গত ২১ মার্চ শেষ হওয়া বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডি টুর্নামেন্টের তৃতীয় আসরে অংশ নিয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার দল আর্জেন্টিনা। খেলেছে ইংল্যান্ড-পোল্যান্ডের মতো ইউরোপের দেশও। আফ্রিকার দেশ কেনিয়া তো খেলছে প্রতি আসরেই।
Advertisement
বাংলাদেশের জাতীয় খেলা এখন ছড়িয়ে যাচ্ছে বিশ্বময়। আগামীতে কাবাডি খেলা বিস্তৃত হবে আরো দেশে। বাংলাদেশের জাতীয় খেলার এই বিশ্বায়ন লাল-সবুজ দেশের জন্য গর্বেরই।
নিজেদের জাতীয় খেলায় আন্তর্জাতিকমঞ্চে বাংলাদেশ একটু পিছিয়ে পড়লেও জাঁকজমকতার দিক দিয়ে ছাড়িয়ে যাচ্ছে সব দেশকে। এই জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে কাবাডি বিশ্বে বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চান এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশনের সহসভাপতি, বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ পুলিশের উপমহাপারিদর্শক হাবিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডি, ঘরোয়া প্রতিযোগিতা এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনাসহ কাবাডির উন্নয়নে নানা বিষয় নিয়ে জাগো নিউজকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন হাবিবুর রহমান।
Advertisement
জাগো নিউজ: বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডি টুর্নামেন্টের আরো একটি আসর সফলভাবে শেষ করলেন। আয়োজনের এই সফলতা নিশ্চয়ই আগামীতে এ টুর্নামেন্ট আরো বড় ও জাঁকজমকপূর্ণ করতে আপনাদের আগ্রহী করবে?
হাবিবুর রহমান: হ্যাঁ। আমরা বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডি টুর্নামেন্টের তিনটি আসর করলাম। আপনারা জানেন, এই টুর্নামেন্ট আমাদের নিয়মিত আয়োজন। প্রথম আসরে অংশ নিয়েছিল ৬ দেশ, দ্বিতীয় আসরে ৮ দেশ এবং এবার ১২ দেশ। আমরা পরের আসর করবো ১৬ দেশ নিয়ে। সেটা আরো জাঁকজমকপূর্ণ হবে।
জাগো নিউজ: বড় ও জাঁকজমকপূর্ণ টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে প্রয়োজন আন্তর্জাতিক মানের ভেন্যু, যা বাংলাদেশের নেই। তাহলে ১৬ দেশের কাবাডি কিভাবে করবেন? ১২ দল নিয়ে আয়োজন করতেই তো হিমশিম খেয়েছেন ভেন্যু নিয়ে।
হাবিবুর রহমান: আমাদের কাবাডি ভেন্যুটা আন্তর্জাতিক মানের নয়। যে কারণে, আমরা বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডি আয়োজন করি শহীদ নূর হোসেন ভলিবল স্টেডিয়ামে। আমরা দলগুলোর অনুশীলনের জন্যও সেভাবে ভালো ব্যবস্থা করতে পারিনি। একেক দলকে ১ ঘন্টা সময় দিয়েছিলাম। এক দল অনুশীলন করেছে, আরেকদল লাইনে দাঁড়িয়েছিল। দেখতেও খারাপ লেগেছে। যে কারণে আমরা আন্তর্জাতিক মানের ভেন্যু তৈরির জন্য কেরানীগঞ্জে একটা জায়গা দেখে এসেছি। বিষয়টি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল মহোদয়ও অবগত আছেন।
Advertisement
জাগো নিউজ: নিশ্চয়ই অত্যাধুনিক ভেন্যু হবে কেরানীগঞ্জে?
