মহিমান্বিত মাস রমজান। এ মাসকে ঘিরে বিশ্বব্যাপী রয়েছে নানা অনুষ্ঠান আর রীতি-রেওয়াজ। সারাদিন রোজা রেখে সন্ধ্যায় বাহারি ইফতার, ইফতারের পর তারাবিহের নামাজ পড়া ইত্যাদি ছাড়াও আনন্দ-উৎসব করার মাধ্যমেও সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয় রমজানের খুশির আমেজ। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ পাকিস্তানে বাহারি ইফতার আয়োজনে পালিত হয় রোজা ও রমজান।
Advertisement
বাহারি আয়োজনে ইফতার
পাকিস্তানে রমজান শুরু হওয়ার পর থেকেই শুরু হয় ভিন্ন আবহ। দেশটির ইফতার আয়োজন উল্লেখ করার মতো একটি বিষয়। পুরুষরা সারাদিন রোজা রেখে ইফতারে সবাই একত্রিত হন মসজিদে মসজিদে। আর নারীরা ঘরোয়া পরিবেশে এক হয়ে বাহারি আয়োজনে নানা পদের খাবারের পসরা খুলে বসেন। পবিত্র এই রমজান মাসে ইফতার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চিকেন স্যুপ, আলুর পাকোড়া, ফলের কাস্টার্ড পাকিস্তানের প্রচলিত স্বাস্থ্যসম্মত ইফতারের উল্লেখযোগ্য উপকরণ। ছোট-বড় সবাই মিলে-মিশে বেশ আনন্দ-ফূর্তিতে যাপন করেন ইফতার-মুহূর্ত।
চাঁদ রাতে ব্যতিক্রমী উৎসব
Advertisement
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে রমজান ও ঈদের ঐতিহ্যের মধ্যে বেশ মিল দেখা যায়। ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ—এই তিন দেশেই রমজানের শেষে শাওয়ালের চাঁদ দেখা গেলেই শুরু হয়ে যায় চাঁদ রাতের উৎসব। কিন্তু পাকিস্তানের চাঁদ রাতের উৎসবে কিছুটা ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়।
চাঁদের জন্য অপেক্ষা
রমজানের ২৯ তারিখ সন্ধ্যায় মূলত চাঁদের জন্য অপেক্ষা শুরু হয়। মাগরিবের নামাজ শেষ হতে না হতেই জানা যায়, চাঁদ দেখা গেছে কিনা। যদি ২৯ রমজান শেষে চাঁদ দেখা না যায়, তাহলে সে বছর রমজান মাস ৩০ দিনের হয়ে থাকে। রোজাও ৩০টি হয়ে থাকে। হিজরি সন মতে চন্দ্র মাস ২৯ বা ৩০ দিনে হয়ে থাকে। তাই ২৯ রমজানের শেষে যদি শাওয়ালের চাঁদ দেখা না যায়, তাহলে ৩০ রমজানের পর শাওয়াল মাস শুরু হয়ে গেছে বলে ধরে নেওয়া হয়। এর সঙ্গে শুরু হয়ে যায় চাঁদ রাতের উৎসব।
হাতে মেহেদি রাঙানোর উৎসব
Advertisement
রমজানের শেষ ইফতার করেই পাকিস্তানের কিশোরী, তরুণী, যুবতী, নারী- সবাই ঈদের কেনাকাটা করতে বাজারে ছোটে। চুড়ি, মালা, ফিতা, সালোয়ার-কামিজ আর অবশ্যই মেহেদি কেনে। মেহেদিতে হাত রাঙানো পাকিস্তানি কিশোরী, যুবতী ও নারীদের প্রিয় কাজ। বাড়িতে ফিরে রয়েছে ঈদের বিশেষ রান্নার ব্যস্ততা। এসব কারণে পাকিস্তানি নারীরা বাজার করতে করতেই হাতে মেহেদির নকশা করে থাকে। এই একটি ব্যাপারই পাকিস্তানের চাঁদ রাতকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের চাঁদ রাত থেকে আলাদা করে রেখেছে।
পাকিস্তানে নারীদের ঈদ উৎসব
মেহেদিতে হাত রাঙানোর জন্য আছে পেশাদার নারী। তারা তাদের সাজ-সরঞ্জাম নিয়ে বাজার, মল, এমনকি রাস্তায়ও বসে থাকে। নারীরা তাদের প্রয়োজনীয় বা সাজসজ্জার সরঞ্জাম কেনাকাটার বিরতিতে হাত মেহেদি রঞ্জিত করতে পারেন সহজেই। আকাশে এক ফালি রুপালি চাঁদ এবং হাতে রাঙা নকশা নিয়ে পাকিস্তানের নারীদের ঈদ শুরু হয়।
বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে উৎসব
চাঁদরাতে দোকানগুলো সারারাত খোলা থাকে। ভোরের আলো ফুটলে দোকানিরা তাদের দোকান বন্ধ করেন। দীর্ঘদিন রোজা রাখা ও সংযম পালনের পর চাঁদরাত হলো, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে উৎসবে মেতে ওঠার উপযুক্ত স্থান ও সময়।
এমএমএস/জেআইএম