জাতীয়

স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণে ফের ব্যয় ও সময় বাড়ছে

ঢাকায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পে আবারও ব্যয় ও সময় বাড়ানো হচ্ছে। আগামীকাল মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হবে।

Advertisement

ওইদিন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় সভাপতিত্ব করবেন একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

‘ঢাকাস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। মূল অনুমোদিত প্রকল্পটি জানুয়ারি ২০১৮ থেকে ডিসেম্বর ২০১৯ মেয়াদে বাস্তবায়নের কথা ছিল। নতুন করে প্রকল্পের মেয়াদ জুন ২০২৪ নাগাদ বাড়ানো হবে। মূল অনুমোদিত প্রকল্পের ব্যয় ছিল ২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। নতুন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৩৯৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য: স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরা, জাতীয় দিবসে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কার্যক্রম সংগঠিত করা, যা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের চিরস্থায়ী স্মৃতিকে স্মরণ করায় এবং বাংলাদেশের জনগণের মাঝে স্বাধীনতা যুদ্ধের মর্মস্পর্শী অনুভূতিকে পুনরুজ্জীবিত করে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৫ মার্চের কালো রাতের বর্ণনা এবং ১৬ ডিসেম্বরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঐতিহাসিক আত্মসমর্পণকে সংরক্ষণ করা, স্বাধীনতা স্তম্ভের ভূগর্ভস্থ জাদুঘরে বিভিন্ন ধরনের প্রদর্শনী স্থাপন, যা এক নজরে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে প্রতিফলিত করে।

Advertisement

এছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যেসব মহৎপ্রাণ মানুষ জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের বিভিন্ন মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা এবং দেশের মানুষের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার পাশাপাশি মানসিক বিনোদনের সুযোগ তৈরি করা এ প্রকল্পের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য।

প্রধান কার্যক্রম: প্রকল্পের আওতায় তিনটি ভাস্কর্য নির্মাণ, স্মৃতিসৌধে ১৭ হাজার ৫৬৩ দশমিক ৫৫ বর্গমিটার কার পার্কিং, এক হাজার ২৭৭ দশমিক ৪০ বর্গমিটার আন্ডারপাস, ৯ হাজার ৪৮৬ দশমিক ৮৮ বর্গমিটার ওয়াটারবডি, ৫৪৫ বর্গমিটার মসজিদ, ৬ হাজার ৬৬২ বর্গমিটার ফ্লাওয়ার শপ এবং ২৬ হাজার ৫৩৩ বর্গমিটার অন্যান্য পূর্ত কাজ। এছাড়া দুটি মোটরযান কেনাসহ রাইডস স্থানান্তর ও ইন্সটল এবং বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি কেনা হবে।

প্রকল্প সংশোধনের কারণ: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ভাস্কর্য এবং ১৬ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের ভাস্কর্য কনক্রিটের ভাস্কর্যের পরিবর্তে ব্রোঞ্জের ভাস্কর্যে প্রতিস্থাপন। ৭ মার্চ ভাষণের হলোগ্রাফিক থ্রি ডি, কার পার্কিং এ দুটি প্যাসেঞ্জার লিফট, ফায়ার হাইড্রেন্ট, ওয়াকওয়ে লাইট, আন্ডারপাসের ওপর গ্লাস ক্যানোপি, গ্লাস বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ, আনসার ক্যাম্প, থানা স্থাপন/নির্মাণ প্রভৃতি নতুন অঙ্গ সংযোজন করা হবে। শিশুপার্ক এলাকায় প্রবেশের জন্য একটির পরিবর্তে দুটি টিকিট কাউন্টার, মসজিদ, সাব-স্টেশন ও জেনারেটর রুম, আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার রিজার্ভার, ফুড কিয়স্ক, ওয়াকওয়ে ইত্যাদি অঙ্গে কাজের পরিমাণ বাড়ানো হবে।

এছাড়া সংশোধিত প্রকল্পের আওতায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো, ওয়াটার বডিতে মিউজিক্যাল ওয়াটার ড্যান্সিং ফোয়ারা, ওয়াটার ফল ফোয়ারা, বাবলার ক্যাসকেট ফোয়ারা, ভূগর্ভস্থ পার্কিংয়ের অ্যান্ট্রি ও এক্সিটে আমব্রেলা ফোয়ারা ইত্যাদি সংযোজন করা হবে। ভূগর্ভস্থ মিউজিয়ামের অভ্যন্তরস্থ অডিটোরিয়াম, টয়লেট জোন ইত্যাদি সংস্কার ও আধুনিকায়ন, গাড়ি চালকদের ব্যবহারের সুবিধার্থে ভূগর্ভস্থ পার্কিং অভ্যন্তরে তিনটি টয়লেট জোন, ইলেক্ট্রোমেকানিক্যাল রুম, ই/এম কন্ট্রোল রুম, ফায়ার ওয়াটার রিজার্ভার ও অতিরিক্ত একটি আন্ডারপাস সংযোজন আবশ্যক হওয়ায় পার্কিং এবং আন্ডারপাস এরিয়া বাড়ানো হবে।

Advertisement

পরিকল্পনা কমিশনের মতামত: প্রকল্পটির আওতায় ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৫ মার্চের কালো রাত এবং ১৬ ডিসেম্বরে পাক হানাদার বাহিনীর ঐতিহাসিক আত্মসমর্পণকে সংরক্ষণের নিমিত্তে ভাস্কর্য নির্মাণ করা হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতাযুদ্ধের চিরস্থায়ী স্মৃতিকে স্মরণ এবং ইতিহাসের মর্মস্পর্শী অনুভূতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারবেন।

এমওএস/এমকেআর/এমএস