রোজা পালনের অন্যতম অনুসঙ্গ ইফতার। দিন শেষে কি দিয়ে ইফতারি হবে? ইফতারের সময়ই বা কখন? এ সম্পর্কে ইসলামের দিকনির্দেশনা কী?
Advertisement
কিছু আধা-পাকা অথবা পূর্ণ পাকা (শুকনা) খেজুর দিয়ে এবং তা না পাওয়া গেলে পানি দিয়ে ইফতার করা সুন্নত। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজের আগে কিছু আধা-পাকা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। তা না পেলে পূর্ণ পাকা (শুকনা) খেজুর দিয়ে এবং তাও না পেলে কয়েক ঢোক পানি খেয়ে নিতেন।’ (মুসনাদে আহমাদ ৩/১৬৪, আবু দাউদ ২৩৫৬, তিরমিজি ৬৯৬, ইবনে মাজাহ ২০৬৫, দারাকুত্বনি ২৪০, মুস্তাদরাকে হাকেম ১/৪৩২, বায়হাকি ৪/২৩৯)
তিনি আরও বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি খেজুর পায়, সে যেন তা দিয়ে ইফতার করে। যে ব্যক্তি তা না পায়, সে যেন পানি দিয়ে ইফতার করে। কারণ, তাহলো পবিত্র।’ (জামেউস সাগির ৬৫৮৩)
Advertisement
আল্লামা ইবনুল কাইয়েম রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেজুর দ্বারা ইফতার করতে এবং তা না পাওয়া গেলে পানি দ্বারা ইফতার করতে উৎসাহিত করতেন। আর এ হল উম্মতের প্রতি তাঁর পরিপূর্ণ দয়া ও হিতাকাঙ্খার নিদর্শন। পেট খালি থাকা অবস্থায় প্রকৃতি (পাকস্থলী)কে মিষ্টি জিনিস দিলে তা অধিকরূপে গ্রহণ করে এবং তা দ্বারা বিভিন্ন শক্তিও উপকৃত হয়; বিশেষ করে দৃষ্টিশক্তি এর দ্বারা বৃদ্ধি পায়। মদিনার মিষ্টি হল খেজুর। খেজুর মদিনাবাসীর মিষ্টান্ন। খেজুরের উপরই তাদের লালন-পালন। খেজুর তাদের প্রধান খাদ্য এবং তা-ই তাদের সহযোগী খাদ্য। আর আধা-পাকা খেজুর তাদের ফলস্বরূপ।
পক্ষান্তরে পানিও (এ সময়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ জিনিস।) রোজার ফলে কলিজায় এক প্রকার শুষ্কতা আসে। সুতরাং তা প্রথমে পানি দিয়ে আর্দ্র করলে তারপর খাদ্য দ্বারা উপকার পরিপূর্ণ হয়। এ জন্য পিপাসার্ত ও ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য উত্তম হল, প্রথমে একটু পানি পান করে তারপরে খেতে শুরু করা। এ ছাড়া খেজুর ও পানিতে এমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে, হার্টের উপকারিতায় যার প্রভাবের কথা কেবল ডাক্তারগণই জানেন।’ (যাদুল মাআদ ২/৫০-৫১)
বলা বাহুল্য, কারো কাছে পানি ও মধু থাকলে, পানিকে প্রাধান্য দিয়ে পানি দ্বারা ইফতার করবে। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘…যে ব্যক্তি তা না পায়, সে যেন পানি দিয়ে ইফতার করে। কারণ তাহলো পবিত্র।’ অবশ্য পানি পান করার পর মধু খাওয়া দোষাণীয় নয়। (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৪৪২)
ইফতারের সময়
Advertisement
সূর্যের পুরো বৃত্ত অদৃশ্য হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতারের সময় হয়। আর সে সময় হল মাগরিবের নামাজের আগে। ইফতার করে নামাজ পড়ার পর প্রয়োজনীয় আহার ভক্ষণ করবে রোজাদার। অবশ্য যদি আহার প্রস্ত্তত থাকে, তাহলে প্রথমে আহার খেয়েই নামাজ পড়বে। যেহেতু হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রাতের খাবার উপস্থিত হলে মাগরিবের নামাজ পড়ার আগে তোমরা তা খেয়ে নাও। আর সে খাবার খেতে তাড়াহুড়া করো না।’(বুখারি ৬৭২, মুসলিম ৫৫৭)
কিন্তু সময় হওয়ার আগে ইফতার করা হতে সাবধান! কারণ, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদল লোককে (স্বপ্নে) দেখলেন যে, তারা তাদের পায়ের গোড়ালির উপর মোটা শিরায় (বাঁধা অবস্থায়) লটকানো আছে, তাদের কশগুলো কেটে ও ছিঁড়ে আছে এবং কশ বেয়ে রক্তও ঝরছে। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি বললাম, ‘ওরা কারা?’ তাঁরা বললেন, ‘ওরা হল তারা; যারা সময় হওয়ার আগে-আগেই ইফতার করে নিত...।’ (ইবনে খুযাইমাহ, ইবনে হিববান, বায়হাকি ৪/২১৬, মুস্তাদরাকে হাকেম ১/৪৩০, তারগিব ৯৯১)
এমএমএস/জেআইএম