দেশজুড়ে

কৃষকের মুখে হাসি ফুটিয়েছে গম

মেহেরপুরে এ বছর গমের ব্লাস্ট রোগ না থাকায় ভালো ফলন পেয়েছেন চাষিরা। পাশাপাশি বাজারদরেও খুশি তারা। সব মিলিয়ে হাসি ফুটেছে জেলার গমচাষিদের মুখে। গমচাষ বেশি হওয়ায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

Advertisement

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গমের ব্লাস্ট রোগের কারণে মেহেরপুরের চাষিদের গমচাষে আগ্রহ কমেছিল। দিন দিন কমছিল গমচাষ। বিগত বছরগুলোতে মেহেরপুর জেলায় গমচাষ হতো ২০-২২ হাজার হেক্টর পর্যন্ত। কিন্তু গত কয়েক বছর সেটা নেমে আসে মাত্র ৩-৪ হাজার হেক্টরে। তবে গত বছর ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব কমে যাওয়ায় গমের আবাদ হয়েছিল ১১ হাজার ৩৬৫ হেক্টরে। এ বছর সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩ হাজার হেক্টরে।

ব্লাস্ট প্রতিরোধক বারি-৩৩ ও ডাব্লিউএমআরআই-৩ জাতের গম চাষ করায় এবার ব্লাস্ট রোগ হয়নি। এরইমধ্যে চাষিরা গম কাটামাড়াই শুরু করেছেন। এক বিঘা জমিতে এবার গমচাষে খরচ হয়েছে ১০-১২ হাজার টাকা। সেখানে গম বিক্রি করে ২২-২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘরে তুলছেন তারা।

সদর উপজেলার যাদবপুর গ্রামের গমচাষি আনারুল ইসলাম জানান, আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার বিঘা প্রতি ১৬-১৮ মণ পর্যন্ত গমের ফলন হচ্ছে। বাজারে প্রতিমণ গম ১৮০০-২০০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এই দাম অব্যাহত থাকলে চাষিদের ভালো লাভ হবে।

Advertisement

সদর উপজেলার আরেক কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, এ বছর কৃষি বিভাগের পরামর্শে ব্লাস্ট প্রতিরোধক গমবীজ বারি-৩৩ ও ডাব্লিউএমআরআই-৩ জাতের গম চাষ করে ফলন ভালো হয়েছে। এ বছর ২ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। আগামী বছর এই অবস্থা বিরাজ করলে ৮ বিঘা জমিতে গমের আবাদ করবো।

গাংনী উপজেলার বাউট গ্রামের কৃষক মাসুদুর রহমান জানান, এবছর আবহাওয়া ভালো থাকায় মাঠে গম খুব ভালো হয়েছে। গতকাল গম কেটে মাড়াই শেষ করেছি। সব মিলিয়ে প্রায় ১৬ মণ গম পেয়েছি। অন্তত খাবারের দুশ্চিন্তা থেকেতো রক্ষা পেলাম। আমরা কৃষক, আমদের মাঠে-ঘাটেই খাওয়া লাগে। সে বিবেচনায় আমাদের কাছে রুটিই প্রধান খাবার হয়ে গেছে। তাই ঘরে গম থাকলে খাবারের চিন্তা থাকে না।

একই গ্রামের আরেক কৃষক রুহুল আমীন জানান, এক বিঘা জমিতে গমের আবাদ ছিল। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমাদের কীটনাশক কম লেগেছে। তবে বীজের দাম এ বছর খুব বেশি ছিল। সে হিসাবে বিঘা প্রতি জমিতে সাড়ে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

গম ব্যবসায়ী আলম হোসেন বলেন, বাজারে এখন নতুন গম আসতে শুরু করেছে। দাম বেশ ভালো। প্রতি মণ গম কৃষকদের কাছ থেকে ১৭শ’ টাকা দরে কিনছি। মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, মেহেরপুরে ২০১৬ সাল থেকে ব্লাস্ট শুরু হওয়ার পর গমচাষ প্রায় বন্ধ হয়েছিল। চলতি মৌসুমে চাষিদের ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাত বারি-৩৩, ডব্লিউএমআরআই-১, ২ ও ৩ চাষ করার জন্য পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ। কৃষি বিভাগের পরামর্শ মোতাবেক চাষিরা ব্লাস্ট প্রতিরোধী গমের চাষ করে ভালো ফলন পাচ্ছেন। সেইসঙ্গে বতর্মান বাজারদর অনেক ভালো।

Advertisement

এফএ/এমএস