মুজিববর্ষ উপলক্ষে দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে নির্মিত হচ্ছে এসব মডেল মসজিদ। তবে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় মডেল মসজিদ নির্মাণে দেখা দিয়েছে ব্যাপক অনিয়ম। কাজের শুরুতেই বাঁকা করে বসানো হয়েছে পিলার। স্থানীয়রা এমন কাজ দেখে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মডেল মসজিদটি নির্মাণের জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় ১১ কোটি ৬৯ লাখ ৩৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। যেটি বাস্তবায়ন করছে সিরাজগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগ। তবে ভবনটি নির্মাণের দায়িত্ব পায় ঢাকার মোহাম্মদপুরের ফার্স্ট এসএস কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেড নামক একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
২০১৯ সালের ১৩ জুন কাজটি শুরু করার অনুমতি পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কিছুটা জটিলতা কাটিয়ে মসজিদ নির্মাণের জায়গা নির্ধারিত হয় উপজেলার পৌর বাস টার্মিনালের কাছে। তবে কাজের মেয়াদ কাগজ কলমে শেষ হলেও এখন পর্যন্ত কেবল মসজিদ ভবনের মূল কলাম ঢালাই করা হচ্ছে। আর এতেই স্থানীয়দের চোখে ধরা পড়েছে নানান অনিয়ম। মসজিদ ভবনের মূল কলামগুলো আঁকা-বাঁকাভাবে তৈরি করায় জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয়রা।
পরে তাদের অভিযোগের আলোকে ২৩ মার্চ জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে নির্মাণাধীন মসজিদ ভবনটি পরিদর্শন করেন। এ সময় তার দৃষ্টিতেও কলাম তৈরির ত্রুটি ধরা পড়ায় তিনি স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
Advertisement
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বিষয়টি ধামাচাপা দিতে কলামগুলো বালু ফেলে ভরাট করেছিল। কিন্তু সম্প্রতি বৃষ্টি হওয়ার পর ভরাট হয়ে যাওয়া বালুর অনেক অংশ ধুয়ে যায়। আর এতেই ত্রুটিপূর্ণ আঁকা-বাঁকা কলামগুলো বেরিয়ে আসে। তবে নির্মাণকাজ সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা গণপূর্ত বিভাগের দেখভালের দায়িত্ব থাকলেও আঁকা-বাঁকা কলাম নির্মাণের বিষয়ে তারা অবগত নয় বলে দাবি করে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, মসজিদটির জায়গা নির্ধারণে বেশ সময় লেগেছে৷ তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মূল কলাম নির্মাণে যে ত্রুটি করেছে সেটি আমাদের নজরে এসেছে। এরইমধ্যে সেগুলো ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করতে বলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান জানান, স্থানীয়দের অভিযোগের আলোকে নির্মাণাধীন মসজিদ ভবনটি পরিদর্শন করে ত্রুটি পেয়েছি। সে বিষয়ে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তাদের প্রতিবেদন হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
এদিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট এসএস কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবু সাদেক অভিযোগ অস্বীকার করে জাগো নিউজকে বলেন, কাজটি ২০১৯ সালে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আমরা জায়গা পেয়েছি ২০২২ সালে। আর যে জায়গাটি মসজিদ নির্মাণের জন্য দেওয়া হয়েছে সেটা অনেক নিচু। ফলে মূল কলাম ঢালাই দেওয়ার পর বালু দিয়ে ভরাট করার কারণে দু’একটা পিলার বাঁকা হয়ে গেছে।
Advertisement
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাইট কন্ট্রাক্টর শাহীন ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ঢালাই দেওয়ার পর পিলারের চারপাশে বালু ভরাট করার কারণে মূলত এমনটা হয়েছে। তবে বাঁকা পিলারগুলো ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করা হবে।
এফএ/জেআইএম