নওগাঁয় এবার আমের মুকুলে ছেয়ে গেছে। মুকুল থেকে এখন গুটি বেরোচ্ছে। কিন্তু এখনো বাগান কিনতে আসেননি ব্যাপারীরা। দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বাগান চাষিরা। তাই গুটি রক্ষায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। প্রতিনিয়ত কীটনাশক ও পানি স্প্রে করছেন তারা।
Advertisement
চাষিরা বলছেন, সার, কীটনাশক, জ্বালানি খরচ ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বাড়ছে। দাম পেলে লাভ হবে। তবে এখনো কেউ বাগান কিনতে আসেনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আম বাগান আছে। যা গতবছরের তুলনায় ৫২৫ হেক্টর বেশি। প্রতি হেক্টর জমিতে ১২ দশমিক ৫০ টন হিসেবে ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৫৩৫ টন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে।
উপজেলা ভিত্তিক সদর উপজেলা ৫১০ হেক্টর, রানীনগরে ১৩০ হেক্টর, আত্রাইয়ে ১২০ হেক্টর, বদলগাছীতে ৫৩০ হেক্টর, মহাদেবপুরে ৬৩০ হেক্টর, পত্মীতলায় ৫ হাজার ৮১৫ হেক্টর, ধামইরহাটে ৬৭৫ হেক্টর, মান্দায় ৪০০ হেক্টর, পোরশায় ১০ হাজার ৫৫০ হেক্টর, সাপাহারে ৯ হাজার ২৫৫ হেক্টর এবং নিয়ামতপুর উপজেলায় ১ হাজার ৩৮৫ দশমিক ৫ হেক্টর।
Advertisement
সরেজমিনে দেখা যায়, মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত চারদিক। সবুজ পাতার ফাঁকে মুকুল ও আমের গুটি। চাষিরা জানান, দেড়মাসে প্রতিবিঘায় খরচ পড়েছে প্রায় ৬-৭ হাজার টাকা। মুকুল আসা থেকে আম বাজারজাত করা পর্যন্ত প্রতি বিঘাতে খরচ হবে প্রায় ৩৫-৪০ হাজার টাকা। দাম ভালো পেলে খরচ বাদ দিয়েও লাভ হবে।
আমের কুশি-গুটি ও আটির গুন দেখে কয়েক ধাপে বিক্রি হয় আম বাগান। গাছ মুকুল আর মাটির গুন বিবেচনায় প্রতি হেক্টর বাগান বিক্রি হয় ৫-৮ লাখ টাকায়। তবে এখনো ব্যাপারীরা বাগান না কেনায় দুশ্চিন্তায় মালিকরা। তাই প্রাকৃতিক বৈরিতায় যত্নে নেমেছেন নিজেরাই।
সাপাহার খেড়ুন্দা গ্রামের আম চাষি রেজাউল করিম বলেন, ‘ছয় বিঘা জমিতে আম্রপালি ও বারি-৪ জাতের বাগান করেছি। এ বছর বৃষ্টি না হওয়ায় আম পরিচর্যায় খরচ বেড়েছে। সাধারণত আমের মুকুল আসা থেকে শুরু করে আম বাজারজাত পর্যন্ত বিঘা প্রতি প্রায় ৩৫-৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। এ বছর শ্রমিকের মজুরি, কীটনাশকসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বাড়ায় খরচও বেড়েছে। আমের দাম ভালো থাকলে ঘুরে দাঁড়ানো যাবে।
আমচাষি বাবলু হোসেন বলেন, পাঁচ বছর আগে ছয় বিঘা জমিতে বাগান করেছি। গত বছর গাছে মুকুল থাকা অবস্থায় ৫ লাখ টাকায় বাগান বিক্রি করেছিলাম। কিন্তু এ বছর মুকুল থেকে গুটি বের হলেও ব্যবসায়ীর দেখা মিলছে না। এ কারণে নিজেই বাগান পরিচর্যা করছি। একবার বৃষ্টি হওয়ায় মাটিতে কিছুটা রস এসেছে। বাগান নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়েছি।
Advertisement
রূপপুর গ্রামের উদ্যোক্তা শাহিন আলম ও আব্দুল বারী বলেন, বরেন্দ্র এসব জমিতে বছরে একটিমাত্র ফসল আমন ধান হতো। প্রতিবিঘায় ১০-১৫ মণ ফলন হতো। যেখান ৫-৬ হাজার টাকার আয় হতো। এছাড়া কিছু খরচও হতো। বর্তমানে ধান ছেড়ে প্রতিবিঘা জমি ২০-২৫ হাজার টাকায় ইজারা নিয়ে আরও ৩০-৪০ হাজার টাকায় চারাসহ আনুষঙ্গিক খরচ করে বাগান গড়ে তোলা হচ্ছে। এতে শিক্ষিত যুবকরা কৃষিতে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এক বিঘা জমি থেকে আম বিক্রি হয় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা।
সাপাহার বরেন্দ্র এগ্রো পার্কের স্বত্বাধিকারী সোহেল রানা বলেন, এ জেলা এরইমধ্যে আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু আম সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা এখনো গড়ে ওঠেনি। আমের হিমাগার না থাকায় প্রতি বছর প্রায় ৪০০ কোটি টাকার আম নষ্ট হয়। হিমাগার গড়ে উঠলে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে আরও এগিয়ে যাবে নওগাঁ। গতবছর আম্রপালি ও বেনানা ম্যাংগো জাতের আম ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন ও কাতারে ২৫ টন রপ্তানি করে ভালো লাভ হয়েছে। এবছর আশা করছি আরও বেশি রপ্তানি করতে পারবো।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, এ বছর জেলায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আমের বাগান গড়ে উঠেছে। যা থেকে প্রায় ৩ লাখ ৭৮ হাজার টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা পরিচর্চায় গাছে ছত্রাক ও কীটনাশক স্প্রের জন্য চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।
আব্বাস আলী/এসজে/জেআইএম