হাবিবুর রহমান: হ্যাঁ। ওখানে আমরা ৫ থেকে ৭ বিঘা জমি পাওয়ার চেষ্টা করছি। মিরপুর শহীদ সোহরায়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামের মতো একটি ভেন্যু তৈরির পরিকল্পনা আছে। টুর্নামেন্ট আয়োজনের পাশাপাশি যেখানে আমরা বিভিন্ন দলের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থাও করতে পারবো। সেখানে ভেন্যু হলে জাতীয়, যুব ও নারী দলকে সবসময় অনুশীলনের মধ্যে রাখতে পারবো।
জাগো নিউজ: কিন্তু এটা তো সময় সাপেক্ষ বিষয়। জায়গা পাওয়া, ভেন্যু তৈরি করা- এসব কাজতো অনেক সময়ের প্রয়োজন। তাহলে আগামী বঙ্গবন্ধু কাপও কি ভলিবল স্টেডিয়ামে হবে?
হাবিবুর রহমান: কেরানীগঞ্জে জায়গা পেলে সেখানে একাডেমির মতো ভেন্যু তৈরির জন্য তো অবশ্যই সময় লাগবে। তবে তার আগে আমরা বিকল্প হিসেবে কাবাডি স্টেডিয়াম ও ভলিবল স্টেডিয়াম নিয়ে নতুন করে ভাবছি। আমরা দুই স্টেডিয়ামকে এক করে আন্তর্জাতিক মানের করে একটি ভেন্যু গড়ে তুলতে চাই।
জাগো নিউজ: ভলিবল ফেডারেশন কি আপনাদের এ পরিকল্পনায় সম্মতি দেবে?
হাবিবুর রহমান: দিয়েছে। ভলিবল ফেডারেশনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। তারা রাজি। দুটি ভেন্যু এক করে একটি আন্তর্জাতিক মানের ভেন্যু আমরা তৈরি করতে চাই শহীদ নূর হোসেন স্টেডিয়ামকে। তাতে কাবাডির যেমন সুবিধা হবে, তেমন সুবিধা হবে ভলিবলেও। দুই ভেন্যু এক করে মাঝে একেটি পর্দা ব্যবহার করে একপাশে গেম, অন্যপাশে অনুশীলনের ব্যবস্থা করা যাবে। এই পথে এগুলে আমরা ১৬ দেশ নিয়ে বঙ্গবন্ধু কাপ এখানেই আয়োজন করতে পারবো।
জাগো নিউজ: ছেলেদের নিয়ে তো তিনটি বঙ্গবন্ধু কাপ হয়ে গেলো। মেয়েদের নিয়ে বঙ্গমাতা কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডি আয়োজনের কোনো চিন্তাভাবনা আছে কি না?
হাবিবুর রহমান: আছে। তবে সমস্যা হলো সিডিউল পাওয়া যায় না। ফ্রি একটা সময় পেলে টুর্নামেন্ট আয়োজন করলে সেটা মানুষে দেখে। না হলে কে দেখবে? আর ছোট পরিসরে হলেও মেয়েদের নিয়েতো আমরা এ বছর কর্পোরেট লিগ আয়োজন করলাম। মেয়েদের থাকা-খাওয়ার পেছনেই খরচ হয়েছে অর্ধ কোটি টাকার বেশি। দেশে নারীদের নিয়ে প্রথম কর্পোরেট লিগ তো আমরাই করলাম। সেদিক দিয়ে তো কাবাডি সবার চেয়ে এগিয়ে আছে।
জাগো নিউজ: ছেলেদের ফ্র্যাঞ্চাইজি কাবাডি হবে হবে শুনে আসছি। কবে নাগাদ আলোর মুখ দেখতে পারে ফ্রাঞ্চাইজি কাবাডি?
