জাতীয়

বঙ্গবাজারে আগুন, কী প্রভাব পড়বে ঈদ বাজারে?

দেশের পোশাকের অন্যতম বড় পাইকারি মার্কেট বঙ্গবাজার এখন আগুনে পোড়া এক খণ্ড ধ্বংসস্তূপ। মঙ্গলবারের ভয়াবহ আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে দুই হাজারের বেশি দোকান। ক্ষতি হয়েছে কয়েকশো কোটি টাকার। ঈদের আগে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড দেশের ঈদ বাজারে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষত ভারতীয় পোশাক ও ছেলেদের পোশাকের দাম বেড়ে যাওয়ায় আশঙ্কা করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

তারা বলছেন, বঙ্গবাজার দেশের অন্যতম বড় পাইকারি মার্কেট। সারাদেশের ব্যবসায়ীরা বঙ্গবাজার থেকে পোশাক সংগ্রহ করেন। বিশেষ করে ভারতীয় পোশাকের বড় জোগানদাতা বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা। এছাড়া ছেলের পোশাক ও জিন্স প্যান্টের বড় জোগান আসে বঙ্গবাজার থেকে। ঈদের আগে এই মার্কেট আগুনে পুড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই পোশাকের দাম বেড়ে যাবে।

আরও পড়ুন: ফায়ার সার্ভিসে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা হবে: প্রধানমন্ত্রী

তারা আরও বলছেন, ঈদ উপলক্ষে খুচরা ব্যবসায়ীরা এরই মধ্যে দোকানে নতুন মাল উঠিয়েছেন। কিন্তু সব মাল এক সঙ্গে তোলা সম্ভব হয় না। বিক্রি পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে গোডাউন থেকে শোরুমে মাল নিয়ে আসা হয়। সাধারণত ঈদ উপলক্ষে দোকানে যে মালামাল তোলা হয় চাঁদরাতের মধ্যেই তার প্রায় সম্পূর্ণ অংশ বিক্রি হয়ে যায়।

Advertisement

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ঈদকেন্দ্রিক পোশাকের বিক্রি এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। তবে মূল বিক্রি এখনো শুরু হয়নি। আগামী সপ্তাহ থেকে অর্থাৎ পনেরো রোজার পর থেকে ঈদের মূল বেচাকেনা শুরু হতে পারে। ঈদের মূল বিক্রি শুরু হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই বোঝা যাবে বঙ্গবাজারের আগুন ঈদ বাজারে কতটা প্রভাব ফেলছে।

আরও পড়ুন: আগুন নির্বাপণে এখনো কাজ করছে ১২ ইউনিট: ফায়ার ডিজি

গতকাল মঙ্গলবার সকালে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটে বঙ্গবাজারে। সকাল ৬টা ১০ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। সকাল ৬টা ১২ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। মোট ৫০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। আগুন নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সাহায্যকারী দল যোগ দেয়। আগুন নেভাতে ব্যবহার করা হয়েছে হেলিকপ্টারও। নির্বাপণ কাজে ছিলেন র্যাব, পুলিশ ও ওয়াসার সদস্যরাও।

ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কী পরিমাণ ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং কত টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার সঠিক তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। তবে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আগুনে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার দোকান পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে আনুমানিক দুই হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন>> ক্ষতিগ্রস্তদের ঘুরে দাঁড়াতে অনুদান দেবেন প্রধানমন্ত্রী

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান জানান, আগুনে প্রায় পাঁচ হাজার দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগুনে সহায়-সম্বল হারিয়ে পথে বসা ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

বঙ্গবাজারের এই আগুনের ঘটনা ঈদ বাজারে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, জানতে চাইলে খিলগাঁও তালতলা সিটি সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. জসিম জাগো নিউজকে বলেন, বঙ্গবাজার দেশের অন্যতম বড় পাইকারি মার্কেট। দেশের সব জায়গার ব্যবসায়ীরা বঙ্গবাজার থেকে মালামাল কেনেন। এই মার্কেটে আগুন লাগা স্বাভাবিকভাবেই ঈদ বাজারে প্রভাব ফেলবে।

তিনি বলেন, ইসলামপুর ও কেরানীগঞ্জ থেকেও ব্যবসায়ীরা মালামাল সংগ্রহ করেন। কিন্তু ওসব বাংলা মাল। ভারতীয় পোশাকের জন্য বঙ্গবাজারে যেতে হয়। তাছাড়া জিন্স প্যান্ট ও ছেলেদের পোশাকও বঙ্গবাজার থেকে সংগ্রহ করেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। সুতরাং এবার এসব পোশাকের দাম বেড়ে যেতে পারে। এমনকি ঈদ বাজারে পোশাকের সংকটও দেখা দিতে পারে।

