাকগুলো প্রাধান্য পেয়েছে-

আরও পড়ুন: যে রঙের পোশাক পরলে গরমেও শরীর থাকে ঠান্ডা

কাঞ্চিপুরম শাড়ি

Advertisement

কাঞ্চিপুরম সিল্ক শাড়ি ভারতের তামিলনাড়ুর কাঞ্চিপুরম অঞ্চলে তৈরি এক ধরনের রেশম শাড়ি। এই শাড়িগুলো খাঁটি তুঁত সিল্কের সুতো থেকে বোনা হয়। একরঙা কিংবা চওড়া কনট্রাস্ট পার দেওয়া এই শাড়িগুলো দেখলেই যেন চোখ জুড়িয়ে যায়।

তবে পুরো শাড়ি জুড়েই থাকে নানা নকশা ও জরি সুতার কাজ। কাঞ্চিপুরমের শাড়ির দাম বিভিন্ন কাজের উপর নির্ভর করে যেমন রং, নকশা, জরি সুতার মতো ব্যবহৃত উপাদান ইত্যদি।

শাড়িভেদে একেকটি কাঞ্চিপুরমের দাম ২০০০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ছাড়াতে পারে। বর্তমানে অনলাইনের বিভিন্ন পেইজ’সহ মার্কেটেও এখন কাঞ্চিপুরম শাড়ি পেয়ে যাবেন।

নায়রা কাট ড্রেস

Advertisement

অনলাইন’সহ বিভিন্ন মার্কেটে এখন জনপ্রিয়তা বেড়েছে নায়রা কাট ড্রেসের। এবারের ঈদের ট্রেন্ডি পোশাকগুলোর মধ্যে নায়রা কাট ড্রেস অন্যতম।

আরও পড়ুন: গরমে যেসব পোশাক পরলে আরাম পাওয়া যাবে

অনেকটা লং কামিজের মতোই এই ড্রেসগুলো, তবে কোমর থেকে গাউনের মতো কুচি দেওয়া হয় ঘেরের জন্য। আর কামিজের পাশের কাটা থাকে একটু বাড়তি অর্থাৎ কোমরের উপর পর্যন্ত, সেখান থেকে দেওয়া হয় লম্বা টারসেলযুক্ত ফিতা।

জর্জেট, সিল্ক, লিলেন, সুতি-সিল্ক মিক্স’সহ বিভিন্ন কাপড়ের উপর বাহারি অ্যাম্ব্রোয়েডারি, কারচুপি, হাতের কাজ বিংবা বিভিন্ন ধরনের লেইস দিয়ে ডিজাইন করা হয় এই ড্রেসগুলো।

বিশেষ করে জর্জেটের উপর কারচুপি ও সিকুইন (চুমকি) এর কাজবিশিষ্ট নায়রা ড্রেসগুলোতে ক্রেতারা বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে।

আরও পড়ুন: প্রিয় রং বলে দেবে আপনি কেমন

কাপড়ের কোয়ালিটি ও ডিজাইনের উপর নির্ভর করে নায়রা কাট ড্রেসগুলো অনলাইন ও বিভিন্ন মার্কেটে ৩০০০-১৫০০০ টাকায় কিনতে পারবেন।

সিকুইন শাড়ি

বর্তমানে বিভিন্ন উৎসব কিংবা অনুষ্ঠানে চল বেড়েছে সিকুইন শাড়ির। কেউ একরঙা সিকুইন শাড়িতে মুগ্ধ আবার কেউ মাল্টি কালারের সিকুইনের শাড়ি গায়ে জড়িয়ে নিতে পছন্দ করেন।

মূলত বলিউডের নায়িকারা এ ধরনের শাড়ি বেশি পরেন। এখন সেই শাড়িগুলোই কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন শাড়ির দোকানে ও অনলাইনে। ৩০০০ থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত গড়াতে পারে একেকটি সিকুইন শাড়ির দাম।

আরও পড়ুন: লা রিভের ঈদ কালেকশনে এবার যা থাকছে

আনারকলি

আনারকলি অতীতের ফ্যাশন হলেও এর চহিদা ২০২৩ সালে এসেও কমেনি। এবারের ঈদের টেন্ডি পোশাকগুলোর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে আনারকলি।

প্রিন্টেড জর্জেট কাপড়, সিল্ক, কাতান কিংবা টাই ডাই আনরকলি এখন বিভিন্ন মার্কেটে ও অনলাইনেও পেয়ে যাবেন। কাপড় ও ডিজাইনভেদে একেকটি আনারকলির দাম পড়বে ১৫০০-১০ হাজার পর্যন্ত।

কর্ড ড্রেস বা টু পিস কামিজ-সালোয়ার

একই প্রিন্টের কামিজ ও সালোয়ার কিংবা একরঙা টপ বা প্যান্ট এখন ট্রেন্ডি পোশাকগুলোর মধ্যে অন্যতম। বিভিন্ন অনলাইন বা মার্কেটে পেয়ে যাবেন সুতি, সিল্ক কিংবা জর্জেটের কর্ড ড্রেসগুলো। দাম প্রতি কর্ড ড্রেসগুলোতে পড়বে ১৫০০ থেকে ৫০০০ পর্যন্ত।

আরও পড়ুন: সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে শুধু ভালোবাসাই যথেষ্ট?

