বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের পেছনে ষড়যন্ত্র দেখছেন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
Advertisement
তারা বলছেন, ফায়ার সার্ভিসের ঠিক হেড কোয়ার্টার্সের সামনে এত দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেল, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো হয়েছে।
বঙ্গবাজারের ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীদের কয়েক দফা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ধাওয়া দিতে দেখা গেছে। সকালে ফায়ার সার্ভিসের দপ্তরে ভাঙচুরও চালান ব্যবসায়ীরা।
মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের লোকজন প্রথমে গ্যাস ভর্তি বোতল (ফায়ার এক্সটিংগুইশার) নিয়ে আসে। তখন দ্রুত গাড়ি নিয়ে এসে পানি দিলে আগুন নিভে যেত। কিন্তু তাদের দুটি গাড়ি আসে যখন আগুন অল্প সময়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
Advertisement
‘এই জায়গাটি তো এমন নয় যে পানির গাড়ি ঢুকতে পারবে না। তারপরও কেন শুরুতেই ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এলো না। ফায়ারের হেড অফিসের সামনে এভাবে আগুনে সব ছাই হয়ে যাবে কেন?’ বলেন তিনি।
আরেক দোকানদার শরিফুল ইসলাম বলেন, আমার ভেতরের দিকে দুটি দোকান, কিছু বাঁচাতে পারিনি। এত বড় একটা মার্কেটে স্বাভাবিকভাবে আগুন ছড়াতে কত সময় লাগে? কিন্তু আমরা দেখলাম আগুন লাগার ৩০ মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে আগুন পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। কী ছিল এ আগুনে যে এত দ্রুত ছড়ালো?
তিনি বলেন, আমরা শুনেছি এখানে বহুতল মার্কেট হবে। তাই পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো হয়েছে। মার্কেট হবে ভালো কথা, কিন্তু হাজার হাজার কোটি টাকা কেন নষ্ট করা হলো? ১০ হাজার দোকানে কমপক্ষে অর্ধ লক্ষ মানুষের পেটে লাথি মারা হলো।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকেও পূর্বপাশের দোকানগুলোতে আগুন জ্বলছিল। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নিচ থেকে পানি ছিটাতে আসেন। এসময় ব্যবসায়ীরা উত্তেজিত হয়ে যান। তারা বলতে থাকেন, এখন পানি নিয়ে কী হবে? সব পুড়ে শেষ!
Advertisement
ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মী জবাব দিলে ব্যবসায়ীরা তার দিকে তেড়ে যান। পরে তাকে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এসময় ব্যবসায়ীদের চিৎকার করতে দেখা যায়। কেউ কেউ কান্না করতে থাকেন। পরে একজন পুলিশ কর্মকর্তা এসে ব্যবসায়ীদের সান্ত্বনা দেন এবং আগুন নেভাতে তাদের সহায়তা চান।
এর আগে সকালের দিকে বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা ইট-পাটকেল ছুড়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের কাচের জানালা ভেঙে ফেলেন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
আরেক ব্যবসায়ী ফরিদুর রহমান বলেন, এই মার্কেটে সব দোকানদারকে দোকানোর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে যেতে হয়। কেউ সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করলে তাকে জরিমানার মুখে পড়তে হয়। তাই বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগার সম্ভাবনা নেই। এ আগুন ষড়যন্ত্রমূলকভাবে লাগানো হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেছেন, পানি সংকট, উৎসুক জনতা ও বাতাসের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে দেরি হয়েছে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিটের চেষ্টায় ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এছাড়া সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও ওয়াসাসহ অনেক বাহিনী ও সংস্থা আমাদের সঙ্গে কাজ করেছে।
আরএমএম/এমএইচআর/জিকেএস