আরও পড়ুন: বঙ্গবাজারে আজও কোথাও কোথাও জ্বলছে আগুন

এই মার্কেটের আরেক ব্যবসায়ী হামিদুল ইসলাম বলেন, এবার পোশাকের দাম এমনিতেই বেশি। এরমধ্যে বঙ্গবাজারে আগুনের ঘটনা ঘটলো। এতে পোশাকের দাম আরও বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে ভারতীয় পোশাক ও ছেলেদের পোশাকের দাম বাড়ার সম্ভাবনা আছে। আর ভারতীয় পোশাকের দাম বাড়লে দেশি পোশাকের দামও বাড়বে।

তিনি বলেন, ঈদের আগে আর যে কয়দিন আছে তাতে নতুন করে এলসি খুলে মালামাল আমদানি করা সম্ভব নয়। সুতরাং এবার ঈদ বাজারে পোশাকের টানাটানিও পড়তে পারে। তবে বঙ্গবাজারের আগুন ঈদ বাজারে কতটা প্রভাব ফেলবে তা আগামী সপ্তাহ শেষে বোঝা যাবে। কারণ, ঈদের মূল বিক্রি আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু হবে।

আরও পড়ুন>> মধ্যরাতেও কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ৪০ ইউনিট

নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী মো. খায়রুল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আমরা বঙ্গবাজার থেকে কোনো মাল আনি না। তবে পোশাকের বাজারে বঙ্গবাজারের একটা প্রভাব আছে। ঈদের আগে বঙ্গবাজার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ঈদ বাজারে এর একটা প্রভাব তো পড়বেই। তবে কতটা প্রভাব পড়বে এখনই বলা যাচ্ছে না।

গাউছিয়া মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. আলমগীর বলেন, আমরা খুচরার তুলনায় পাইকারিই বেশি বিক্রি করি। ঢাকার বাইরের ক্রেতারা এরই মধ্যে ঈদ বাজারের পণ্য কিনে নিয়ে গেছেন। ঢাকার ব্যবসায়ীরা এখনো কিনছেন।

আরও পড়ুন>> দোকান মালিকদের বাধায় ঝুঁকিপূর্ণ বঙ্গবাজার ভাঙা যায়নি: তাপস

বঙ্গবাজারের আগুন ঈদ বাজারে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বঙ্গবাজারের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে বঙ্গবাজার পোশাকের বড় পাইকারি মার্কেট। সেই মার্কেটের সব মাল আগুনে পুড়ে গেছে। ঈদ বাজারে এর একটা প্রভাব তো অবশ্যই পড়বে। বঙ্গবাজার থেকে যেসব মাল বেশি জোগাদ দেওয়া হয়, সেগুলোর দাম বেড়ে যাবে।

রাজধানী সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী সুমন বলেন, জিন্স প্যান্ট ও নারীদের ভারতীয় থ্রি-পিস আমরা বঙ্গবাজার থেকে সংগ্রহ করি। ঈদকেন্দ্রিক নতুন মাল এরই মধ্যে নিয়ে এসেছি। মাল আরও লাগবে কি না তা বিক্রি পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। তবে এটুকু ধারণা করতে পারি যে, বিক্রি বেড়ে গেলে এবার পোশাকের দামও বাড়বে। কারণ বঙ্গবাজারের মাল সব নষ্ট হয়ে গেছে। এখন বাজারে এর প্রভাব কতটা পড়ে সেটাই দেখার বিষয়।

আরও পড়ুন>> জাগো নিউজের সংবাদ দেখিয়ে যা বললেন ফায়ারের ডিজি

এই মার্কেটের আরেক ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বঙ্গবাজারে আগুনের ঘটনা ঈদ বাজারে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। কারণ, বঙ্গবাজার হলো পাইকারি মার্কেট। ঢাকার বাইরের ব্যবসায়ীরা এরই মধ্যে ঈদকেন্দ্রিক পণ্য কিনে নিয়ে গেছেন। ঢাকার ব্যবসায়ীরাও ঈদের মাল দোকানে তুলেছেন। সুতরাং এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঈদ বাজারে খুব বেশি প্রভাব পড়ার কথা নয়। তবে মনস্তাত্ত্বিক একটা প্রভাব পড়তে পারে।

এমএএস/এমকেআর/এমএস