হাবিবুর রহমান: মেয়েদের কর্পোরেট কাবাডি শুরু হয়েছে, নিয়মিত চলবে। আগামী বছর মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদের ফ্র্যাঞ্চাইজি কাবাডি আয়োজনেরও আমাদের পরিকল্পনা আছে। সেটা হবে ভারতের প্রো-কাবাডির আদলে। তবে, এখানে সিডিউল পাওয়ার একটা বিষয় থাকে। সুবিধাজনক সময়ে করতে না পারলে বিদেশি খেলোয়াড় পেতেও সমস্যা হবে।
জাগো নিউজ: বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডিতে দিন দিন দেশ বাড়ছে। এই টুর্নামেন্ট আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ সাড়াও ফেলেছে। বাংলাদেশও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সব আসরে। এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমেতো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের একটা অবস্থান তৈরি হবে তাই না?
হাবিবুর রহমান: আমাদের জাতীয় খেলা কাবাডি বিশ্বের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে পড়ছে। আমরা আর্জেন্টিনা, পোল্যান্ডের মতো দেশকে কাবাডিতে নামিয়েছি। আগামীতে আরো দেশ খেলবে। মিশরসহ আরো অনেক দেশ কাবাডিতে আসছে। আমরা কাবাডিকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই যাতে অন্য দেশগুলো এসে দেখে বাংলাদেশটাই কাবাডিময়। দেখবেন এক সময় ঢাকা হবে বিশ্ব কাবাডির রাজধানী। আমরা সেই পরিকল্পনা নিয়েই কাজ করছি।
জাগো নিউজ: কিন্তু আমরাতো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আগের মতো সাফল্য পাই না। বিশেষ করে এশিয়ান গেমসে। এখনতো এসএ গেমসও আমাদের জন্য কঠিন হয়ে গেছে।
হাবিবুর রহমান: দেখেন এশিয়ার দেশগুলোই কিন্তু বিশ্ব কাবাডিতে শাসন করছে। দক্ষিণ এশিয়াতে আছে ভারত-পাকিস্তানের মতো দেশ। যে কারণে এখানে প্রতিদ্বন্দ্বীতা বেশি। প্রতিটি দেশই আস্তে আস্তে উন্নতি করছে। আমরা দলকে শক্তিশালী করে কিভাবে সাফল্য আনা যায় তা নিয়েই কাজ করছি।
জাগো নিউজ: তারপরও কাবাডি নিয়ে কিন্তু মানুষের আগ্রহ একটুও কমেনি। তিনটি বঙ্গবন্ধু কাপে দর্শক উপস্থিতি ছিল আশাব্যাঞ্জক। বিষয়টি তো আপনাদের অনুপ্রাণিত করছে নিশ্চয়ই?
হাবিবুর রহমান: কাবাডি আমাদের জাতীয় খেলা। হতে পারে আমাদের অবস্থা ততটা ভালো না। তারপরও কিন্তু খেলাটি দেশের জাতীয়। এই খেলার উন্নয়নে সবাইকেই সহযোগিতা করতে হবে। দর্শকও কিন্তু এই সহযোগিতার একটা অংশ। আগামীতে আরো জাঁকজমক হবে বঙ্গবন্ধু কাপ।
জাগো নিউজ: দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কাবাডি খেলোয়াড়দের পাইপলাইন শক্তিশালী করতে যুবদের প্রতিযোগিতায় গুরুত্ব দিয়েছেন। কেমন ফল পাচ্ছেন?
হাবিবুর রহমান: হ্যাঁ। আমরা ইউনিয়ন থেকে শুরু করে আইজিপি কাপ আয়োজন করেছি। সেখান থেকে প্রতিভা বাছাই করে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থাও করেছি। যে কারণে জাতীয় দলের কোয়ালিটি খেলোয়াড় বেরিয়ে আসছে। এভাবেই আমরা এসএ গেমস ও এশিয়ান গেমসে আবার ভালো ফলাফল পেতে শুরু করবো।
জাগো নিউজ : ধন্যবাদ।হাবিবুর রহমান : আপনাকেও ধন্যবাদ।
আরআই/আইএইচএস/