লাখনউ ড্রেস

বর্তমানে ফ্যাশনপ্রেমীদের কাছে লাখনউ ড্রেসের কদর বেড়েছে। পাতলা জর্জেটের উপর সুতার হাতের কাজ ও মিরর স্টোন বসানো এই ড্রেসগুলো কোয়ালিটির উপর নির্ভর করে দাম ৩৫০০-১০ হাজার পর্যন্ত গড়াতে পারে।

সাধারণত কামিজ, সারারা ও ওড়না সহ একটি লখনউ সেট পূর্ণতা পায়। চাইলে ওয়ান পিস বা শুধু কামিজ বা হালকা ঘেরের গাউনও পরতে পারেন। এই ড্রেসগুলোর রং সাধারণত একটু হালকা হয়, এজন্য দেখতেও সুন্দর দেখায়।

আগানূর কামিজ সেট

অরগ্যাঞ্জা কাপড়ের উপর সুতা, অ্যাম্ব্রোয়েডারি, সিকুইন, কারচুপি কাজ করা থাকে আগানূরের কামিজে। সাধারণত টু পিস অর্থাৎ কামিজ ও ওড়না মিলে একসেট আগানূরের ড্রেস বিক্রি হচ্ছে মার্কেটে ও অনলাইন।

আরও পড়ুন: ঘামও হতে পারে কঠিন রোগের লক্ষণ, বুঝবেন যেভাবে

কাপড়ের কোয়ালিটি ও নকশার উপর নির্ভর করে একেকটি আগানূরের সেটের দাম পড়তে পারে ৩৫০০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

এই ড্রেসগুলোর কামিজ হালকারঙা ও এর কাজের সঙ্গে মিলিয়ে ওড়না থাকে। খুবই সুন্দর এই ড্রেসগুলো বিভিন্ন উৎসব, অনুষ্ঠানে দারুণ মানিয়ে যায়।

সারারা

হাল ফ্যাশনে জায়গা করে নিয়েছে সারারা ড্রেসগুলো। বাজারে এখন বিভিন্ন ডিজাইন ও ফেব্রিকের সারারা সেট পাওয়া যাচ্ছে।

আরও পড়ুন: গরমে ঘামের দুর্গন্ধ দূর হবে যেভাবে

এর মধ্যে ফ্রিল্ড ডিজাইনার, ক্রপ টপ শাড়ি স্টাইল, লেয়ার ডিজাইনার, অ্যাম্ব্রোয়েডারি ও ক্রিম ডিজাইনার সারারা স্যুট অন্যতম। কাপড় ও ডিজাইনভেদে সারারা সেটের দাম ১২০০-৫০ হাজার টাকা পর্যন্তও পাবেন।

ভারি কাজের পোশাক

চুমকি ও পাথরের কাজ করা ভারী ডিজাইনের পোশাকের প্রতি এখন ঝুঁকছেন তরুণীরা। এবারের ঈদ ফ্যাশনে শর্ট কামিজের সঙ্গে প্যান্ট স্টাইলের সালোয়ার ও নেট, টিস্যু বা অরগ্যাঞ্জার ভারি কাজ করা ওড়নার চল বেশি। থ্রি পিসেও এসেছে নতুনত্ব।

বাহারি ব্লাউজ

ফ্যাশনে এখন শাড়ির সঙ্গে বাহারি ডিজাইনের ব্লাউজের কদর বেড়েছে। শাড়ির সঙ্গে স্টাইলিশ ব্লাউজ, ক্রপড টপ দেখা যাচ্ছে। ব্লাউজের স্লিভেও এসেছে বৈচিত্র্য। শাড়ির নকশায় এসেছে ভ্যালুর অ্যাডিং। ব্লক প্রিন্টের ব্যবহার ফিরে এসেছে আবারও।

আরও পড়ুন: বিবাহিত পুরুষরা কেন অন্যের স্ত্রীর প্রতি আকৃষ্ট হন?

শুধু সুতি নয়, মসলিন, সিল্ক, হাফসিল্কের পোশাকেও এখন পাওয়া যাচ্ছে ব্লকের প্রিন্ট। বিভিন্ন ধরনের শাড়ির দাম এক হাজার থেকে শুরু করে এক লাখ টাকার মধ্যেও পেয়ে যাবেন।

গাউন

লং গাউনের প্রতি চাহিদা বেড়েছে তরুণীদের। জর্জেট থেকে শুরু করে সিল্ক, সাটিনসহ অরগ্যাঞ্জা দিয়ে তৈরি গাউনে মজেছে নারীরা। আবার কারচুপি কাজের আবায়া, বোরখা, গাউন মডেস্ট ফ্যাশনে আগ্রহীরা বেছে নিচ্ছেন এবারের ঈদে।

এর সঙ্গে বাহারি পার্টি হিজাবের কদরও বেড়েছে। অনেকেই এসব হিজাব স্কার্ফ স্টাইলেও ব্যবহার করছেন পোশাকের সঙ্গে। ১৫০০-১০,০০০ টাকার মধ্যে আপনি পছন্দের গাউন পেয়ে যাবেন।

আরও পড়ুন: নারী-পুরুষের শার্টের বোতাম বিপরীত দিকে থাকে কেন?

