মতামত

রোজাদারদের জন্য জান্নাতে বিশেষ দরজা

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বিশেষ কৃপায় আজ পবিত্র মাহে রমজানের ১২তম দিন অতিবাহিত করছি, আলহামদুলিল্লাহ। পবিত্র এ মাসের রোজার মধ্যে এতই বরকত ও কল্যাণ রয়েছে যে, ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। এছাড়া রোজার পুরস্কার স্বয়ং আল্লাহতায়ালা দিবেন বলেও তিনি ঘোষণা করেছেন।

Advertisement

এছাড়া রোজার গুরুত্ব এতই ব্যাপক যে, রোজাদারদের সম্মানে জান্নাতে বিশেষ দরজা রাখা হয়েছে। হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, মহানবী (সা.) বলেন, ‘জান্নাতে রাইয়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন শুধু রোজাদাররাই প্রবেশ করবেন। তাদের প্রবেশের পর এ দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। তারা ছাড়া অন্য কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না।’ (বুখারি)

রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসের শেষদিকে একদিন সাহাবায়ে কেরামদের লক্ষ্য করে মাহে রমজানের ফজিলত সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘হে মানবসমাজ! তোমাদের ওপর একটি মহান মোবারক মাস ছায়া ফেলেছে। এই মাসে সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম একটি রজনী আছে। যে ব্যক্তি এই মাসে নেক আমল দ্বারা আল্লাহতায়ালার সান্নিধ্য লাভের কামনা করে, সে যেন অন্য সময়ে কোনো ফরজ আদায় করার মতো কাজ করল। আর এই মাসে যে ব্যক্তি কোনো ফরজ কাজ আদায় করল, সে যেন অন্য সময়ের ৭০টি ফরজ আদায়ের নেকি অর্জন করার সমতুল্য কাজ করল। এটি সংযমের মাস। ধৈর‌্যের মাস। আর ধৈর‌্যের ফল হচ্ছে জান্নাত।’ [বায়হাকি]

পবিত্র মাহে রমজানের রোজা কেবলমাত্র আধ্যাত্মিক কল্যাণই লাভ হয় না বরং এতে দৈহিক শক্তিরও বিকাশ ঘটে। তাইতো রোজা—পালন সম্পর্কে যেমন রয়েছে মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশ, অন্যদিকে রয়েছে অসংখ্য পার্থিব কল্যাণ। এছাড়াও রোজা যে মানব জাতির রোগমুক্তির কারণ, তা বহু হাদিসে প্রমাণিত আর আজ চিকিৎসা বিজ্ঞানও রোজার অপরিহার্যতা স্বীকার করে।

Advertisement

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, হুজুর (সা.) বলেছেন: ‘তোমাদের খোদা বলেছেন, প্রত্যেক নেকির প্রতিদান দশ গুণ থেকে সাত শত গুণ পর্যন্ত আর রোজার ইবাদত বিশেষ ভাবে আমার জন্য আর আমি স্বয়ং তার প্রতিদান দিব অথবা আমি স্বয়ং এর প্রতিদান হব’ (তিরমিজি, আবওয়াবুস সাওম)।

মহানবী (সা.) আরো বলেছেন, ‘রোজাদারের জন্য দু’টি আনন্দ নির্ধারিত, একটি আনন্দ সে তখনি লাভ করে যখন সে ইফতার করে আর দ্বিতীয় বার সে তখনি আনন্দিত হবে যখন সে রোজার প্রতিদানে তার প্রভূর সাক্ষাৎ লাভ করবে’ (বুখারি, কিতাবুস সওম)। রমজানের রোজার মাধ্যমে একদিকে আল্লাহতায়ালার ভালোবাসা লাভ করা যায় অপর দিকে দৈহিকভাবেও সুস্থ থাকা যায়। এছাড়া আমরা সাধারণত দেখতে পাই এ কল্যাণময় রমজান মাসে রোগব্যাধি অনেকটা কম প্রকাশ পায়।

পবিত্র এ মাহে রমজান গুনাহ মাফ হওয়া ও দোয়া কবুলের বিশেষ মাস। এই পবিত্র মাসে ফেরেশতারা মানুষের উদ্দেশে প্রতিদিন বলেন, ‘হে কল্যাণপ্রত্যাশী! আল্লাহতায়ালার কথা স্মরণ করো, তাঁর ইবাদত বন্দেগিতে রত হও এবং একনিষ্ঠ মনে তাওবা করো। তোমরা এই মাসে যা কামনা করবে ও প্রার্থনা করবে-আল্লাহতায়ালা তা কবুল করবেন।’ (তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)

এককথায় রোজা রাখার ফলে আমরা যেভাবে আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভ করতে পারি অপর দিকে দৈহিকভাবেও কিন্তু আমরা অন্যান্য মাসের তুলনায় সুস্থ থাকি। তাই রোজা দৈহিক এবং আধ্যাত্মিক উভয় দিক থেকে কল্যাণকর।

Advertisement

আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে ক্ষমা করে জান্নাতের এই বিশেষ দরজা দিয়ে প্রবেশ করার তৌফিক দান করুন, আমিন।

লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট।

এইচআর/জেআইএম