রেডি টু ওয়ার শাড়ি

ফ্যাশনে এবার রেডি টু ওয়ার শাড়ির জনপ্রিয়তা বেড়েছে। এই শাড়িগুলো মাত্র ২ মিনিটের মধ্যেই আপনি পরতে পারবেন। অনেকটা লেহেঙ্গা ঘরানার এই শাড়িগুলো।

উপরে থাকছে ব্লাউজ বা টপস, এর সঙ্গে নিজে স্কার্ট, যাতে শাড়ির কুচির মতো ডিজাইন করা। এর সঙ্গেই সেট করে দেওয়া আছে শাড়ির আঁচল। ১২০০-১০ হাজার টাকার মধ্যে এমন শাড়ি পেয়ে যাবেন।

মিডিয়াম কুর্তি

এখন যেহেতু গরম, তাই এ সময় লম্বায় মিডিয়াম ধাঁচের কুর্তি বা টপ বেছে নিতে পারেন। এবারের ফ্যাশন ট্রেন্ডে আছে মিডিয়াম কুর্তি, যাতে আছে ফ্রিঞ্জ ডিজাইন। এই ফ্রিঞ্জ ডিজাইন হলো এই জাতীয় টপের বৈশিষ্ট্য।

ফ্রিঞ্জে কারুকাজ থাকলে আপনার উচ্চতাও একটু হলেও বেশি দেখাবে। এই জাতীয় কুর্তির সঙ্গে বেছে নিন স্ট্রেট বা সিগারেট প্যান্ট। ফ্রিঞ্জ ডিজাইনের সঙ্গে খুব ভালোবাবে মানাবে এই বটমওয়্যার। ১০০০-৫০০০ হাজার টাকার মধ্যে ভালো মানের কুর্তি পাবেন।

আরও পড়ুন: পহেলা বৈশাখের পোশাক কেমন হবে?

সালোয়ার-কামিজ

ঈদে একটি হলেও সালোয়ার কামিজ দরকার। আরামদায় এই পোশাক ছাড়া ঈদের ফ্যাশন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। যেহেতু ঈদ খুশির উৎসব; তাই সালোয়ার কামিজের রং ও মেটেরিয়াল বেছে নিন। যেটা এই খুশির দিনের সঙ্গে মানানসই হবে।

যেহেতু এখন গরম তাই ন্যুড ও মভ কালারের মতো উজ্জ্বল রং বেছে নিন। তবে এবার পার্টি সালোয়ার কামিজেগুলোই বেশি দেখা যাচ্ছে। টিস্যু, নেট, অরগ্যাঞ্জা, শিফন ও জর্জেটের থ্রি-পিসের কদর বেড়েছে ঈদ ফ্যাশনে। কাপড় ও ডিজাইন ভেদে ১২০০-৭০০০ টাকার মধ্যে ভালো মানের থ্রি-পিস পাবেন।

পেপ্লাম টপ

বাহারি ডিজাইনের পেল্লাম টপ এখন সবার ফ্যাশনপ্রেমীদের কাছেই পছন্দের। এই ধরনের টপ আর কুর্তি এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। তবে যাদের উচ্চতা কম পেল্লাম টপ পরলে তাদেরকে আরও শর্ট দেখা যাবে।

ফিউশান লুক

ঈদে যদি একটু ভিন্নভাবে সাজতে চান; তাহলে ফিউশন লুক ক্রিয়েট করুন। ঘের দেওয়া কুর্তি বা ম্যাক্সি ড্রেসের সঙ্গে ডেনিম জ্যাকেট পরুন আর মাথায় সুন্দর স্কার্ফ বেঁধে নিন। গরমে জ্যাকেট পরতে না চাইলে, স্টাইলিশ কটি পরতে পারেন।

আবার ফিশ কাট স্কার্টের সঙ্গে ফুল স্লিভ টপও পরতে পারেন। ওয়েস্টার্ন আর প্রাচ্যের মেলবন্ধন থাকবে এই লুকে। দেখতে খুবই সুন্দর লাগবে।

ডেনিম

পুরুষের ঈদ ফ্যাশনে ডেনিম সব সময়ই আধুনিক। এবারও ডেনিমের শার্ট ও প্যান্টের দিকে ঝোঁক আছে তরুণদের। টি-শার্টের ওপর শার্ট পরাও এখন তরুণদের জনপ্রিয় একটি স্টাইল।

একরঙা শার্টের সঙ্গে প্রিন্টেড শার্টের চল বেড়েছে। শার্টের পকেটেও দেখা যাচ্ছে নতুন কাটছাঁট। ফরমাল পোশাকের ক্যাজুয়াল ব্যবহার বাড়ছে।

জেএমএস/জেআইএম